শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড | স্বাস্থ্যকথা » করোনাভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ পার করছে- বাংলাদেশ
করোনাভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ পার করছে- বাংলাদেশ
বিবিসি২৪নিউজ, নিজস্বপ্রতিবেদক ঢাকাঃ বাংলাদেশের বিজ্ঞানী, গবেষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন যে তাদের ধারণা দেশটি করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ের চূড়া অতিক্রম করেছে, তবে সতর্ক না হলে আবারও নতুন ঢেউয়ের আশঙ্কা আছে।
সংক্রমণ সংখ্যা, হার ও মৃত্যুর গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে তারা বলছেন যে মূলত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহেই চূড়া অতিক্রম করেছে বাংলাদেশে।
তারা বলছেন যে জানুয়ারির শেষ দিকে যারা সংক্রমিত হয়েছেন তাদের অনেকের অবস্থা গুরুতর হওয়ার কারণেই এখন ২/৩ সপ্তাহ পর এসে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি বা উর্ধ্বমুখী।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট বা আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বিবিসিকে বলছেন যে তারা মনে করছেন করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার এখন নিম্মমূখী এবং পিক সময়টা পার হয়েই এসেছে বলা যায়।
“ট্রেন্ডটা এখন নিম্নমুখী তবে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ সংক্রমণের হার এখনো অনেক কমতে হবে। শতকরা দশ শতাংশের নীচে এবং এরপর ৫ শতাংশের নীচে আসতে হবে ধারাবাহিকভাবে। সেটি হচ্ছে কিন্তু খুব ধীরগতিতে,” বলছিলেন তিনি।
অর্থাৎ আগের দু দফায় সংক্রমণের চূড়ায় উঠার পর সংক্রমণ যে গতিতে কমে এসেছিলো এবার তুলনামূলক কম গতিতে সেটি কমছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালের ৮ই মার্চ থেকে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে মোট শনাক্ত হয়েছে ১৮ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩৫ জন। আর এ সময়ে মোট মারা গেছে ২৮ হাজার ৭৪৪ জন।
সবশেষ আজ শুক্রবার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে যে গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণের হার ও সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় আরও কমেছে। এ সময়ে নতুন করে ৫২৬৮ জন শনাক্ত হয়েছে এবং শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৪৬। তবে মারা গেছে ২৭ জন।তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল বলছেন যে স্বাস্থ্য বিভাগের এ হিসেবে দেশের প্রকৃত চিত্র নেই, কারণ স্বাস্থ্য বিভাগ শুধু হাসপাতালে করা টেস্ট বা চিকিৎসার জন্য আসা ব্যক্তিদের তথ্য উপাত্তই দিয়েছে।
“অনেকে বাড়িতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন যাদের খোঁজ কেউ রাখেনি,” বলছিলেন তিনি।
এমনই একজন ঢাকার শ্যামলী রহমান।
“করোনার সব লক্ষণ ছিলো আমার। আমি নিজেই বাসায় আলাদা হয়ে গেছি। টেস্ট করাইনি, কিন্তু পরিচিত চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়েছি। কয়েকদিন পরই খাবারে স্বাদ গন্ধ ফিরে পেয়েছিলাম। পরে আর কোন সমস্যা বোধ করিনি,” বলছিলেন তিনি।
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের সময়কার চিত্র
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি প্রায় সাড়ে তিন মাস নিয়ন্ত্রণে থাকার পর গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করে।
এরপর ৬ই জানুয়ারি দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়ায় এবং এর দু সপ্তাহের মাথায় ২০শে জানুয়ারি দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ৩রা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দিনে দৈনিক সংক্রমণ দশ হাজারের ওপরেই ছিল।
আর এর মধ্যে ২৮শে জানুয়ারি সংক্রমণের হার ছিলো সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ এবং সেদিন ১৫৪৪০ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর দিয়েছিলো স্বাস্থ্য বিভাগ। এর আগের চারদিন সংক্রমণ হার ছিলো ৩২ শতাংশের ঘরে।
৩০শে জানুয়ারি সংক্রমণের হার কিছুটা কমলেও পরদিন ৩১শে জানুয়ারি আবার বেড়ে ত্রিশ শতাংশে পৌঁছেছিলো।
যদিও এরপর থেকে সংক্রমণের হার ক্রমাগত কমতে থাকে এবং ৮ই ফেব্রুয়ারি তা বিশ শতাংশে নেমে আসে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সংক্রমণ হার ছিলো ১৭ শতাংশ।
অন্যদিকে গত ৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ৮ই ফেব্রুয়ারি এবং সেদিন ৪৩ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিলো স্বাস্থ্য বিভাগ।
মূলত ত্রিশে জানুয়ারির পর মৃত্যুর সংখ্যা দৈনিক ৩০ জন বা এর ওপরে ওঠে। সেদিন থেকে এ পর্যন্ত মাত্র একদিন ৬ই ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয়েছিলো ২৯ জনের।এবারের আক্রান্তদের ৮০ভাগই অমিক্রন থেকে
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট জানিয়েছে এবার জানুয়ারি মাসে যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তাদের ৮০ ভাগের শরীরে অমিক্রন আর ২০ভাগের শরীরে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের লক্ষণ পাওয়া গেছে।
পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১শে জানুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ করা নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং (জিন নকশা উন্মোচন) করে প্রতিষ্ঠানটি এ তথ্য প্রকাশ করেছে গত বুধবার।
সংস্থাটি বলছে অমিক্রন এক সঙ্গে অনেক মানুষকে আক্রান্ত করে, যদিও এর ধরণকে মৃদু মনে করে অনেকে এটিকে অবহেলা করছেন।
স্বামীর কাজের সুবাধে ঢাকার বাইরে থাকেন সাফিয়া আক্তার। তার পরিবারের সবাই এক সাথে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। যদিও তিনি ও তার স্বামী টেস্ট করিয়েছিলেন।
“বাকীদের টেস্ট করানোর দরকারই মনে হয়নি। কারণ সবার একই লক্ষণ ছিলো। আমরা সতর্ক থেকেছি। পরে সবাই সুস্থ হয়েছি,” বলছিলেন তিনি।
আবার দ্বিতীয় বারের মতো করোনায় আক্রান্ত হওয়া শাহানা বেগম বলছেন, আগের দফায় তিনি ও তার স্বামী আক্রান্ত হলেও এবার তিনি একাই আক্রান্ত হয়েছেন।
“মাথা ব্যথা আর কাশির কারণে টেস্ট করেছিলাম। পজিটিভ রিপোর্ট আসলো। তবে ৩/৪দিন পরে সব ঠিক হলো। আর টেস্ট করাইনি,” বলছিলেন তিনি।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বিবিসিকে বলেছেন, ” আমরা অমিক্রনের যত মিউটেশন দেখছি সেটি আবার ততোই সংক্রমিত হচ্ছে। যখনই ভাইরাস ব্যাপক ট্রান্সমিশনে থাকে তখন ভাইরাসের আরো বেশি মিউটেশনের সম্ভাবনা থাকে। তখন হয়তো ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আবার শক্তিশালীও হতে পারে”।
তবে এটি সত্যি যে অমিক্রন আগের যেকোনো ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক হলেও, রোগীকে আগের মতো কাবু করতে পারে না এবং এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি কিংবা মৃত্যুর হারও অনেক কমচূড়া কী পার হয়েছে বাংলাদেশে
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর ও সংস্থাটির উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল - তিন জনই একমত যে এ দফায় করোনার পিক বা চূড়া পার করেছে বাংলাদেশ।
আবু জামিল ফয়সাল বলছেন জানুয়ারির শেষ সপ্তাহেই পিক সময়টা পার হয়েছে এবং এরপর থেকে ইনফেকশন রেটও কমছে।
“শনাক্ত সংখ্যা ও সংক্রমণের হার কমছে। আরও কমবে। তবে মৃত্যু সংখ্যা কমতে কিছু সময় লাগবে। সংক্রমণ কমছে বলে আমরা যেন আপ্লুত নাই। কারণ সতর্ক না হলে এ বিপদ সামনে আরও বড় হয়ে আসতে পারে,” বলছিলেন তিনি।
ডাঃ মুশতাক হোসেন বলছেন এখন যারা মারা যাচ্ছে তারা ২/৩ সপ্তাহ আগেই আক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ এখন সংক্রমণ কম কিন্তু মৃত্যু বেশি হচ্ছে।
তিনি বলেন, “তবে মনে রাখতে হবে যে ঘুরে ফিরে নতুন নতুন ওয়েভ আসতে পারে। সেটি পুরনো ভাইরাস দিয়েও হতে পারে আবার নতুন ভ্যারিয়েন্ট দিয়েও হতে পারে। কারণ মিউটেশন হয়ে কখন কোন ভ্যারিয়েন্ট কেমন হয় তাতো আমাদের জানা নেই।”।