বুধবার, ৬ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | ইউরোপ | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » ইউক্রেনে রাশিয়ার বড় সামরিক পরাজয়
ইউক্রেনে রাশিয়ার বড় সামরিক পরাজয়
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনের রাজধানী দখল করতে না পারা গত কয়েক বছরের মধ্যে রাশিয়ার বড় সামরিক পরাজয়। ইউক্রেন দখলের লড়াই রুশ সেনারা শুরু করেছিল দুর্বলভাবে এবং সেখান থেকে পরিণতি আরও খারাপের দিকে গেছে। টানা কয়েকদিন চেষ্টার পর ব্যর্থ হয়ে রুশ সেনারা কিয়েভ দখল থেকে পিছু হটে। ইউক্রেনে নতুন সামরিক লক্ষ্যের কথা জানিয়েছে রাশিয়া। আর তাতে কিয়েভ নয়, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে মনোযোগ কেন্দ্রীভুত করার কথা বলা হয়েছে। এটিকে অনেকেই রাশিয়ার পরাজিত হয়ে মুখ রক্ষার চেষ্টা হিসেবে মনে করছেন। মার্কিন বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।
ইউক্রেন সীমান্তে কয়েক মাস ধরে সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন এবং প্রস্তুতির পর ২৪ ফেব্রুয়ারি আক্রমণ শুরুর নির্দেশ দেন ভ্লাদিমির পুতিন। আক্রমণের শুরুতেই পুতিন রাশিয়ার স্পেশাল ফোর্সের কয়েকশ’ সদস্যকে হেলিকপ্টারে পাঠান কিয়েভের কাছে দুর্বল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি বিমানঘাঁটি দখলের জন্য।
রুশ সেনাদের অপর অংশগুলো ইউক্রেনজুড়ে হামলা চালায়। পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ থেকে শুরু করে কৃষ্ণ সাগরীয় উপকূল ডনবাস অঞ্চলেও ছড়ায় সংঘাত। কিন্তু ইউক্রেনের জাতীয় শক্তির প্রধান কেন্দ্র কিয়েভ ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। তাই যুদ্ধের প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রুশ অভিজাত বাহিনীকে তা দখলের জন্য পাঠানো হয়েছিল।
কিন্তু সংখ্যায় ও অস্ত্রে দুর্বল ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে দ্রুত পরাজিত করার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন পুতিন। ইউক্রেনীয় প্রতিরোধ মোকাবিলায় রাশিয়ার প্রস্তুতি ছিল দুর্বল। এতে প্রমাণিত হয়েছে তারা পিছিয়ে পড়ার পর সমন্বয় করতে ব্যর্থ হয়েছে, ব্যর্থ হয়েছে আকাশ ও স্থলপথে কার্যকর হামলা। আকাশসীমা রক্ষায় ইউক্রেনের সামর্থ্যকে খাটো করে দেখেছে তারা। এছাড়া রসদ সরবরাহের পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের মতো মৌলিক সামরিক কাজ নিয়ে সংকটে পড়েছে।
ওহাইয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির সামরিক ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপক এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল পিটার মনসুর বলেন, কোনও দেশ দখল করার ক্ষেত্রে এমনটি সত্যিকার অর্থে খারাপ সমন্বয়।
আপতত পুতিনের বাহিনী কিয়েভ থেকে সরে পূর্ব ইউক্রেনে সন্নিবেশিত হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত রুশ নেতা হয়ত তার কয়েকটি লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন। কিন্তু কিয়েভ দখল করতে না পারার বিষয়টি অনেকদিন আলোচিত হবে। যে বাহিনীকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মনে করা হতো সেই বাহিনী কীভাবে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে এবং সামরিক বিবেচনায় অবাক করার মতো দুর্বলতার প্রকাশ ঘটিয়েছে।
ইন্সটিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার-এর সামরিক ইতিহাসবিদ ফ্রেডেরিক কাগান জানান, রাশিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শক্তির কোনও দেশ নিজের পছন্দ মতো সময়ে আক্রমণের পর এমন তীব্রভাবে ব্যর্থতার কথা তারা জানা নেই। তিনি বলেন, এটি একেবারে অবাক করার মতো।
আক্রমণের প্রথম দিন ভোরে রুশ এমআই-৮ অ্যাস্টল হেলিকপ্টার কিয়েভের দক্ষিণাঞ্চলে হোস্তোমেল বিমানঘাঁটি দখলের মিশনে যায়। এটি দখল করে সেখানে ঘাঁটি করার। যাতে করে আরও সেনা ও হালকা সামরিক যান নিয়ে আসা যায় কিয়েভের কাছে।
কিন্তু পরিকল্পনা মতো মিশন আগায়নি। হোস্তোমেল পৌঁছার আগেই অনেক রুশ হেলিকল্পটার ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এমনকি যেগুলো পৌঁছাতে পেরেছিল সেগুলোও কামানের গোলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কিয়েভের দক্ষিণাঞ্চলীয় সামরিক ঘাঁটি ভাসিলকিভ দখলের চেষ্টাও বড় ধরনের প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। এখানেও রাশিয়ার কয়েকটি বড় পরিবহন বিমান ইউক্রেনীয় সেনারা ভূপাতিত করেছে। এসব বিমান রুশ প্যারাট্রুপারদের পরিবহন কাজে ব্যবহৃত হয়।
শেষ পর্যন্ত রুশ সেনারা হোস্তোমেল বিমানঘাঁটি দখলে নেয় ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধের পরও। এতে করে ইউক্রেনে আক্রমণ পরিকল্পনা নিয়ে পুনরায় ভাবতে বাধ্য হয় রুশ সামরিক কর্মকর্তারা। যে পরিকল্পনার প্রত্যাশা ছিল ইউক্রেনীয়রা দ্রুত পরাজয় মেনে নেবে, পশ্চিমারা বিক্ষিপ্ত থাকবে এবং রুশ সেনাদের লড়াই হবে সহজ।
অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল পিটার মনসুর বলেন, আক্রমণে সেনা সংখ্যার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে রাশিয়ার অবমূল্যায়ন ছিল এবং মৌলিক সামরিক কাজ বাস্তবায়নের চরম অদক্ষতার পরিচয় তারা দিয়েছে। কিয়েভ দখল করার বিষয়ে তাদের বিবেচনা ভুল ছিল।
ইউক্রেনে রুশ সেনাবাহিনীর প্রাথমিক ব্যর্থতা শুধু পুতিন নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশের কর্মকর্তাদেরও অবাক করেছে। পশ্চিমারা আশঙ্কা করেছিলেন, বড় শক্তি রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করা ‘ছুরি দিয়ে মাখন কাটার’ মতো সহজ হবে। কয়েক দিনের মধ্যে কিয়েভ ও কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরো দেশ দখলে নিতে পারবে রুশ সেনারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিন হয়ত এখন ডনবাস অঞ্চলে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এগোতে পারেন। যার মধ্য দিয়ে ডনবাস থেকে ক্রিমিয়া উপত্যকায় একটি স্থল করিডোর গঠন করা যায়। কিন্তু কিয়েভ দখলে ব্যর্থতা ইঙ্গিত দিচ্ছে, খুব দ্রুত ইউক্রেনের রাজধানী দখলের চেষ্টা আবার করবে না রুশ সেনারা।