রবিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২২
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » জলবায়ু পরিবর্তনে দেশে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ
জলবায়ু পরিবর্তনে দেশে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকাঃ দেশে দিন দিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা গেলেও এবার ভিন্ন চিত্র। শীতের আগমনী বার্তায়ও কমছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রমেই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত দুই বছরের চেয়েও এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছে বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা। গবেষণায় বিশ্বব্যাংক বলছে, আর্দ্রতা কমে আসার পাশাপাশি তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩ হাজার ৫৯২ জন, যা আক্রান্তের দিক থেকে গত দুই বছরের চেয়েও বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির তিন দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তিন থেকে ছয় দিনের মধ্যে ১৮ জন, ছয় থেকে নয় দিনের মধ্যে ছয়জন এবং নয় থেকে ৩০ দিনের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৩১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সবমিলিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বর্তমানে দুই হাজার ৭১৫ জনে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। আর্দ্রতা কমে আসার পাশাপাশি তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত উভয়ই বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশে বিশেষ করে শহর এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৯৭৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে ঋতুভেদে আবহাওয়ার বৈচিত্র্য। এই রোগে প্রতি বছর যতসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয় তার ২৫ শতাংশ হয় বর্ষাকালে। আর শীতকালে হয় ১৪ শতাংশ। এই তথ্য বলে দিচ্ছে, বর্ষার মাত্রা বাড়লে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি কী?- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শনিবার স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত দুই বছরের চেয়ে এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি চিন্তার। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ডেঙ্গু মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ নিয়েছি। জনসচেতনতা বাড়াতে মন্ত্রণালয় থেকে টিভিসি করে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। দুই সিটি করপোরেশনে ফগার মেশিন দিয়ে প্রতিনিয়ত মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এছাড়া নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।’
‘ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করলে সরকার কী করবে’ এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যেসব টেকনোলজি আছে আমরা সেগুলো ব্যবহার করে মশক নিধন করছি। আমাদের মেয়ররা তাদের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের সুপারভিশনে নিয়মিত কাজ করছে। তারপরেও আমরা শতভাগ মানুষকে সচেতন করতে পারছি না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি। তারপরও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হচ্ছে, যা দুঃখজনক।’
এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে দেশের ৫০ জেলার মানুষ। ঢাকার পর ডেঙ্গুর সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রামে। জেলা হিসেবে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি কক্সবাজারে। ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ভর্তির হার বেশি মিরপুর ও উত্তরায়। এছাড়াও মুগদা, কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী ও ধানমন্ডি এলাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি।