মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » পাকিস্তানের ‘ঢাকা সারেন্ডারে’র ছবি তালেবান টুইট
পাকিস্তানের ‘ঢাকা সারেন্ডারে’র ছবি তালেবান টুইট
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ আফগানিস্তানের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী তালেবানের শীর্ষস্থানীয় নেতা আহমদ ইয়াসিরের একটি টুইটকে ঘিরে রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে, যেখানে তিনি একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় ভারতীয় ও মুক্তিবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সেনার আত্মসমর্পণের বিখ্যাত ছবিটি পোস্ট করেছেন। কিন্তু কেন?
আসলে পাকিস্তানকে বিদ্রূপ করে খোঁচা দিতেই এ ছবিটি ব্যবহার করেছে তালেবান নেতৃত্ব। তারা হয়তো বুঝিয়ে দিয়েছে, আফগানিস্তানে নাক গলাতে এলে পাকিস্তানের আবারও সেই একাত্তরের মতোই পরিণতি হবে।
ঘটনার সূত্রপাত দিন কয়েক আগে, যখন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক (স্বরাষ্ট্র) মন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ রীতিমতো হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘আফগানিস্তানের ভেতর তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) যেসব শিবির বা ডেরা আছে, পাকিস্তান সে দেশে ঢুকে ওগুলোর ওপর হামলা চালানোর কথা ভাবছে।’
‘দ্য ডন’ পত্রিকা মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছিল, ‘কাবুল যদি টিটিপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমাদেরই সে কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক আইনও আমাদের সে অধিকার দিয়েছে যে তাদের আমরা নিশানা করতেই পারি!’
এরই জুৎসই জবাব দিয়েছেন আহমদ ইয়াসির, যিনি এখন বেশিটা সময় কাতারের রাজধানী দোহাতেই থাকেন এবং সেখান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তালেবানের তরফে যোগাযোগের কাজটা দেখাশোনা করেন।
২ জানুয়ারি আহমদ ইয়াসির টুইটারে লেখেন, ‘পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার! এক্সেলেন্ট! মনে রাখবেন পাকিস্তান কিন্তু তুরস্ক নয় যে সিরিয়ার ভেতরে ঢুকে কুর্দিদের ওপর হামলা চালাতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর এটা হলো আফগানিস্তান। বহু বড় বড় গর্বিত সাম্রাজ্যের বধ্যভূমি এটা, তাদের কবর এখানেই রচিত হয়েছে। আমাদের ওপর সেনা অভিযান চালানোর কথা ভুলেও ভাববেন না, নইলে বাংলাদেশের সঙ্গে আপনাদের যে সামরিক সমঝোতা করতে হয়েছিল, তারই লজ্জাজনক পুনরাবৃত্তি অবধারিত!’
এরপরই তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ১৬ ডিসেম্বরের সেই আইকনিক ছবিটি সঙ্গে পোস্ট করেন, যেখানে পাকিস্তানি কমান্ডার লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজীকে ভারতীয় সেনার জেনারেল অফিসার কমান্ডিং লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা ও বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে দেখা যাচ্ছে। জেনারেল নিয়াজী সই করছেন ‘ইনস্ট্রুমেন্ট অব সারেন্ডার’ বা আত্মসমর্পণের দলিলে।
তালেবানের জন্ম আফগানিস্তানের মাদ্রাসাতে হলেও প্রতিবেশী পাকিস্তানেই যে তাদের নেতারা আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়েছিলেন, এ কথা সুবিদিত। তালেবান টিকে থাকতে পেরেছিল ও তাদের বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল পাকিস্তানের সাহায্যেই, আর সেই তালেবান নেতৃত্বই যখন পাকিস্তানের পুরনো ঘায়ে খোঁচা দিয়ে তাদের হুঁশিয়ারি দিচ্ছে, তা স্ট্র্যাটেজিক বিশেষজ্ঞদের অনেককেই বিস্মিত করেছে।
ভারতের প্রথম সারির দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, ‘হোয়েন মনস্টার মেকস ফান অব ক্রিয়েটর’ অর্থাৎ দৈত্য (তালেবান) নিজেই যখন তার স্রষ্টাকে (পাকিস্তান) নিয়ে হাসাহাসি করে!
দিল্লিতে একটি নামি থিংকট্যাংকের বিশেষজ্ঞ সুশান্ত সিংয়ের কথায়, ‘এককালে সারা দুনিয়ায় মাত্র যে দুটি দেশ কাবুলের তালেবান শাসকদের কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিতো, পাকিস্তান ছিল তার একটি। কিন্তু তারপর অনেক জল গড়িয়েছে, পাকিস্তান ও তালেবানের সম্পর্ক যে আর আগের মতো নেই, তা এই ঘটনাতেই আবার বোঝা গেল!’