বুধবার, ২৩ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » ভারতের নতুন ভ্যারিয়ান্ট ‘ডেল্টা প্লাস’ মারাত্মক হতে পারে?
ভারতের নতুন ভ্যারিয়ান্ট ‘ডেল্টা প্লাস’ মারাত্মক হতে পারে?
বিবিসি২৪নিউজ,স্বাস্থ্য ডেস্কঃ ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়ান্ট, যেটিকে এতদিন ‘ডেল্টা’ ভ্যারিয়ান্ট বলা হচ্ছিল, দ্বিতীয় দফায় পরিবর্তিত হয়েছে। ইউরোপে প্রথমবার শনাক্ত হওয়া এই ভ্যারিয়ান্টকে ‘ডেল্টা প্লাস’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
কয়েকটি গবেষণার তথ্য তথাকথিত ‘ডেল্টা প্লাস’ ভ্যারিয়ান্ট আগের ভ্যারিয়ান্টগুলোর চেয়ে সহজে ছড়ায়, ফুসফুসের কোষের সাথে অপেক্ষাকৃত সহজে যুক্ত হয় এবং করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবহৃত টিকা যে মূলনীতি অনুসারে তৈরি করা হয় - ‘মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপি’ - তার বিরুদ্ধে কার্যকর।
নতুন এই ভ্যারিয়ান্টটি ভারতে শনাক্ত হওয়া ‘ডেল্টা’ ভ্যারিয়ান্টের সাথে সম্পর্কিত। ভারতে দ্বিতীয় দফা করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পেছনে মূল কারণ মনে করা হয় ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টকে।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ভারতে প্রথমবার ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়ান্ট পাওয়া যায় এ বছরের এপ্রিল মাসে। তিনটি অঙ্গরাজ্যের ৬টি জেলায় এই ভ্যারিয়ান্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
ভারত ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন সহ ৯টি দেশে এই ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়ান্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট এরই মধ্যে বিশ্বের ৮০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভাইরাস সাধারণত সবসময়ই পরিবর্তিত হতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাস পরিবর্তিত হয়ে দুর্বল হয়ে যায়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবর্তিত ভাইরাস পুরনো ভাইরাসের চেয়ে শক্তিশালী ও বেশি সংক্রামক হয়ে দেখা দেয়, যেই পরিবর্তিত রূপটি অন্য ভ্যারিয়ান্টগুলোর তুলনায় বেশি মারাত্মক অসুস্থতা তৈরি করে।
ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়ান্টটিতে ‘কে৪১৭এন’ নামে একটি অতিরিক্ত মিউটেশন রয়েছে, যেটি দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে শনাক্ত হওয়া বেটা ও গামা ভ্যারিয়ান্টেও পাওয়া গেছে।তবে নতুন এই ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়ান্টকে এখনই ‘উদ্বেগের কারণ’ হিসেবে চিহ্নিত করার ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।
‘ডেল্টা প্লাস বেশি মারাত্মক -এমন ভাবার কারণ নেই’
‘ডেল্টা’র মত করোনাভাইরাসের ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়ান্টও কোভিড ভ্যাকসিন নেয়ার পর বা অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার পরও সংক্রমণ তৈরি করতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
শীর্ষস্থানীয় ভাইরোলজিস্টদের অনেকেই এটিকে এখনই এখনই দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে মানতে রাজি নন।
তারা মনে করেন, এই ভ্যারিয়ান্ট যে আগের ভ্যারিয়ান্টের চেয়ে বেশি সংক্রামক বা এর ফলে আরো গুরুতর অসুস্থতা তৈরি হতে পারে - এমন দাবির পক্ষে এখনও যথেষ্ট তথ্য নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিভাগের ভাইরোলজিস্ট জেরেমি কামিল বিবিসি’র সৌতিক বিশ্বাসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের চেয়ে নতুন ডেল্টা প্লাস বেশি মারাত্মক, এরকম চিন্তা করার কোনো কারণ এখনো নেই।”
“দুর্বল ইমিউনিটির মানুষ বা মহামারির শুরুর দিকে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের আবারো আক্রান্ত করার ক্ষেত্রে ডেল্টা প্লাস হয়তো ডেল্টার চেয়ে কিছুটা বেশি কার্যকর হবে, কিন্তু আমি এটি নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হতে চাই না।”
“কারণ বিশ্বের কোথাও এখনো এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের চেয়ে তথাকথিত ডেল্টা প্লাস বেশি মারাত্মক হতে পারে।”
অন্য বিশেষজ্ঞরা হালকাভাবে নিতে চাননা
অন্যদিকে অনেক বিশেষজ্ঞই ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়ান্টকে হালকাভাবে নেয়ার পক্ষপাতী নন।
দিল্লির ইনস্টিটিউট অব জিনোমিকস অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলোজির পরিচালক ডা অনুরাগ আগারওয়ালের মতে, “ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট থেকে তৈরি হওয়া সব ভ্যারিয়ান্টই দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।”
পূর্ববর্তী ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্তদের তুলনায় ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ
করোনাভাইরাসের সাধারণ উপসর্গের পাশাপাশি আরো কিছু বিশেষ উপসর্গের উপস্থিতি থাকে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের সংক্রমণের ক্ষেত্রে।
যেসব কারণে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট মারাত্মক
বিশেজ্ঞরা বলছেন ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের অন্যতম প্রধান উপসর্গ মাথা ব্যাথা। এর পাশাপাশি গলা ব্যাথা, সর্দি এবং জ্বরও থাকতে পারে।
তবে এই ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্ত হলে স্বাদ বা গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। পাশাপাশি কাশি হওয়ার সম্ভাবনাও বেশ কম।
যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞদের হিসেব অনুযায়ী, পূর্ববর্তী ভ্যারিয়ান্টগুলোর চেয়ে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট অন্তত ৬০% বেশি সংক্রামক।
এছাড়া পূর্ববর্তী ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্তদের তুলনায় ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ।