বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » প্রণব দাদা ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু : শেখ হাসিনা
প্রণব দাদা ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু : শেখ হাসিনা
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ছিলেন বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু। বাংলাদেশের জন্য প্রণব দাদার বুকে ছিল গভীর ভালোবাসা। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তার যে অবদান, আমরা তা কোনোদিন ভুলবো না।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) প্রণব মুখার্জি লিগ্যাসি ফাউন্ডেশনের (পিএমএলএফ) আয়োজিত স্মারক বক্তব্য অনুষ্ঠানে প্রচারিত ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা ছাড়াও এ অনুষ্ঠানে ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ধারণ করা ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হয়।
প্রণব মুখার্জির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রণব দাদাকে ছাড়া একটি বছর অতিবাহিত করা কঠিন ছিল। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একজন সত্যিকারের বন্ধু, ভারতীয় উপমহাদেশের একজন মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
মৃত্যুবার্ষিকীতে এ মহান ব্যক্তিত্বের স্মৃতির প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, যে সমর্থন বরাবর তিনি দিয়ে গেছেন, এ দেশের মানুষ তা কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করবে।
আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের গভীর শ্রদ্ধাবোধ ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রণব মুখার্জির মৃত্যু ভারতীয় উপমহাদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। তিনি আমাদের এ অঞ্চলের আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। আর আমরা তাকে স্মরণ করে যাবো বাংলাদেশের প্রতি তার সমর্থন আর ভালোবাসার জন্য।
প্রণব মুখার্জির বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসাধারণ প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্য তিনি সুপরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, ভারত সরকারের অর্থ, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর তিনি পরিচালনা করেছেন দক্ষতার সঙ্গে। তার অসাধারণ গুণাবলীই তাকে শেষ পর্যন্ত দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি করেছিল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর নির্বাসিত জীবনে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন জাতির পিতার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। সে সময় বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ের পাশে দাঁড়ান প্রণব মুখার্জি।
নির্বাসিত জীবনে সেসব দিনের কথা স্মতিচারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, প্রণব মুখোপাধ্যায় ও তার স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাদের সঙ্গে অনেক স্মৃতি রয়েছে আমার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুভ্রা মুখার্জী ছিলেন বাংলাদেশের মেয়ে। আমার জন্য, আমার বোন রেহানার জন্য তাদের ছিল গভীর স্নেহ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমাদের বাবা-মা ও পরিবারের আরো ১৮ জন নিহত হওয়ার পর ভারতে থাকার কঠিন দিনগুলোতে তারা আমাদের পাশে থেকেছেন অভিভাবকের মতো, পরিবারের বন্ধুর মতো।
শেখ হাসিনা বলেন, তার (প্রণব মুখার্জি) প্রয়াণ ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য, আমার পরিবারের জন্য এক বিরাট ক্ষতি। তার কথা, তার স্নেহের কথা আমার সবসময় মনে পড়বে।
প্রণব মুখার্জির স্মরণে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার আমন্ত্রণ জানানোয় ‘প্রণব মুখার্জি লিগ্যাসি ফাউন্ডেশন’, বিশেষ করে তার মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জিকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রণব মুখার্জি। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে সব মহলেই শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে প্রণব মুখার্জি ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারতরত্নে ভূষিত হয়েছিলেন।
গেল বছর বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান এবং এজন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে তার শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। চিকিৎসার এক পর্যায়ে তিনি গভীর কোমায় চলে যান। ২০২০ সালের ২১ আগস্ট মারা যান উপমহাদেশের প্রখ্যাত এ রাজনীতিবিদ।
২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট প্রণব মুখার্জি রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জি মারা যান। তার স্ত্রী রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী শুভ্রা মুখোপাধ্যায় ছিলেন বাংলাদেশের নড়াইলের মেয়ে। প্রণব মুখার্জি দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে।
প্রণব মুখার্জি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ২০১৩ সালে সস্ত্রীক বাংলাদেশে এসেছিলেন। সেই সফরে তিনি নড়াইলে তার শ্বশুরালয়ও ঘুরে গিয়েছিলেন।
১৯৭১ সালে প্রণব মুখার্জি পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভার সদস্য ছিলেন। তখন কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখার্জি মুক্তিকামী বাঙালির পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।২০১৩ সালের ৪ মার্চ বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধু হিসেবে প্রণব মুখার্জিকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননায়’ ভূষিত করে।