শুক্রবার, ১৭ জুন ২০২২
প্রথম পাতা » জেলার খবর | পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » সিলেটে ১০ নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে, বন্যাকবলিতদের উদ্ধারে নেমেছে সেনাবাহিনী
সিলেটে ১০ নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে, বন্যাকবলিতদের উদ্ধারে নেমেছে সেনাবাহিনী
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকাঃ দেশের মধ্যে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১০টি নদীর পানি ১৩টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে এরই মধ্যে বন্যা দেখা দিয়েছে।
ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সিলেট ও রংপুর অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
শুক্রবার (১৭ জুন) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নদ-নদী পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হাতিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬০ এবং চিলমারী পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুধকুমার নদীর পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার উপরে উঠেছে। ধরলার পানি কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ৯ এবং তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে।
সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১০৮, সিলেট পয়েন্টে ৭০ এবং সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।এছাড়া সারিগোয়াইন নদীর পানি সারিঘাটে ২৩, পুরাতন সুরমা নদীর পানি দেরাই পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
লরেরগড়ে বিপৎসীমার ১৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে যাদুকাটা নদীর পানি। সোমেশ্বরী নদী কমলাকান্দা পয়েন্টে ৫৬ এবং ভুগাই নদী নাকুয়াগাঁও পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।আবহাওয়া সংস্থাগুলোর গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘন্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের কতিপয় স্থানে মাঝারি থেকে ভারী, কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারসহ সব প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
একই সঙ্গে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হতে পারে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের প্রতিটি উপজেলাই কমবেশি প্লাবিত। বন্যায় তলিয়ে গেছে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ এলাকা। ফলে সারাদেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেখানে মোবাইল ফোনেরও নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। রয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাটও। এমন অবস্থায় জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় বন্যাকবলিতদের উদ্ধারে কাজ করছে সেনাবাহিনী।
শুক্রবার (১৭ জুন) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, এটা ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞাত। এমনটা আগে কখনো ঘটেনি। পরিস্থিতি মোকাববিলায় আমরা করছি। সরকার মানুষের পাশে আছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে বন্যাকবলিতদের পাশে থাকার নির্দেশনা রয়েছে। দুপুর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোইনঘাট এবং সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা সেনাবাহিনী উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে।
এর আগে ১৫ জুন থেকে উজান থেকে নামতে থাকে পাহাড়ি ঢল। শুক্রবার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার প্রায় সব উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। অসংখ্য রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। জেলা সদরের সঙ্গে পাঁচটি উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, দ্বিতীয় দফার বন্যায় মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। আগের দফার চেয়ে এখন পানির পরিমাণ অনেক বেশি। সুনামগঞ্জ শহরের প্রায় প্রতিটি বাতাসেই পানি ঢুকেছে। এর আগে এত ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেও জানিয়েছেন অকে বাসিন্দা।