বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » জাতীয় | প্রিয়দেশ » বিমানের দেনা ৮ হাজার কোটি টাকা- বেবিচক
বিমানের দেনা ৮ হাজার কোটি টাকা- বেবিচক
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকাঃ রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আবদারের পরিপ্রেক্ষিতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) পাওনা ৩৪৪৯ কোটি টাকা মাফ করতে অনুরোধ করেছিল বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। তবে বেবিচক নিজেদের সংকটের কথা জানিয়ে মওকুফের বদলে বিমানের কাছ থেকে পাওনা আদায়ে মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়েছে। একইসঙ্গে বিমান বকেয়া টাকার পরিমাণের সঠিক তথ্য দেয়নি বলেও জানিয়েছে বেবিচক।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সচিবের কাছে ১ নভেম্বর চিঠি দিয়েছেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান। চিঠিতে বলা হয়েছে, বিমানের গত ১৫ সেপ্টেম্বরের চিঠিতে বকেয়ার পরিমাণ ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে, যা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বিমানের কাছে বকেয়া আছে ৮ হাজার ৮০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এরমধ্যে মূল বিল ৯৯৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, ভ্যাট ও আয়কর ৪৩০ কোটি ৫২ লাখ, বকেয়া রাজস্বের ওপর অতিরিক্ত চার্জ (সারচার্জ) বাবদ ৬ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা ৯৫ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, বছর বছর আয়ের খবর দিলেও বেবিচকের বকেয়া পরিশোধ করছে না বিমান। সময় মতো মূল বকেয়া পরিশোধ না করায় যোগ হচ্ছে সারচার্জ। আর এই সারচার্জের অজুহাতে বকেয়া পরিশোধ না করে মওকুফের চেষ্টা করছে বিমান। ১৫ সেপ্টেম্বর বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও যাহিদ হোসেন সারচার্জ মওকুফের আবেদন জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি দিয়েছেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবের সহায়তা চেয়ে এই আবেদন করার পর বেবিচককে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়। ২০ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল স্বাক্ষরিত চিঠিতে বেবিচক চেয়ারম্যানকে বলা হয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের দেনার পরিমাণ ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। যার মধ্যে মূল বিল ৯৫৩.৪৩ কোটি টাকা, ভ্যাট ও ট্যাক্স ৩৪২.১৭ কোটি টাকা এবং সারচার্জের পরিমাণ ৩৪৪৯.১৪ কোটি টাকা। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দাবিকৃত পুঞ্জিভূত বকেয়ার ওপর সারচার্জ (প্রতি মাসে ৬ শতাংশ হারে) মওকুফ করার বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। বলা হয়, বিমানের কাছে আরোপিত সারচার্জ তিন হাজার চারশত ঊনপঞ্চাশ কোটি টাকাসহ পুঞ্জিভূত বকেয়ার ওপর প্রতি মাসে ৬ শতাংশ হারে সারচার্জ মওকুফ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
জবাবে বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিবকে লেখা চিঠিতে বেবিচকের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, বেবিচক কর্তৃপক্ষের জনবল ভাতা, পরিচালন ব্যয়, রক্ষণাবেক্ষণসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেবিচকের নগদ প্রবাহ (ক্যাশ ফ্লো) অব্যাহত রাখতে বিমানের কাছে বেবিচক কর্তৃপক্ষের মূল বিলসহ সারচার্জ পাওনা মওকুফ করা উচিত হবে না। এই টাকা আদায়ে পুনরায় মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চায় বেবিচক।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বেবিচক বর্তমানে বৈদেশিক ঋণ অর্থায়ন, সরকারি ঋণ ও অনুদান অর্থায়নসহ নিজস্ব অর্থায়নে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এরমধ্যে জাইকার ঋণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পে দুটি ঋণচুক্তির বিপরীতে ১৬ হাজার ৯০২ কোটি ৭৯ লাখ ১৬ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে পরিশোধ করতে হবে বেবিচককে। ওই প্রকল্পে ঋণের প্রথম কিস্তির আসল ও সুদ বাবদ ১ হাজার ৩০২ কোটি টাকা ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া পরের বছরগুলোতে ডিএসএল বাবদ প্রতি বছর প্রায় ৯০০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে দিতে হবে। কর্তৃপক্ষের জনবলের বেতন ভাতা, পরিচালন ব্যয়, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সহ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় নির্বাহ এবং এনটিআর ও আয়কর পরিশোধে বিপুল অঙ্কের আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে।
বকেয়া মওকুফ প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, বেবিচকের কোনও এখতিয়ার নেই কোনও বকেয়া মওকুফ করার।