শিরোনাম:
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১
BBC24 News
মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » আমেরিকা | শিরোনাম | সাবলিড » যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রেশন জট : গ্রিনকার্ডপ্রত্যাশীদের শঙ্কা
প্রথম পাতা » আমেরিকা | শিরোনাম | সাবলিড » যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রেশন জট : গ্রিনকার্ডপ্রত্যাশীদের শঙ্কা
৪৮১ বার পঠিত
মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রেশন জট : গ্রিনকার্ডপ্রত্যাশীদের শঙ্কা

---বিবিসি২৪নিউজ, মো. সুমন মিয়া (নিউইয়র্ক) যুক্তরাষ্ট্র  থেকেঃ  যারা গ্রিনকার্ড পাবেন-পাবেন এমন একটা মুহূর্তে রয়েছেন, তাদের জন্য দুঃসংবাদই বলতে হবে। আমেরিকায় যারা আন-ডকুমেন্টেড হয়ে বসবাস করছেন, তারা বুঝতে পারেন নিজেরা কতটা অভিশপ্ত। আমেরিকায় এসে যারা থেকে যেতে চান, তাদের কাছে গ্রিনকার্ড কতটা অমূল্য ধন। গ্রিনকার্ড তাদের কাছে প্রকৃত অর্থেই সোনার হরিণ। তাদের স্বপ্নপূরণের সোনার কাঠি। আমেরিকায় বৈধ কাগজপত্র নিয়ে যেমন কোটি মানুষ নিশ্চিন্তে বাস করছেন, তেমনি বৈধ কাগজপত্র ছাড়াও বাস করছেন লাখ লাখ মানুষ। তাদের সার্বক্ষণিক প্রার্থনা-একটি গ্রিনকার্ড পেয়ে অবৈধর তকমা থেকে মুক্তির।
যাদের অভিবাসী জীবনে বৈধতার কোনো সনদ ছিল না, তাদেরকেই কেবল দুঃস্বপ্ন নিয়ে কাল কাটাতে দেখা গেছে। অনেকে অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার স্বপ্নে জীবন পর্যন্ত বাজি রেখে কোনো ঝুঁকি নিতেই ভয় পায়নি। ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি সর্বস্ব বেচে বা বন্ধক রেখে ঘর ছেড়েছে ভবিষ্যতের সোনালি স্বপ্ন নিয়ে। দু-চারজন সৌভাগ্যের বরপুত্র হয়তো স্বপ্নের কূলে ভিড়তে পেরেছেন। অনেকেই চিরতরে হারিয়ে গেছেন বনে-জঙ্গলে। অনেকেরই সন্ধান মিলেছে পরিচয়হীন গণকবরে। কারো ঘটেছে সলিলসমাধি। ফেলে আসা পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র-পরিজন সন্ধান পর্যন্ত পাননি অনেকের।
এ তো অভিবাসীপ্রত্যাশী মানুষের বঞ্চনার এক দিক, কিন্তু যারা বৈধ অভিবাসন নিয়ে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় আসার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন-করোনা মহামারি তাদের জন্যও মহাদুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের ভাগ্যাকাশে এখন কালো মেঘের ঘনঘটা। কবে মিলবে সোনার হরিণ গ্রিনকার্ড-তা এখন অনিশ্চিতের গহ্বরে। কেউ জানে না কত দিনে তাদের প্রতীক্ষার পালা শেষ হবে! নাকি অপেক্ষা করতে করতেই তাদের স্বপ্নের পাখি উড়ে যাবে! করোনার থাবা তাদের স্বপ্নও রক্তাক্ত করছে।
কিছুদিন থেকেই গ্রিনকার্ডপ্রত্যাশীদের জন্য ভয়াবহ শঙ্কার খবর প্রকাশিত হয়ে আসছে দেশ-প্রবাসের বিভিন্ন পত্রিকায়। প্রকাশিত রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ড মানেই অনেকের কাছে ‘সোনার হরিণ’। আর এই সোনার হরিণ ধরতে উন্নত জীবনের আশায় বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের শাসনামলে ইমিগ্র্যান্টবিরোধী নীতি এবং বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ভয়াবহ মামলাজট তৈরি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘সোনার হরিণ’ অধরাই থেকে যাচ্ছে। মামলাজট বা ইমিগ্রেশন ব্যাকলগের কারণে গ্রিনকার্ডপ্রত্যাশীদের জীবনে এখন হতাশার কালো মেঘ জমে উঠেছে।”
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের প্রধানতম একটি ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। অন্যদিকে মানবিক রাষ্ট্র হিসেবেও যুক্তরাষ্ট্রের সুনাম বিশ্বে কম নয়। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয়ে থাকে অভিবাসী-বান্ধব দেশ। যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ, স্বপ্নপূরণের সম্ভাবনা এবং আশ্রয়প্রাপ্তির ভরসা-সবকিছুর হিসাব মিলিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ তাদের চোখে স্বপ্ন নিয়ে এই মুল্লুকে আসার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। এ তো গেল বৈধ পথের বাইরে বিভিন্ন পথে আসা অভিবাসীদের কথা, যাদের আইনি ভাষায় বলা হয় ‘আন-ডকুমেন্টেড ইমিগ্র্যান্ট’। বৈধ কাগজপত্র নেই এদের। তাই বৈধভাবে থাকার অনুমতিও নেই। এরা নানামুখী দুর্ভোগ-দুর্গতি মোকাবিলা করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। কোনো কারণে স্বপ্নভঙ্গ হলে এরা মহাবিপাকে পড়ে যায়। এসব আশঙ্কা নিয়েও মানুষ এ পথে পা বাড়ায় স্বপ্ন ধরার বাসনা নিয়ে, শুধু প্রিয়জনদের মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে তোলার জন্য।
এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবেও নানা কর্মসূচিতে প্রতিবছর আসেন লাখ লাখ মানুষ। সোজাসাপটা কথায়, তারা নানা কর্মসূচিতে ইমিগ্রেশন নিয়ে আসেন। তাদের জন্যও নানা দুর্ভোগ অপেক্ষা করে। বিশেষ করে, ট্রাম্পের আমলে ইমিগ্রেশনের অনেক সুযোগ-সুবিধা যেমন সংকুচিত করা হয়, তেমনি অনেক রকম জটও তৈরি হয়েছে বৈধভাবে আগতের পথেও।
২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে ক্ষমতাসীন হয়েই নানা নির্বাহী আদেশে অভিবাসন-সুবিধা কাটছাঁট করতে শুরু করে দেন। বলা হয়, ট্রাম্পের আরোপিত কড়াকড়িতে অবৈধভাবে আসা মানুষদের চেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে শুরু করেন বৈধভাবে আসা মানুষেরা। ট্রাম্প আমলের আগে আসা ইমিগ্র্যান্ট, যারা মেডিকেইডসহ বিভিন্ন বেনিফিট গ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে অনেককেই গ্রিনকার্ডের জন্য অযোগ্য করে দেওয়া হয়। এই বিপদের মধ্যে নতুন বিপদ হিসেবে দেখা দেয়, বিশ্বজুড়ে মরণঘাতী মহামারি কোভিড-১৯ বা করোনা। গোঁদের উপর বিষফোড়া আর কাকে বলে! সবকিছুতে ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত, কাজে-কর্মে দেখা দেয় জট, স্থবিরতা। একদিকে মৃত্যুর মিছিল হতে থাকে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর, অন্যদিকে ইমিগ্রেশনে শুরু হয় দীর্ঘ জট। করোনার কারণে অফিস-আদালতে বন্ধ হয়ে যায় ইনপারসন কার্যক্রম। বন্ধ হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র কাস্টমস অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের (ইউএসসিআইএস) শতাধিক অফিস। যে কারণে দেখা দেয় দীর্ঘ মামলাজট। এই মামলাজটে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন গ্রিনকার্ডপ্রত্যাশীরা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এ সময় করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে ইমিগ্রেশন অফিসের ৬০ শতাংশ কর্মকর্তা কাজে যোগ দেননি। যে কারণে চরম লোকবল সংকটে পড়ে বিভিন্ন ইমিগ্রেশন অফিস। এই পরিস্থিতিতে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মামলা পেছনে পড়ে যায়। বর্তমান ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন এই সংকট দূর করতে লোকবল নিয়োগের ঘোষণা দিলেও গত এক বছরেও এই সংকটের কোনো উন্নতি হয়নি। এ রকম পরিস্থিতিতে বাইডেন প্রশাসন নতুন আরেকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে দু’ভাগে। একটি সাধারণ প্রক্রিয়া, অন্যটি প্রিমিয়াম। প্রিমিয়াম প্রক্রিয়ায় আমেরিকার নাগরিকদের স্ত্রী বা স্বামী, বাবা-মা আর ২১ বছরের নিচের পুত্র-কন্যাদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার ক্ষেত্রে দ্রুত সেবা দেওয়া হবে। আর যারা অবৈধভাবে এসে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আবেদন করে গ্রিনকার্ডের প্রত্যাশায় রয়েছেন, তারা সাধারণ প্রক্রিয়ায় পড়বেন। এতে তাদের গ্রিনকার্ডের অপেক্ষা আরো দীর্ঘতর হচ্ছে।
যাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন গৃহীত হয়, তাদের পরিবারের আমেরিকায় আসার ব্যবস্থা সাধারণত খুব কম সময়ের মধ্যেই হয়ে এসেছে এত দিন। এখন সেই অবস্থাও পাল্টে গেছে। এখন রাজনৈতিক আশ্রয়লাভকারীদের পরিবারের সদস্যদের আর প্রত্যাশিত স্বল্প সময়ের মধ্যে আসা হচ্ছে না। গ্রিনকার্ড প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও জটের যন্ত্রণা ভোগ করছেন প্রত্যাশিতরা। ইমিগ্রেশনের মামলাজট কমিয়ে আনতে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে দিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। কেননা লোকবল সংকটের কারণে ইমিগ্রেশন অফিসে কোনো কাজই স্বাভাবিক গতিতে অগ্রসর হচ্ছে না বলে জানা যাচ্ছে।
এ রকম পরিস্থিতি ডকুমেন্টেড, আন-ডকুমেন্টেড অভিবাসন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সবার জন্যই দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি কথা এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে এসে যায়, মানুষের সৃষ্ট হোক আর প্রাকৃতিক কারণ হোক, জট-জটিলতা একবার শুরু হলে সে জট খোলা সহজ হয় না। কথায় আছে, রোগব্যাধি হোক বা সমস্যা-সংকট হোক, শুরু যত সহজ হয়, নিরাময় তত সহজে হয় না। ডোনাল্ড ট্রাম্প যে সংকট তৈরি করে দিয়ে গেছেন এবং করোনা যা আরো জটিল করে দিয়েছে, তা যে সহজে শেষ হওয়ার নয়, তা বোধগম্য হলেও যারা ভুক্তভোগী, তাদের জন্য বিষয়টা যন্ত্রণাদায়ক বটেই। এখন দেখার বিষয়, সংকট সমাধানে প্রশাসন কতটা আন্তরিক। প্রশাসনের আন্তরিকতার প্রকাশ ঘটবে দ্রুত জট খোলার মধ্য দিয়ে।
এ কথা সংশ্লিষ্ট সবার কোনোভাবেই বিস্মৃত হওয়া যাবে না যে আমেরিকার বড় পরিচয় একটি ইমিগ্র্যান্ট-বান্ধব রাষ্ট্র। আমেরিকার মানবিক বৈশিষ্ট্যও প্রকাশ পায় বিশ্বের নিপীড়িত, লাঞ্ছিত মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে। বিভিন্ন দেশে নিপীড়নের শিকার হয়ে মানুষ আমেরিকায় এসে যেমন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান পায়, তেমনি নিজ পরিবার, সন্তান-সন্ততিদের ভবিষ্যৎ গড়ার অপার সম্ভাবনারও সন্ধান পায়। এবং এই অভিবাসী সমাজ আমেরিকার অর্থনীতি ও অবকাঠামোর উন্নয়নের বড় একটা শক্তি।
তাই অভিবাসন-প্রবাহ অব্যাহত রাখা আমেরিকার অর্থনৈতিক, মানবিক এবং জন্ম-বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রাখার জন্য অপরিহার্য।



আর্কাইভ

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক স্বাভাবিক দিকে অগ্রসর হচ্ছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
নতুন আইজিপি বাহারুল ও ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত
পারমাণবিক আশ্রয়কেন্দ্র বানাচ্ছে রাশিয়া!
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ
ইলন মাস্কের রকেট উৎক্ষেপণ দেখতে হাজির ট্রাম্প
লেবাননে নিহত দুই শতাধিক শিশু: ইউনিসেফ
মার্তিনেজের ধাঁধানো গোলে জিতল আর্জেন্টিনা
পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পরিধি বাড়ালেন পুতিন
বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ সফল হয়নি: হাসনাত
যুক্তরাষ্ট্র-ফিলিপাইন সামরিক গোয়েন্দা তথ্য চুক্তি স্বাক্ষর