রবিবার, ১০ অক্টোবর ২০২১
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » বাংলাদেশে পারমাণবিক চুল্লিপাত্র স্থাপনের উদ্বোধন করলেন- প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশে পারমাণবিক চুল্লিপাত্র স্থাপনের উদ্বোধন করলেন- প্রধানমন্ত্রী
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক ঢাকাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র পারমাণবিক চুল্লিপাত্র (রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল-আরএনপিপি) স্থাপন কাজের উদ্বোধন করেছেন। রোববার (১০ অক্টোবর) দুপুর পৌনে ১২টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এটি উদ্বোধন করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পারমাণবিক চুল্লিপাত্র বসানোর এই ঘটনা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর ফলে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই এগিয়ে যাবে। ওই কেন্দ্রের যে যন্ত্রে নিউক্লিয়ার ফুয়েল (পারমাণবিক জ্বালানি) ইউরেনিয়াম থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তার মূল কাঠামো হচ্ছে এই বিশেষ যন্ত্র, পরমাণু চুল্লি)। এটিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হৃদপিণ্ড বলা হয়।
এর আগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে রাশিয়ার সেরা কর্মকৌশল চর্চা, বহু বছরের অভিজ্ঞতা এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাকে কাজে লাগানো হয়েছে উল্লেখ করে রাশিয়ার পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ বলেন, বিদ্যুৎ ইউনিটের অ্যাকটিভ ও প্যাসিভ ব্যবস্থার অনন্য সংমিশ্রণ কেন্দ্রের নিরাপদ পরিচালনা নিশ্চিত করবে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পিত মাত্রার নিশ্চয়তা দেবে।
তিনি বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ শিল্পের উন্নয়ন কেবল বাংলাদেশে জ্বালানি সরবরাহের সমস্যার সমাধান করবে না, এই অঞ্চলের উন্নয়নে অবদান রাখবে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মানও বৃদ্ধি করবে।
লিখাচেভ আরও বলেন, রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে এই সহযোগিতা কৌশলগত। আমি এই মর্মে আত্মবিশ্বাসী যে বিদ্যুৎ প্রকৌশল এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে আরও অনেক প্রকল্প রয়েছে যা রাশিয়ান এবং বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞরা একসঙ্গে বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব জিয়াউল হাসান স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর একটি ভিডিওচিত্র পরিবেশিত হয়।
পারমাণবিক প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা-ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক অ্যানার্জি অ্যাসোসিয়েশন (আইএইএ) গাইড লাইন অনুযায়ী এবং সংস্থাটির কড়া নজরদারির মধ্যদিয়েই রূপপুর প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন।
সূত্র জানায়, ইউনিট-১ এর ভৌত কাঠামোর ভেতরে রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় সব ধরনের পারমাণবিক যন্ত্রাংশ স্থাপন সম্পন্ন হবে। এর ফলে এই ইউনিটের রিয়্যাক্টর ভবনের ভেতরের কাজ প্রায় শেষ হবে। ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।
রূপপুর প্রকল্পের রিয়্যাক্টরসহ যাবতীয় যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়েছে রাশিয়াতে। সেখানকার বিভিন্ন কারখানায় এই যন্ত্রগুলো তৈরি করে সমুদ্রপথে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। প্রথম ইউনিটের ভারী যন্ত্র ৪টি স্টিম জেনারেটর, প্রেসারাইজার, হাইড্রো একমোডেটর ইতোমধ্যেই রূপপুরে এসে পৌঁছেছে। এই ইউনিটের রিঅ্যাক্টর গত বছর অক্টোবরে রাশিয়া থেকে দেশে এসে পৌঁছায় এবং নভেস্বরের সেটি রূপপুরে নেওয়া হয়।
গত আগস্টে দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর এসেছে। এই ভারী যন্ত্রগুলো রাশিয়ার ভলগা নদী থেকে প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার সামুদ্রিক পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের মোংলা বন্দর দিয়ে রূপপুরের কাছে পদ্মায় এসে পৌঁছায়। এ রিয়্যাক্টর ভেসেলের ওজন ৩৩৩ দশমিক ৬ টন। এ রিঅ্যাক্টর বানাতে দুই বছরের বেশি সময় লাগে।
স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরের মধ্যে রূপপুর প্রকল্পই দেশের সবচেয়ে বড় এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে সর্বাধিক ব্যয়বহুল প্রকল্প। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও ১২০০ মেগাওয়াট অর্থাৎ মোট দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।