রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | ইউরোপ | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » মারিউপোল দখলে নিয়েছে রাশিয়া- দাবি মস্কোর
মারিউপোল দখলে নিয়েছে রাশিয়া- দাবি মস্কোর
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়া ইউক্রেনের রাজধানী এবং অন্য শহরগুলোতে শনিবার (১৬ এপ্রিল) ক্ষেপণাস্ত্র হামলা জোরদার করেছে। মস্কো জানিয়েছে, রুশ সেনারা মারিউপোলের শহর এলাকাগুলো দখলে নিয়েছে এবং অবরুদ্ধ দক্ষিণ বন্দরে একটি ইস্পাত কারখানার প্লান্টের ভেতরে ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের একটি ছোট দল রয়ে গেছে।
প্রবল সংঘর্ষ এবং সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয়ের শিকার শহর মারিউপোল প্রায় দখলে নেওয়ার রাশিয়ার দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। ২৪ ফেব্রুয়ারি আক্রমণের পর এটিই হবে রুশ বাহিনীর দখলকৃত প্রথম বড় শহর।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি শনিবার বলেছেন, অবরুদ্ধ বন্দরের পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর এবং কিয়েভ প্রতিদিন শহরে অবস্থানকারী সেনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
জেলেন্সকি এক অনলাইন বার্তায় শহরের বাসিন্দাদের রাশিয়া নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তোলেন। কিন্তু মারিউপোলের শহর এলাকা দখলে নেওয়ার মস্কোর দাবির বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
কৃষ্ণ সাগরে একটি জাহাজ ডুবে যাওয়ার পর রাশিয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বৃদ্ধি করে। মস্কো বলেছে যে, তার যুদ্ধবিমান কিয়েভের একটি ট্যাংক মেরামতের কারখানায় আঘাত করেছে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছে, রাশিয়ার যে যুদ্ধবিমানগুলো বেলারুশ থেকে উড্ডয়ন করেছিল সেগুলো পোলিশ সীমান্তের কাছে লেভিভ অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী চারটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে।
পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরটি এখন পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে অক্ষত রয়েছে এবং শরণার্থী ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর জন্য একটি আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করছে।
মারিউপোল বন্দর নগরীতে রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত জেলাগুলোতে রয়টার্সের সাংবাদিকেরা ইলিচ ইস্পাত কারখানায় পৌঁছেছেন। সেখানে দুটি ধাতব কারখানার মধ্যে একটি যেখানে রক্ষকেরা ভূগর্ভস্থ টানেল এবং বাঙ্কারগুলোতে অবস্থান করছেন। শুক্রবার মস্কো এটি দখল করেছে বলে দাবি করেছে।
আরআইএ বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, শনিবার পর্যন্ত শহরে ইউক্রেনীয় বাহিনী ৪ হাজারেরও বেশি সদস্যকে হারিয়েছে।খারকিভ প্রদেশের গভর্নর বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত একজন নিহত ও ১৮ জন আহত হয়েছেন।রাশিয়া বলেছে, দক্ষিণ ফ্রন্টের কাছাকাছি একটি শহর মাইকোলাইভে তারা একটি সামরিক যানবাহন মেরামতের কারখানায় আঘাত করেছে।
জাহাজ ডুবির প্রতিশোধ
কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ দ্য মস্কোভা ডুবে যাওয়ার পর শুক্রবার রাশিয়া ঘোষণা দেয় যে, “নাশকতা” ও “সন্ত্রাসবাদী” কর্মকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দূরপাল্লার হামলা জোরদার করবে। এর সূত্র ধরেই এই হামলাগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে।
কিয়েভ ও ওয়াশিংটন বলেছে যে, জাহাজটিতে ইউক্রেনীয় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছিল। এটি ডুবে যাওয়া ইউক্রেনের প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে। মস্কো বলেছে জাহাজটিতে আগুন লাগার পরে ডুবে গেছে এবং এর প্রায় ৫০০ জন ক্রুকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মারিউপোল “সবসময় ইউক্রেনেরই থাকবে”
মারিউপোল হলো দনবাসের প্রধান বন্দর। যেটি দক্ষিণ-পূর্বের দুটি প্রদেশের একটি অঞ্চল, এই অঞ্চলটিকে মস্কো সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে হস্তান্তর করার দাবি করে।
মারিউপোলের উভয় ইস্পাত কারখানার মালিক ও ইউক্রেনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি রিনাত আখমেতভ শহরটিকে পুনর্নির্মাণের অঙ্গীকার করেছেন।
আখমেতভ রয়টার্সকে বলেছেন, “মারিউপোল ইউক্রেনীয় শহর ছিল এবং সবসময়ই থাকবে”।
জেলেন্সকির একজন উপদেষ্টা বলেছেন যে, দেশটিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিত্রদের কাছ থেকে দ্রুত অস্ত্র সরবরাহের প্রয়োজন।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন যে, ওডেসা অঞ্চলে তাদের বিমান-বিধ্বংসী ব্যবস্থা পশ্চিমা দেশগুলোর সরবরাহ করা অস্ত্র বহনকারী ইউক্রেনীয় বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে। দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি তারা। কিয়েভ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
জেলেন্সকি বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা এবং ২০ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছেন।
২৫ মার্চ থেকে মস্কো তার হতাহতের বিষয়ে কিছুই জানায়নি। সে সময় মস্কো জানায়, ১ হাজার ৩৫১ জন সেনা নিহত হয়েছেন। পশ্চিমা অনুমানে রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতি আরও অনেক গুণ বেশি।
ইউক্রেন বলেছে যে, বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা গণনা করা অসম্ভব, শুধুমাত্র মারিউপোলে অন্তত ২০ হাজার জন নিহত হয়েছেন।