শুক্রবার, ৭ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় » বাংলাদেশে নির্বাচনী পঞ্চম ধাপেও সহিংসতা, শান্তিপূর্ণ কবে দেখব আমরা?
বাংলাদেশে নির্বাচনী পঞ্চম ধাপেও সহিংসতা, শান্তিপূর্ণ কবে দেখব আমরা?
ড.আরিফুর রহমানঃ বাংলাদেশে পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বুধবার। নির্বাচনি সহিংসতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আমরা পৌনঃপুনিকভাবে নির্বাচনের সব অংশীজনের প্রতি আহ্বান জানালেও এ ধাপের নির্বাচনও সহিংসতামুক্ত থাকতে পারেনি।
ব্যাপক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল, জাল ভোটসহ নানা ধরনের অনিয়মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ নির্বাচন। বগুড়ার গাবতলীতে নির্বাচন চলাকালীন একজন নিহত হয়েছেন।
এছাড়া একটি কেন্দ্রে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থীর ফলাফল ঘোষণা নিয়ে দায়িত্বশীলরা গড়িমসি করলে বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা কেন্দ্র ভাঙচুরসহ বিজিবি, পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নারীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। আরও চার জেলায় নিহত হয়েছেন পাঁচজন।
চলমান ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা লক্ষ করা যাচ্ছে বেশি। বলা বাহুল্য, এ দুই প্রবণতাই গণতন্ত্রের সঙ্গে মানানসই নয়। পঞ্চম ধাপে ৪৮ জন চেয়ারম্যান, ৩৩ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য ও ১১২ জন সাধারণ সদস্য ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছেন।
আর নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, পাঁচ ধাপে সহিংসতায় মারা গেছেন ৮৫ জন। ওদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৪৪২টি। এ সবকিছুর প্রেক্ষাপটে একটি বড় প্রশ্ন উঠতেই পারে-আগামী দিনগুলোয় অনুষ্ঠেয় স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনসহ জাতীয় নির্বাচনেও কি সহিংসতার ঘটনা প্রত্যক্ষ করব আমরা?
আমরা এ প্রসঙ্গে বলতে চাই-যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়। আমরা মনে করি, নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণ করাটাই বড় কথা, জনগণের ভোটে কে জিতল আর কে হারল তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
গণতন্ত্রের মূল কথাই হলো, নির্বাচকমণ্ডলী তাদের বিবেচনায় যোগ্য প্রার্থীকে নির্বিঘ্নে ভোট দেবে এবং এর ফলাফল নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবাইকে মেনে নিতে হবে। পরিতাপের বিষয়, নির্বাচনে যে কোনো প্রকারে নির্বাচিত হওয়ার প্রবণতা দিনদিন প্রকট হচ্ছে।
আর এ প্রবণতার ফলে প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। আমরা আশা করব, আগামী নির্বাচগুলো সহিংসতামুক্ত অবস্থায় অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায়ও জড়াবে না কেউ।
এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সদা সতর্কাবস্থায় থাকতে হবে, যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে সহিংসতার সূত্রপাত না হয়।
আমরা মনে করি, যে কোনো নির্বাচন নির্বিঘ্ন ও সহিংসতামুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচকমণ্ডলী তথা ভোটার শ্রেণির ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি গণতান্ত্রিক চেতনায় ভোট প্রদানে অংশ নেয়, তাহলেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে।