মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০২২
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | ইউরোপ | শিরোনাম | সাবলিড » ইউক্রেনের সেভেরোদোনেৎস্ক শহর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রুশ বাহিনীর সঙ্গে তীব্র যুদ্ধ চলছে
ইউক্রেনের সেভেরোদোনেৎস্ক শহর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রুশ বাহিনীর সঙ্গে তীব্র যুদ্ধ চলছে
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ পূর্ব ইউক্রেনের সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দখলের জন্য তীব্র যুদ্ধ চলছে, শহরটির ৭০ শতাংশ এলাকাই এখন রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে, তারা ইতোমধ্যেই শহরটির কেন্দ্রস্থল থেকে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের তাড়িয়ে দিয়েছে ।
শহরটির চারদিকেই খণ্ডযুদ্ধ চলছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তবে ডোনেৎস্কের একজন রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী সামরিক নেতা এদুয়ার্ড বাসুরিন বলেছেন, সেভেরোদোনেৎস্কে যে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা আছে - তাদের সামনে বিকল্প হচ্ছে “হয় আত্মসমর্পণ নয় মৃত্যু।”
গত রোববার রুশরা সেভেরোদোনেৎস্ক ও লিসিচানস্ক শহরের মধ্যে সংযোগকারী তিনটি সেতুর দুটিই উড়িয়ে দেয়। এখন তৃতীয় সেতুটি ধ্বংস করার জন্য রুশরা প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে। সেটা করতে পারলে সেভেরোদোনেৎস্ক ইউক্রেনের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
তবে রুশপন্থী মিলিশিয়া নেতা বাসুরিন দাবি করেছেন যে তৃতীয় সেতুটিও এর মধ্যে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে - কিন্তু বিবিসি তা নিশ্চিত করতে পারেনি। ইউক্রেনের সরকারও এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কিছু বলেনি।সেভেরোদোনেৎস্কের গভর্নর বলেছেন, সম্ভবত আজ বা আগামীকালের মধ্যেই রুশরা পুরো শহরটি দখল করার চেষ্টা করবে। শহরটির কেন্দ্রস্থল থেকে ইউক্রেনের সৈন্যদের তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে । গত কয়েকদিন ধরে তাদের অবস্থানগুলোর ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষণ করা হয়।
লুহানস্ক অঞ্চলের গভর্নর সেরহি হাইদাই বলছেন, সেভেরোদোনেৎস্কের ৭০ শতাংশ এলাকাই এখন রুশ নিয়ন্ত্রণে ।
তিনি আরো জানান, বিশেষ করে শহরের আজোট নামের একটি রাসায়নিক শিল্প কারখানার ওপর প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে, যেখানে প্রায় ৫০০ বেসামরিক লোক আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি শিশু রয়েছে। কিন্তু প্রচন্ড গোলাবর্ষণের কারণে তাদের উদ্ধারের কোন চেষ্টা করা যাচ্ছে না।ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, তার বাহিনী প্রতি মিটার মাটির জন্য লড়াই করে যাবে , এবং তিনি আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র দেবার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের সৈন্যদের বিকল্প হয় আত্মসমর্পণ, নয় মৃত্যু
স্বঘোষিত ডোনেৎস্ক গণপ্রজাতন্ত্রের একজন সামরিক প্রতিনিধি এদুয়ার্ড বাসুরিন বলেছেন, সেভেরোডোনেৎস্কে যে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা আছে তাদের অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে হবে, নয়তো মরতে হবে।
মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময় তিনি বলেন, ইউক্রেনের সৈন্যরা এ শহর থেকে বেরুতে পারবেনা, কারণ সবশেষ সেতুটিও এর মধ্যে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।তৃতীয় সেতুটি ধ্বংসের এই দাবি বিবিসি নিশ্চিত করতে পারেনি , এবং ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের দিক থেকেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।সেভেরোদোনেৎস্ক কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এই শহরটিকে দখল করার ওপর রাশিয়া খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে কারণ সেভেরোদোনেৎস্ক এবং এর সংলগ্ন আরেকটি শহর লিসিচানস্ক মিলে পুরো জায়গাটি হচ্ছে শিল্পকারখানাসমৃদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক কেন্দ্র।
এই দুই জোড়া শহর দখল করতে পারলে রাশিয়ার হাতে লুহানস্ক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে। এই অঞ্চলের কিছু অংশ ইতোমধ্যেই রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
এই লুহানস্ক এবং পার্শ্ববর্তী ডোনেৎস্ক - যা দক্ষিণ ইউক্রেনের মারিউপোল থেকে উত্তরে রুশ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত - মিলেই হচ্ছে ডনবাস অঞ্চল, যা রাশিয়া তাদের ভাষায় মুক্ত করতে চায়, এবং এটা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট পুতিনের শীর্ষ অগ্রাধিকার।
আর মার্কিন কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে ডনবাসে রাশিয়া যদি সাফল্য পায় - তাহলে মস্কো পুরো এলাকাটিকেই একসময় নিজের অংশ করে নেবে।পশ্চিমাদের পাঠানো বিপুল অস্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে রাশিয়া
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে তারা ডোনেৎস্ক অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সরঞ্জামের মজুত ধ্বংস করে দিয়েছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে কিছু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর পাঠানো অস্ত্রও আছে।
মন্ত্রণালয়ে বলছে, উডাশনে রেল স্টেশনের কাছে ইউক্রেনের বাহিনীকে পাঠানো সামরিক সরঞ্জামের ওপর বিমান থেকে ছোঁড়া নির্ভুল নিশানার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হানা হয়।শহরে মাত্র হাজার ১৫ লোক আছে
সেভেরোদোনেৎস্ক শহরটি বেশ কিছুদিন ধরেই রুশ বাহিনীর বোমাবর্ষণের শিকার হচ্ছিল। সেভেরোদোনেৎস্ক ও লিসিচানস্ক এই দুটি শহর কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সিভারস্কি ডোনেটস নদীর দুই পারে অবস্থিত। এ নদীর ওপর তিনটি সেতু আছে।
গত রোববার রুশরা তিনটি সেতুর দুটিই উড়িয়ে দেয়। এখন তাদের লক্ষ্য হচ্ছে তৃতীয় সেতুটি ধ্বংস করা। সেটা করতে পারলে সেভেরোদোনেৎস্ক ইউক্রেনের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
যুদ্ধের আগে শহরটির জনসংখ্যা ছিল এক লক্ষ। এর মধ্যে মাত্র ১৫,০০০ এর মত লোক এখনো শহরে বাস করছে।
শহরটিতে যেভাবে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে এবং রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ হচ্ছে তাতে এই বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া কার্যত অসম্ভব বলে বলা হচ্ছে।
ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করছে রাশিয়া
ইউক্রেনের ওপর এক নতুন রিপোর্টে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, উত্তরপূর্বের খারকিভ শহরে নির্বিচার গোলাবর্ষণ এবং নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের ফলে শত শত বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।এ্যামনেস্টির এক নতুন গবেষণায় বলা হয়, খারকিভে রুশ বাহিনীর একাধিকবার ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে।
দু সপ্তাহের গবেষণায় এ্যামনেস্টি খারকিভ শহরে ৪১টি আক্রমণের ঘটনা তদন্ত করে - যাতে ৬২ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়, আহত হয় ১৯৬ জন।
গবেষকরা ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছেন, এবং দেখেছেন যে লোকজন দোকানে কেনাকাটা করার সময়, লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় বা রাস্তায় হাঁটার সময় কীভাবে আচমকা ছুটে আসা রকেটের আঘাতে নিহত হয়েছেন।
বিবিসি খারকিভের পাঁচটি আবাসিক এলাকায় বিস্ফোরণস্থলগুলো ঘুরে দেখেছে, এবং সেখানে মাটির ওপর ক্লাস্টার বোমা ফাটার স্পষ্ট চিহ্ন দেখতে পেয়েছেন অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের এসব ছবি দেখানো হলে তারা সবাই বলেছেন, ক্লাস্টার বোমা ফাটলে যে চিহ্ন তৈরি হয় - তার সাথে এগুলো মিলে যাচ্ছে।
ক্লাস্টার বোমা একটি বিতর্কিত অস্ত্র কারণ এর বিস্ফোরণ ঘটানো হয় আকাশে এবং একটি বড় বোমা থেকে একগুচ্ছ ছোট ছোট বোমা বেরিয়ে এসে বড় এলাকা জুড়ে নানা দিকে ছড়িয়ে পড়ে বিস্ফোরিত হতে থাকে । ফলে বেসামরিক লোকের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে।