সোমবার, ২৮ নভেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় » নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছাতে হবে
নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছাতে হবে
ড.আরিফুর রহমানঃ প্রতিবছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের বই ছাপানো ও সরবরাহ করার কাজে নানা রকম সংকট সৃষ্টি হয়। এর জন্য এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দায়ী করে থাকে। সবাই আশা করে থাকে, পরের বছর আর সংকটের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এ প্রকল্পের বিভিন্ন স্তরে একের পর এক সমস্যা লেগেই থাকে। ২০২০ সালে কাগজ সংকটের কারণে বিনামূল্যের পাঠ্যবই সময়মতো ছাপা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। একই সমস্যা ২০২২ সালে পুনরাবৃত্তি দুঃখজনক। ওই বছর কাগজ উৎপাদনকারীরা যেসব সমস্যার কথা বলেছিলেন, এবারও একই কথা বলছেন। প্রশ্ন হলো, কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কতটা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। জানা গেছে, কাগজ সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে পাঠ্যবই। লক্ষ করা যায়, সরিষার ভেতর ভূত থাকলে সিন্ডিকেটের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আমরা আশা করব, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সরিষার ভেতরের ভূত তাড়ানোর বিষয়েও কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে জোরালো তদারকি অব্যাহত না রাখলে, শিক্ষা ক্ষেত্রে দেশের পরিস্থিতি শ্রীলংকার মতো হতে পারে।
জানা গেছে, অগ্রিম টাকা দিয়েও অনেকে চাহিদামতো কাগজ পাচ্ছেন না। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠ্যবইয়ের মুদ্রণ। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রাথমিকের বই মুদ্রণ বন্ধ রয়েছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ২৫ শতাংশ বই ছাপানো সম্ভব হয়েছে। অথচ শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে বাকি আছে মাত্র ৩৪ দিন। এদিকে বই ছাপার কাজে স্থবিরতা সৃষ্টির পেছনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরেরও (ডিপিই) কিছু দায় বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী বছর ষষ্ঠ-সপ্তম এবং প্রথম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যবই দেওয়া হবে। এগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির পাণ্ডুলিপি গত সপ্তাহে দেওয়া হয়েছে মুদ্রাকরদের। সপ্তম শ্রেণির অন্তত দুটি বইয়ের পাণ্ডুলিপি এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। কাজেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিনামূল্যের বই সরবরাহ নিশ্চিত করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।সময়মতো বই ছাপার কাজ শেষ করা না হলে, শেষ মুহূর্তে অল্প সময়ে বেশি কাজ করার কারণে মান ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। গত বছরও আমরা লক্ষ করেছি, নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার পর সময়মতো বহু শিক্ষার্থী বই পায়নি। কর্তৃপক্ষ যদি শিক্ষার্থীদের হাতে নির্ভুল ও মানসম্মত বই তুলে দিতে চায়, তাহলে পাঠ্যবইসংক্রান্ত সব কাজের ব্যবস্থাপনা ত্রুটিমুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। সমগ্র প্রকল্পের কোনো স্তরে ন্যূনতম দুর্নীতি বা অব্যবস্থাপনার প্রমাণ পাওয়া গেলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার দায়িত্ব যেহেতু এনসিটিবির ওপর ন্যস্ত, তাই সময়মতো বই না পাওয়া গেলে তাদেরই জবাবদিহি করতে হবে। আমরা মনে করি, যেসব সংকটের কারণে বিনামূল্যের বই ছাপানোর কাজ আটকে আছে, তা নিরসন করা খুব কঠিন কাজ নয়। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ আন্তরিক হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ছাত্রছাত্রীদের হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা অপেক্ষায় থাকেন এসব বই পাওয়ার জন্য। কাজেই নির্দিষ্ট সময়ে বই সরবরাহের ক্ষেত্রে যাতে কোনো রকম অনিশ্চয়তা তৈরি না হয়, এজন্য কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।