রবিবার, ৩১ জুলাই ২০২২
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | রাজনীতি | শিরোনাম » বেপরোয়া ছাত্রলীগ, কেন্দ্রের নির্দেশনা পাত্তা দিচ্ছে না
বেপরোয়া ছাত্রলীগ, কেন্দ্রের নির্দেশনা পাত্তা দিচ্ছে না
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক ঢাকাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নির্দেশনার পর জাতীয় সম্মেলন আয়োজনে মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগ প্রস্তুতি শুরু করেছে। ইতোমধ্যে নিজেরা বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের দপ্তরে চিঠি দিয়ে প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছেন তারা। দলীয় সভাপতি আগস্টের পর যে কোনো সময় সম্মেলন করবে সংগঠন দুটি। তবে উলটো চিত্র ছাত্রলীগে। আওয়ামী লীগ নির্দেশনা পাত্তাই দিচ্ছে না ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটি। আড়াই মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সম্মেলনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেননি সংগঠনটির শীর্ষ দুই নেতা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। বরং তারা এ নির্দেশনা নিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি করছেন। তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দলের জাতীয় সম্মেলনের আগেই এ তিন সংগঠনসহ মেয়াদোত্তীর্ণ সব সংগঠনের সম্মেলন করতে চান তারা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সব সংগঠনের সম্মেলন আমরা করতে চাই। এ বিষয়ে নির্দেশনাও আছে। আমরাও কাজ করে যাচ্ছি। তবে করোনাভাইরাসের কারণে দল গোছানোর কাজ আমরা ঠিকমতো করতে পারিনি। আশা করছি- পরিস্থিতি ভালো থাকলে আমাদের জাতীয় সম্মেলনের আগেই সব মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনকে আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে ঢেলে সাজাতে পারব।
১০ মে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে সহযোগী সংগঠনগুলোর বৈঠকে ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগকে সম্মেলনের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের দ্রুত সম্মেলন আয়োজন করার জন্য নির্দেশ দেন। আওয়ামী লীগের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে তাদের কথা বলে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিডিউল নিতে বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি অনুযায়ী সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের দপ্তর সেলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। এমনকি তারা আওয়ামী লীগের দপ্তরেও যোগাযোগ করেননি। ১৪ মে মধুর ক্যান্টিনে তাদের কাছে সম্মেলনপ্রত্যাশীরা জানতে চান-সম্মেলন কবে হবে, কী প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা? এসব প্রশ্নের উত্তরে জয়-লেখক জানান, প্রধানমন্ত্রী যখন সম্মেলন করার নির্দেশনা দেবেন- তখনই করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তারা দেখা করার জন্য সময় চাইবেন। ওই দিনই সন্ধ্যায় ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করতে সম্মেলনপ্রত্যাশীরা দলীয় কার্যালয়ে যান। সেখানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তাদের জানান, জয় ও লেখককে সম্মেলনের তারিখের জন্য দপ্তরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
ছাত্রলীগের সম্মেলনপ্রত্যাশীদের অভিযোগ-সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগের নির্দেশনাকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। কোনো ধরনের প্রস্তুতিও শুরু করেননি। তারা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে টালবাহানা করছেন। আসলে যে কোনো উপায়ে তারা সময়ক্ষেপণ করতে চান। এদিকে এসব অভিযোগ ও সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার ফোন করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগের যে কোনো সিদ্ধান্ত ছাত্রলীগ অবশ্যই শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখবে। সম্মেলন অবশ্যই হবে। শিগগির তারিখ দিয়ে দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্দেশনা দিয়েছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতাও ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়ে কথা বলেছেন। তারা বলেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে আগেই সম্মেলন করতে হবে। যেহেতু নির্দিষ্ট করে সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি তাই তারা (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করছেন।আরেক সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনা দিলেও তারা (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) সম্মেলন আয়োজনের কোনো প্রস্তুতি নেননি। তবে কিছু দিন আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় চারজনের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, খুব শিগগিরই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। আমরা সেই তারিখ ঘোষণার অপেক্ষায় আছি।
ছাত্রলীগের সর্বশেষ ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে। ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রথম সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। পরে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাদের সভাপতি ও সাধারাণ সম্পাদক করা হয়।
এদিকে নির্দেশনা পাওয়ার পর সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছে মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগ। তারা চাইছেন অক্টোবর বা নভেম্বরে সম্মেলন করতে। জানতে চাইলে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম বলেন, আমরা সম্মেলন আয়োজনে প্রস্তুত। নির্দেশনা অনুযায়ী এ বিষয়ে আমরা নিজেরা বৈঠক করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তরে চিঠিও দিয়েছি। আমাদের নেত্রী যখন সময় দেবেন আমরা তখনই সম্মেলন করব। তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি আমরা এখন সারা দেশে আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
জানতে চাইলে যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, আওয়ামী লীগের দপ্তরে চিঠি দিয়ে আমরা সম্মেলনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছি। এছাড়া নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গে সাক্ষাতেও আমরা তাকে অনুরোধ জানিয়েছি। নেত্রী সময় দিলেই আমরা সম্মেলন করব। এখন আমরা সারা দেশে আমাদের সংগঠন গোছানোর কাজ করছি। সারা দেশে ইউনিয়ন, থানা ও উপজেলা সম্মেলনগুলো করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের প্রথম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৪ সালের ৫ মার্চ। তখন নাজমা আক্তারকে সভাপতি ও অপু উকিলকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ১৭ মার্চে সংগঠনটির দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি পদে নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে অপু উকিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনঃনির্বাচিত হন। আর ২০১৭ সালের ৪ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক হন মাহমুদা বেগম।