বুধবার, ৩১ আগস্ট ২০২২
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » দেশে মজুদকৃত জ্বালানি তেল দিয়ে ৩৫ দিনের চাহিদা পূরণ সম্ভব’
দেশে মজুদকৃত জ্বালানি তেল দিয়ে ৩৫ দিনের চাহিদা পূরণ সম্ভব’
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশে মজুদকৃত জ্বালানি তেল দিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ দিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশে জ্বালানি তেল সরবরাহ অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
বুধবার (৩১ আগস্ট) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম বকুলের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর এ কথা জানান। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। বুধবারের প্রশ্ন উত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।
প্রশ্ন উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহের জন্য ছয় মাসভিত্তিক চুক্তি হয়ে থাকে। বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মজুদকৃত জ্বালানি তেল দিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ দিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে এবং এই সময়ের মধ্যে জ্বালানি তেল নিয়ে দু’টি জাহাজ দেশে এসে পৌঁছাবে অর্থাৎ নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশে জ্বালানি তেল সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। গত ১৬ আগস্ট পর্যন্ত দেশে জ্বালানি তেলের মজুদের পরিমাণ পরিশোধিত ছয় লাখ ২০ হাজার ১৪৮ মেট্রিক টন, অপরিশোধিত ৮১ হাজার ৮৪৬ মেট্রিক টন। মোট সাত লাখ এক হাজার ৯৯৪ মেট্রিক টন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) দেশের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পরিশোধিত জ্বালানি তেল হিসেবে ডিজেল, জেট ফুয়েল, অকটেন, ফার্নেস অয়েল ও মেরিন ফুয়েল এবং অপরিশোধিত জ্বালানি তেল হিসেবে এরাবিয়ান লাইট ক্রুড ও মারবান ক্রড অয়েল আমদানি করে থাকে। জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে চাহিদা বিবেচনায় চলতি আগস্ট মাসে প্রায় তিন লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল, ৫০ হাজার মেট্রিক টন জেট ফুয়েল ও ৫০ হাজার মেট্রিক টন অকটেন এবং সেপ্টেম্বরে প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন ডিজেল, ২০ হাজার মেট্রিক টন জেট ফুয়েল, ৫০ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল ও ২৫ হাজার মেট্রিক টন অকটেন আমদানির সূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) বর্ধিত চাহিদা বিবেচনায় আগস্ট মাসে আরো ২৫ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল এবং সেপ্টেম্বর মাসে আরো ২৫ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল ও এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে প্রক্রিয়াকরণ ও পরিশোধনের মাধ্যমে পরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদনের জন্য আগস্ট মাসে প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন এবং সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল আমদানি করা হবে। তাছাড়া, দেশীয় উৎস হতে জ্বালানি তেল সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। জুলাই মাসে ক্রুড অয়েলের মূল্য ব্যারেল প্রতি সর্বোচ্চ ১১৭ দশমিক ৪৮ মার্কিন ডলার অতিক্রম করে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে জ্বালানি মূল্যের পার্থক্য তুলে ধরে বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত তেলের মূল্য সমন্বয় করে থাকে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায় গত ৬ এপ্রিল ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি সর্বোচ্চ ৯৯ দশমিক ৮৩ রুপি এবং পেট্রোলের মূল্য সর্বোচ্চ ১১৫ দশমিক ১২ রুপিতে উন্নীত হয়। পরবর্তীতে শুল্ক-করাদি হ্রাসের মাধ্যমে ২২ মে কলকাতায় ডিজেল লিটার প্রতি ৯২ দশমিক ৭৬ রুপি এবং পেট্রোল লিটার প্রতি ১০৬ দশমিক ৩ রুপি নির্ধারণ করা হয়, যা অদ্যাবধি বিদ্যমান রয়েছে। এরপর গত ৪ আগস্টের তথ্য অনুযায়ী কলকাতায় ডিজেল লিটার প্রতি ৯২ দশমিক ৭৬ রুপি বা সমতুল্য ১১৭ দশমিক ৩৪ টাকায় (১রুপি= গড় ১ দশমিক ২৬৫ টাকা) বিক্রয় হচ্ছিল যা বাংলাদেশ থেকে প্রায় (১১৭ দশমিক ৩৪-৮০ টাকা) অর্থাৎ ৩৭ দশমিক ৩৪ টাকা বেশি ছিল। এবং পেট্রোল লিটার প্রতি ১০৬ দশমিক ০৩ রুপি বা সমতুল্য ১৩৪ দশমিক ১৩ টাকায় পেট্রোল বিক্রি হচ্ছিল যা বাংলাদেশ থেকে ১৩৪ দশমিক ১৩-৮৬ টাকা অর্থাৎ ৪৮ দশমিক ১৩ টাকা বেশি ছিল।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেনের প্রশ্নের উত্তরে সংসদ প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এদিক থেকে দেশে কোনো বিদ্যুৎ সংকট নেই। বৈশ্বিক চলমান জ্বালানি সংকটের কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার এবং পরিকল্পিত লোডশেডিং করার মাধ্যমে সৃষ্ট সংকট উত্তরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেত্র বিশেষে এক হাজার মেগাওয়াট থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিকল্পিত লোডশেডিং করা হচ্ছে। পরিকল্পিত এ লোডশেডিং শিডিউল বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রাহকদের নিয়মিতভাবে পূর্বেই অবহিত করা হচ্ছে। বর্তমানে একদিকে এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত লোডশেডিংসহ হলিডে স্ট্যাগারিং এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হচ্ছে। অপরদিকে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করার নিমিত্ত রাত ৮টার মধ্যে সব শপিংমল, দোকানপাট ইত্যাদি বন্ধ করা, এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে রাখা, রুটিন অনুযায়ী শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি মেনে চলা, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা এবং আলোকসজ্জা পরিহারে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে অচিরেই সাময়িক লোডশেডিং থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে।