বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর চাপ রয়েছে
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর চাপ রয়েছে
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক ঢাকাঃ র্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও শ্রম আইন নিয়ে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ রয়েছে। শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও চাপ আছে। এ জন্য ইইউর জিএসপি সুবিধা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ বিষয়ে গভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।
বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। কমিটির সভাপতি ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং হাবিবে মিল্লাত এমপি অংশ নেন।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তারা শ্রম আইন নিয়েও কথা বলছে। শ্রম আইন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নও কথা বলতে শুরু করেছে। এ দুটো বিষয় নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে।
সংসদীয় কমিটির সুপারিশের বিষয়ে সভাপতি বলেন, ‘র্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। যে অভিযোগগুলো রয়েছে, তার বিষয়ে ফ্যাক্ট অ্যান্ড ফিগার দিয়ে ক্লারিফাই করতে হবে। জানাতে হবে, এর কোনোটাই ইচ্ছাকৃতভাবে হচ্ছে না।
কমিটির সভাপতি আরও জানান, কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের বিষয়ে যে প্রশ্নগুলো আসছে, তা আরও গভীরে গিয়ে দেখতে হবে। কারণ, আগামীতে তারা হয়তো শ্রমিক ইস্যু নিয়ে আরও প্রশ্ন তুলতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও অব্যাহত আলোচনা চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের যে জিএসপি সুবিধাগুলো আছে, তা কিছুটা সংকোচন হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রসঙ্গে ফারুক খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈঠক হয়েছে। সেখানে র্যাবের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর যে কোনো দেশে এ ধরনের প্রেক্ষাপটে একটি-দুটি ভুল হতেই পারে। মোটামুটি বোঝাতে সক্ষম হওয়া গেছে যে র্যাব অনেক ভালো কাজ করছে। যদি কোনো ভুল তারা করে থাকে, তার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের যারা অংশ নিয়েছেন, তারা সন্তুষ্ট হয়েছেন বলে মনে হয়েছে।
কমিটির সভাপতি বলেন, যে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করলে কখনও কখনও ভুল হতে পারে। যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, সেটা শোধরাতে যা যা করা দরকার, তা করা হচ্ছে। পৃথিবীতে পাঁচ হাজার ব্যক্তি গুম আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে ৫৬/৫৭ জন। প্রতিবেশী দেশেও এই সংখ্যা অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয়েছে, গুমের বিষয়ে তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেওয়া হলে বাংলাদেশ সরকার সেটা দেখবে। এটাও বলা হয়েছে, যদি কোনো সমস্যা থাকে, সে পরিস্থিতির উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকে কাজে লাগানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কমিটির আগের বৈঠকে দুই দেশের যাদের কমন বন্ধু, তাদের সঙ্গে কাজ করা যেতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ (গতকাল) জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এ ছাড়া অন্যান্য দেশের ইনফ্লুয়েন্সের জন্য কূটনৈতিক চ্যানেলে কথা বলা হয়েছে। বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলেও জানান তিনি
মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় দূতাবাসের ব্যর্থতা :এদিকে সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণীতে দেখা গেছে, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জন্য দূতাবাসকে দায়ী করেছে সংসদীয় কমিটি। তারা বলেছেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আগে থেকেই অবহিত না হওয়ার বিষয়টি বড় ব্যর্থতা। কমিটির আগের বৈঠকে আলোচিত এই বিষয়গুলো গতকালের বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়।
কার্যবিবরণীতে দেখা গেছে, কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়ে ওয়াশিংটনের দূতাবাস আগে থেকে অবহিত না হওয়ার বিষয়টি বড় ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তিনি মালয়েশিয়া ও লেবানন দূতাবাসের বিরুদ্ধে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগ তোলেন। তিনি আমেরিকা, ইউরোপসহ সব মিশনকে আরও সক্রিয় ও দায়িত্বশীলভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন।
কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, সরকারকে বিশ্ববাসীর কাছে বিতর্কিত করতে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিপুল অর্থ ব্যয়ে বিভিন্ন দেশে লবিস্ট নিয়োগ করে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এই অপপ্রচার মোকাবিলায় বিদেশে অবস্থিত বিভিন্ন মিশন তথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হচ্ছে।
হাবিবে মিল্লাত বলেন, বিরোধী দলগুলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের জন্য যেভাবে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, সেখানে মিশনগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অসহায় হয়ে পড়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কিছু উন্নয়ন সহযোগী আইনপ্রণেতা বাংলাদেশের কাছে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের ওপর প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য না পাওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যথাসময়ে চিঠির জবাব দেওয়া সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তিনি কিছু তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান।
তিনি বলেন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোই লবিস্ট হিসেবে কাজ করে। কিন্তু দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তাদের সে দেশের আইনপ্রণেতাদের সম্পর্কটা তেমন ঘনিষ্ঠ না হওয়ার কারণে অর্থের বিনিময়ে নিয়োজিত লবিস্ট ফার্মগুলো বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। পক্ষান্তরে, সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে জবাবদিহির প্রশ্ন থাকায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে বিদেশে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি কিছুটা সময়সাপেক্ষ হবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, যথাসময়ে তথ্যগুলো পেলে বাংলাদেশকে এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতো না।