শিরোনাম:
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১
BBC24 News
শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | শিরোনাম | সাবলিড » চীন-ভারত সীমান্ত নিয়ে সংঘাতের শঙ্কা
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | শিরোনাম | সাবলিড » চীন-ভারত সীমান্ত নিয়ে সংঘাতের শঙ্কা
৯১৪ বার পঠিত
শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

চীন-ভারত সীমান্ত নিয়ে সংঘাতের শঙ্কা

---বিবিসি২৪নিউজ,কুটনৈতিক প্রতিবেদক ঢাকাঃ চীন-ভারত যেকোনো সম্পর্কের জন্য সবার প্রথমে প্রয়োজন আস্থা ও বিশ্বাস। কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০ বছর পূর্ণ হলেও কখনোই তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখন যে সার্বিক পরিস্থিতি, তাতে অদূর ভবিষ্যতে তার কোনো সম্ভাবনাও দেখেন না পর্যবেক্ষকেরা। যদিও এশিয়ার এই দুই বৃহৎ শক্তির মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক মোটের ওপর মন্দ নয়।

এ লেখায় ২০২১ সালে ঘটে যাওয়া দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের দিকগুলো তুলে ধরব।ভারতকে বলা হয় বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। এশিয়া মহাদেশের বিবেচনায় তাদের সামরিক বাহিনীও যথেষ্ট শক্তিশালী। কিন্তু চীনের সঙ্গে তুলনা করতে বসলে ছবিটা একটু অন্য রকম দেখায়। ১৯৯০ সালের কাছাকাছি সময়ে অর্থনীতির আয়তন এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ের ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছিল ভারত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে চীন যতটা এগিয়েছে, ভারত ততটা পারেনি। এখন চীনের অর্থনীতির আয়তন ভারতের পাঁচ গুণ, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে তাদের ব্যয় ভারতের চার গুণ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ভারত মহাসাগরে নৌশক্তিতে অনেক এগিয়েছে, যা প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় বেইজিংয়ের অবস্থানকে সুসংহত করেছে।

সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে, প্রথমে এশিয়া এবং পরে গোটা বিশ্বে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারের প্রশ্নে সি চিন পিংয়ের চীন অনেক বেশি আগ্রাসী, দৃঢ়সংকল্প।ভারত ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের আলোচনায় গেলে সবার আগে আসবে সীমান্ত সমস্যা। ৩ হাজার ৪৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার (এলএসি) সুনির্দিষ্ট চেহারা আজও দিতে পারেনি দেশ দুটি। এলএসি নিয়ে দুই দেশের চিন্তায় বিস্তর পার্থক্যও রয়েছে।

১৯৬০–এর দশকের শুরুতে তিব্বত দখল করার পর ভারতের বর্তমান অরুণাচল প্রদেশ ও ‘আকসাই চীন’কে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত এলাকা বলে দাবি করে চীন। এভাবে যে সীমান্ত সমস্যার শুরু হয়, তা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের সূচনা করে। ১৯৬২ সালের ওই যুদ্ধে চীন জয়ী হয়ে একতরফা যুদ্ধবিরতি জারি করে, আকসাই চীন দখলে রাখে কিন্তু অরুণাচল প্রদেশ ভারতকে ফিরিয়ে দেয়। যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য ভারতকে সমর্থন দেয়। অন্যদিকে পাকিস্তান চীনের সঙ্গে মৈত্রী বাড়াতে সচেষ্ট হয়।

সীমান্তে উত্তেজনার পথ ধরেই ২০১৭ সালে ভুটানের ডোকলাম মালভূমিতে ভারত ও চীনা সেনার সংঘর্ষ হয়।

২০২০ সালের ১৫ জুন ভারত-নিয়ন্ত্রিত পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারতের একটি সড়ক নির্মাণকে কেন্দ্র করে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের হাতাহাতি যুদ্ধে ২০ ভারতীয় জওয়ান প্রাণ হারান। চীনের তরফে মাত্র একজন সেনার প্রাণহানির কথা কবুল করা হয়। শুধু গালওয়ান নয়, অচলাবস্থা তৈরি হয় লাদাখের গালওয়ান, প্যাংগং লেকের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্ত, গোগরা, ডেপস্যাং, হটস্প্রিং—মোট ছয়টি এলাকায়। পূর্ব লাদাখের গোটা ঘটনা ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর দুটি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে তলানিতে নামিয়ে আনে। আর জোরালো হয়ে ওঠে ভারতে জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগ। ডাক ওঠে চীনা পণ্য বর্জনের। কিছু টেলিভিশন চ্যানেলের উসকানি, বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্কহীন কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কর্কশ চিৎকার পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তোলে।গত দেড় বছরে উভয় দেশের সেনারা কমান্ডার পর্যায়ে অন্তত ১২টি বৈঠক করেছেন। মধ্য জুলাইয়ে (২০২১) তাজিকিস্তানে সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলনে বৈঠক হয়েছে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও ওয়াং ইর মধ্যে। এতে ডেপস্যাং, হটস্প্রিং ছাড়া বাকি এলাকাগুলোতে উত্তেজনা হ্রাস পেয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। সীমান্তে উভয় দেশই সৈন্য সরিয়ে নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ভারত সীমান্তে বিপুল পরিমাণ জমির দাবি পরিত্যাগ করেছে বলে আলোচনা আছে। অপর দিকে বাস্তবে সীমান্তে উত্তেজনা কমেনি মোটেও।

গালওয়ান উপত্যকার ঘটনায় চীনের মূলত উদ্বেগ ছিল ভারতের বাজার হারানোর শঙ্কা নিয়ে, অন্য কোনো বিষয়ে না। ভারত ওই সময় বেশ কিছু চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে। প্রসঙ্গত, ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলি সংস্থা বিএসএনএল এবং এমটিএনএল বিপুল পরিমাণ চীনা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে। বিএসএনএলে দুই চীনা সংস্থা জেডটিই ও হুয়েইয়ের যন্ত্রাংশের অংশীদারি যথাক্রমে ৪৪ এবং ৯ শতাংশ। রিলায়েন্স, আইডিয়াসহ বিভিন্ন বেসরকারি মোবাইল পরিষেবা সংস্থাও চীনা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনা যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের দিকে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ অবস্থায় ভারতে ‘জাতীয়তাবাদের বিস্তার’ ও রাজনৈতিক সরকারের ‘শক্ত অবস্থানের’ প্রেক্ষাপটে চীনের তরফে বিকল্প বাজার খোঁজার বিষয়েও আলোচনা হয়েছিল।

তবে সবকিছুই কি ছিল অভিনয়! সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালেই যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে আবার ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী দেশ হিসেবে উঠে আসে চীন। সীমান্ত বিরোধ পাশে ঠেলে রেখে চীনের সঙ্গে প্রায় ৭ হাজার ৭৭০ কোটি ডলারের বাণিজ্যিক লেনদেন হয় ভারতের, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৫ লক্ষ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। মুখে যতই চাপান-উতোর থাকুক, ঘুড়ির মাঞ্জা থেকে দীপাবলির আলো, সবকিছুর জন্যই ভারতের সহায় প্রতিবেশী চীন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাণিজ্য ক্ষেত্রে দুই দেশের এই পারস্পরিক নির্ভরশীলতা শিগগিরই মিলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।রাজীব গান্ধীর সফর ও সম্পর্কের ভিত্তি
১৯৮৮ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী চীন সফর করেছিলেন। সেটা ছিল ৩৪ বছর পর প্রথম কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর। রাজীব গান্ধী চীনে গিয়েছিলেন পূর্বাঞ্চলে সামদোরোং ছউতে দীর্ঘমেয়াদি উত্তেজনার পর এবং অরুণাচল প্রদেশকে রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করার প্রেক্ষাপটে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের বিদেশ এবং প্রতিরক্ষা নীতিসংক্রান্ত পরামর্শদাতা হিসেবে ওই সফরে সঙ্গী হয়েছিলেন রণেন সেন।

ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রখ্যাত এই কূটনীতিক বলেন, সীমান্তে পাকাপাকি সমাধানের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। দুই দেশ একমত হয়েছিল, পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সুষ্ঠু, যুক্তিপূর্ণ এবং দুই তরফের কাছেই গ্রহণযোগ্য সমাধানসূত্র খোঁজা হবে। যত দিন না চূড়ান্ত সূত্র পাওয়া যাবে, তত দিন সীমান্তে শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখতে ব্যবস্থা ও প্রকরণ তৈরি করা হবে। সব শেষে বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় আদান–প্রদানকে বাড়ানো হবে। সেগুলো যাতে সীমান্তের জটে আটকে না থাকে, সেটাও নিশ্চিত করা হবে। এই পরের দুটি ট্র্যাকে যথেষ্ট অগ্রগতি হলেও প্রথম ট্র্যাকটিতে বলার মতো কোনো কিছু হলো না।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ‘চীনকে ঠেকাতে’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কোয়াড্রিল্যাটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ বা কোয়াড তৈরি হয়েছে। অপর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক যতই গাড্ডায় হোক, ভারতের ‘মিত্র’ রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ‘শত্রু’ চীনের কৌশলগত সম্পর্ক শক্তিশালী হচ্ছে।
রণেন সেন মনে করেন, কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের আরও স্পষ্টবাদী হওয়া উচিত। তাঁর কথা, অন্য দেশগুলোর কাছ থেকে সুনিশ্চিত প্রতিশ্রুতি এবং সুস্পষ্ট অবস্থান দাবি করব, অথচ নিজেদের অবস্থান, কৌশলগত অধিকার অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে ধোঁয়াশা রেখে দেব—এমনটা হলে চ্যালেঞ্জ বেড়েই যায়। (৬ জুলাই ২০২০)।

সাম্প্রতিক উত্তেজনাকর বিষয়গুলো
দুই দেশের সম্পর্কের এই অবস্থার মধ্যেই চীন নয়া স্থল সীমান্ত আইন করেছে, যা গত ২৩ অক্টোবর ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। সরকারি সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার ভাষ্য অনুযায়ী, চীনের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার উদ্দেশ্যে আগামী ১ জানুয়ারি (২০২২) থেকে ওই নতুন আইন কার্যকর হবে।
নয়া আইন অনুযায়ী, চীনের স্থল সীমান্তের নিরাপত্তার পক্ষে ক্ষতিকর এমন কোনো পদক্ষেপের আঁচ পেলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতের পথে হাঁটবে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পরিকাঠামো, সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই আইনে।
এই আইন নিয়ে আপত্তি জানিয়ে নয়াদিল্লি বলেছে, নয়া আইন প্রণয়নের বিষয়ে চীনের একতরফা সিদ্ধান্ত বর্তমান দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা সীমান্তসংক্রান্ত বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কারণ।

অপর দিকে জাতীয়তাবাদী আবেগ কেবল ভারত দেখাচ্ছে না। চীনও কম যায় না। লাদাখের ঘটনা চীন তার স্কুলে পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করেছে। দেশকে রক্ষা করতে যেভাবে চীনা সেনা ও অফিসাররা সীমান্তে প্রতিনিয়ত লড়ে চলেছেন, তা স্কুলের ছেলেমেয়েদেরও পড়ানো হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম গড়ে ওঠে।

ভারতের সুড়ঙ্গ, চীনের বুলেট ট্রেন
শীতে বরফ জমে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে লাদাখের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন ভরসা কেবল আকাশপথ। এ অবস্থায় লাদাখ সীমান্তে চীনা সেনার বছরভর উপস্থিতি মোকাবিলায় কাশ্মীরের শ্রীনগর ও লাদাখের মধ্যে সারা বছর চালু থাকে এমন একটি সুড়ঙ্গের দাবি ভারতবাসীর ছিল দীর্ঘদিন ধরেই।

এ প্রেক্ষাপটে কাশ্মীরের সোনমার্গ থেকে লাদাখের মিনিমার্গ পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১ হাজার ৫৭৮ ফুট উঁচুতে ১৪ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বিমুখী সুড়ঙ্গ তৈরির উদ্যোগ নেয় ভারত সরকার ২০১৮ সালে। এ কাজকে দেখা হচ্ছে নির্মাণ খাতের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে। ‘জোজি লা’ নামে এই সুড়ঙ্গ চালু হলে বছরের যেকোনো সময়ে রসদ ও সমর-সরঞ্জামবাহী গাড়ি, এমনকি ট্যাংকও পৌঁছে যাবে লাদাখ সীমান্তে। ২০২৫ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি সরকার ২০২৩ সালে, অর্থাৎ লোকসভা ভোটের আগেই তা শেষ করতে চাইছে, যাতে ভোটে এর কৃতিত্বের কথা তুলে ধরা যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হবে না। কারণ, তিন বছরে সুড়ঙ্গের কাজ শেষ হয়েছে মোটে সাড়ে চার শ মিটার!ভারত সুড়ঙ্গ নির্মাণে এগোতে না পারলেও চীন কিন্তু পিছিয়ে নেই। তিব্বতের রাজধানী লাসা থেকে অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তবর্তী নিনচি পর্যন্ত বুলেট ট্রেন চালু করেছে দেশটি গত জুলাই মাসে। এই রেলপথকে পুরোদস্তুর সেনা পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হবে। এর ফলে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) সীমান্তবর্তী ওই প্রত্যন্ত অঞ্চলে খুব সহজে পৌঁছে যেতে পারবে। ৪ হাজার ৫০০ মিটার উঁচু ওই অঞ্চলে বুলেট ট্রেনের মাধ্যমে প্রায় অর্ধেক সময়ে (সাড়ে তিন ঘণ্টা) গন্তব্যে পৌঁছাবে সেনা। এর মধ্যে সেনা পরিবহন শুরুও হয়ে গেছে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভারতের ওপরে চাপ বাড়াতেই এই কৌশল নিয়েছে চীন।

এ ছাড়া চীনা সেনারা পূর্ব লাদাখ সেক্টরের বিপরীতে আকসাই চীন এলাকায় নতুন রাস্তা তৈরি করছেন। এর ফলে তাঁরা দ্রুত ভারতের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে পৌঁছে যেতে পারবেন, এমন খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে অতি সম্প্রতি।
এক বছর ধরে ডোকলামের কাছে ভুটানের ভূখণ্ড জবরদখল করে নির্মাণকাজ চালাচ্ছে চীন। সীমান্ত লাগোয়া ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় এই সময়ের মধ্যে ৪টি গ্রাম গড়ে তুলেছে তারা। চীন ও ভুটানের বিতর্কিত ভূখণ্ডে চীনের এই জবরদখল ভারতের পক্ষে উদ্বেগজনক বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

সম্পর্কের তিনটি বিষয়
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখলে দুই দেশের সম্পর্কের এত অবিশ্বাসের কারণ হিসেবে গত দেড় দশকে ঘটে যাওয়া তিনটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। কার্নেগি ইন্ডিয়ায় গত বছরের ১০ মার্চ এ বিষয়ে তাঁর নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
এর প্রথমটি হলো ২০০৮ সালে চীন তার পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন এনে বিশ্বব্যাপী তার ভূমিকাকে বিস্তৃত করার নীতি গ্রহণ করে। এই পদক্ষেপ ভারতের ওপর কী প্রভাব ফেলবে বা ফেলতে পারে, তা বিবেচনায় নেয়নি চীন। এ অবস্থায় ভারত চীনের এই নয়া নীতিকে দেখেছে বিশ্বব্যাপী তাঁর স্বার্থে আঘাত হিসেবে।

দ্বিতীয়ত, ভারতে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে পূর্বতন সরকারগুলো চীন ভারতকে সম্পর্ককে গুরুত্ব দিত। কিন্তু মোদি এসে একদিকে যেমন এই সম্পর্ক বজায় রাখার কথা বলেছেন, অন্যদিকে গুরুত্ব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রকে, যা চীন ইতিবাচকভাবে নিতে পারেনি।

তৃতীয়ত, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের যৌথ নৌশক্তি বৃদ্ধির চেষ্টাও চীন ভালোভাবে নিতে পারেনি। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারত মহাসাগরে বিপুল আকারে শক্তি বৃদ্ধি করেছে চীন।

এ ছাড়া আঞ্চলিক রাজনীতিতেও ভারত একটু পিছিয়ে গেছে, বিদায়ী বছরে আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখলের প্রেক্ষাপটে। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী পাকিস্তান ও চীন তালেবান সরকারকে ‘সহযোগিতার নীতি’ গ্রহণ করে। অপর দিকে ভারত কিছুটা ভীত হয়ে পড়ে তাদের ভাষায় ‘সন্ত্রাসবাদ’ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায়। এমনকি নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে আফগানিস্তান নিয়ে ভারতের ডাকা বৈঠকে পাকিস্তান যোগ দেবে না আগেই বোঝা গিয়েছিল, অজুহাত তৈরি করে যোগ দেয়নি চীনও। চীনের যোগ দেওয়া ভারতের জন্য জরুরি ছিল। শেষ পর্যন্ত তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান আর রাশিয়াকে নিয়ে বৈঠক করতে হয়েছে ভারতকে।আলোচনার দরজা বন্ধ থাকবে?
১৯৮৮ সালে চীনের নেতা দেং জিয়াওপিং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে বলেছিলেন, একুশ শতককে এশিয়ার শতক করে তুলতে ভারত-চীন সহযোগিতা আবশ্যক একটি শর্ত।

দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মনে হয়, ভারতের চিন্তাজুড়ে যতটা চীন রয়েছে, চীনের চিন্তায় আবার ততটা ভারত নেই। তা না থাকলেও প্রাচীন সংস্কৃতির ধারক-বাহক এই দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপরেই গোটা এশিয়ার ঐক্য নির্ভর করছে। আর সন্দেহাতীতভাবে এই দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে যুক্ত রয়েছে একাধিক ‘তৃতীয় পক্ষ’। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, চীনের সঙ্গে পাকিস্তান আর ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, এই ‘সম্পর্কের’ বিষয়টি মেনে নিয়েই দুই দেশকে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। দুই দেশের রাজনৈতিক নেতাদের বিপুল প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে আসা মুক্ত আলোচনাই পারে অবিশ্বাস কমিয়ে পরস্পর আস্থা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি করতে।



আর্কাইভ

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক স্বাভাবিক দিকে অগ্রসর হচ্ছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
নতুন আইজিপি বাহারুল ও ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত
পারমাণবিক আশ্রয়কেন্দ্র বানাচ্ছে রাশিয়া!
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ
ইলন মাস্কের রকেট উৎক্ষেপণ দেখতে হাজির ট্রাম্প
লেবাননে নিহত দুই শতাধিক শিশু: ইউনিসেফ
মার্তিনেজের ধাঁধানো গোলে জিতল আর্জেন্টিনা
পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পরিধি বাড়ালেন পুতিন
বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ সফল হয়নি: হাসনাত
যুক্তরাষ্ট্র-ফিলিপাইন সামরিক গোয়েন্দা তথ্য চুক্তি স্বাক্ষর