শনিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » জাতীয় | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » শৈত্যপ্রবাহে কাপছে দেশ,পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ৬.১ডিগ্রিতে, দুর্ভোগে শ্রমজীবী মানুষ
শৈত্যপ্রবাহে কাপছে দেশ,পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ৬.১ডিগ্রিতে, দুর্ভোগে শ্রমজীবী মানুষ
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকাঃ দুই দিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পর ফের মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে পঞ্চগড়। শনিবার সকাল ৯টায় সূর্যের দেখা মিললেও সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। বইছে কনকনে শীত। এর আগে গত ১০ জানুয়ারি রেকর্ড করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহের দাপটে নাজেহাল হয়ে পড়েছে উত্তরের এ জেলা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গত তিনদিন তাপমাত্রা বাড়লেও আজ নেমে এসেছে ৬ দশমিক ১ ডিগ্রিতে। গতকাল শুক্রবার রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে স্মরণকালে এ জেলায় ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।
প্রচণ্ড শীতে দুর্ভোগে পড়েছে নানা শ্রমজীবী-কর্মজীবী গরিব অসহায় মানুষ। পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে ছোটখাটো যানবাহন, ভ্যানচালক মানুষগুলো পড়েছেন বিপাকে। তীব্র শীতের কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকে। তবে জীবিকার তাগিদে কাউকে নদীতে পাথর তুলতে, কাউকে চা-বাগানে আবার কাউকে দিনমজুরের কাজ করতে যেতে দেখা গেছে। শীতের দুর্ভোগ বেড়েছে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে। এসব মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সরকার যে ত্রাণ দিয়েছে তা একেবারেই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এদিকে বিকাল গড়ালে শুরু হয় হিমেল হাওয়া। সে হাওয়ায় প্রবাহিত হতে থাকে কনকনে শীত। সন্ধ্যার পর থেকেই বাড়তে থাকে শীতের তাণ্ডব। মধ্যরাত থেকে ভোর অবধি পর্যন্ত বরফের হিমাঞ্চল হয়ে উঠে এ জেলা। স্থানীয়রা জানায়, দিনের চেয়ে রাতের শীত বেশি মনে হয়। পুরো রাত বরফের মতো লাগে। যেন আমরা বরফের দেশের বাস করছি।
চা শ্রমিকরা বলছেন, সকালে বরফের মতো কনকনে শীত। চা বাগানে কাজ করতে গেলে হাত-পা অবশ হয়ে আসে। এখন বাগানের পরিচর্যা চলছে। শীতের কারণে গাছের ফ্লাইং, কাটিং করতে খুব কষ্ট হয়। কিন্তু কী করবো, পেটের দায়ে আর পরিবারের কথা চিন্তা করে কাজে বের হতে হয় আমাদের।
পাথর শ্রমিক ইমরান, আরশেদ আলী ও আবু তাহের জানান, ঠান্ডায় নদীর পানি বরফের মতো মনে হয়। তারপরও আমাদের পাথরই জীবিকা। তাই কাজে বের হয়েছি। কদিন ধরে নদীর ঠান্ডা পানিতে কাজ করে জ্বর-সর্দিতে ভুগলাম। ক্ষুধার্ত পেটতো ঠান্ডা বুঝে না। কিন্তু পরিবারের কথা চিন্তা করে সকালেই পাথর তোলার সরঞ্জাম নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি। একই কথা জানান কয়েকজন দিনমজুর ও নারী পাথর শ্রমিক।
এদিকে শীতের প্রকোপে বেড়েছে নানান শীতজনিত রোগ। জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।
চিকিৎসকরা বলেন, হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগী। এমনিতে শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতজনিত রোগ হিসেবে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। আর শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, জেলায় আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ভোর ৬টায় রেকর্ড করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশা না থাকলে তাপমাত্রা কমে। জেলার ওপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ হচ্ছে।