মানব পাচারে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য
সম্পাদকীয় : আন্তর্জাতিক মানব পাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে গত শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ইউএন নেটওয়ার্ক অন মাইগ্রেশনের ‘কাউন্টার ট্রাফিকিং ইন পার্সনস টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ’ জাতীয় পরামর্শ সভার আয়োজন করেছিল। সভায় বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণে মানব পাচার প্রতিরোধে চ্যালেঞ্জ বাড়ছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেছেন, অফলাইন থেকে বর্তমানে মানব পাচার সংক্রান্ত অপরাধ ‘সাইবার স্পেসে’ স্থানান্তরিত হয়েছে। এক্ষেত্রে ফেসবুক, টিকটকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। আশঙ্কার বিষয় হলো, করোনাকালে মানব পাচার সংক্রান্ত অপরাধের মাত্রা আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অনলাইন ও অফলাইন উভয়ক্ষেত্রে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য বলে মনে করি আমরা।
প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১০ লাখ মানুষ বিদেশ যান, যাদের মধ্যে অনেকেই পাচারকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়ে অভিবাসী ঋণ, জোরপূর্বক শ্রম, যৌন নিপীড়ন, ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়েসহ আধুনিক দাসত্বের শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর মানব পাচার রোধে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি, বিশেষ করে ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার নিরাপদ ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। পাশাপাশি অধিকতর উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথাযথ পদক্ষেপ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে মানব পাচারকারীদের শনাক্ত ও অভিযান পরিচালনা করা হলে এক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যাবে।
মূলত দেশের বিভিন্ন এলাকার সহজসরল মানুষকে বিভিন্ন চক্র মোটা অঙ্কের বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করার পর বিদেশে পাচার করে থাকে। সম্প্রতি ভারতে পাচারের শিকার এক বাংলাদেশি তরুণীকে বীভৎস কায়দায় নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পাচারকারীদের হিংস্রতার বিষয়টি ফের আলোচনায় আসে। ২০১২ সালের ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে’ সংঘবদ্ধভাবে মানব পাচারের জন্য মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সর্বনিম্ন ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং অন্যূন পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ আইনে বিচারের জন্য ইতোমধ্যে দেশের সাত বিভাগে সাতটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের আদেশ দেওয়া হয়েছে এবং সে অনুসারে বিচারক নিয়োগও দেওয়া হয়েছে।
ইতঃপূর্বে দালাল চক্রের অসততা সম্পর্কে বিদেশ গমনেচ্ছুদের বিশেষভাবে সতর্ক করে বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা এবং ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল’কে আরও কার্যকর করার তাগিদ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। অভিবাসনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে দেশের কোনো নাগরিক যাতে পাচারের মতো দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির শিকার না হন, সেজন্য সরকারসহ সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।