মঙ্গলবার, ১ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবার যেসব কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ
ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবার যেসব কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ইরানে চলতি মাসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য দেশটির দা গার্ডিয়ান কাউন্সিলের অনুমতি পেয়েছে সাত জন প্রার্থী এবং দেশ বিদেশে ইরানের নাগরিকদের জন্য এবারের নির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে বিশেষ কিছু কারণে।
চার বছর আগে হওয়া নির্বাচনের পর থেকে দেশটিতে কার্যত অনেক কিছুই বদলে গেছে।এখানে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো যেগুলোর কারণে এবারের নির্বাচনের দিতে দৃষ্টি থাকবে অনেকের:
ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ
২০১৭ সালের সর্বশেষ নির্বাচনের পর থেকে বেশ কিছু ঘটনা দেশটির রাজনীতিকেই পাল্টে দিয়েছে। এর মধ্যে আছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের রক্তক্ষয়ী দমন, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মীদের গ্রেফতার, রাজনৈতিক বন্দীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া, রেভ্যুলুশনারি গার্ড সদস্যদের ইউক্রেনের বিমান গুলি করে ভূপাতিত করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকট।
ইরানের সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হওয়া প্রতিক্রিয়ার উল্লেখযোগ্য প্রভাব থাকবে এবারের নির্বাচনে।সম্ভবত একটি বড় ধাক্কা হতে পারে অসন্তোষের কারণে ভোটারের কম উপস্থিতি।
যদিও এটি ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে ইরানের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় না বিশেষ করে গার্ডিয়ান কাউন্সিলের প্রার্থী বাছাইয়ের কারণে।
তারপরেও নিজেদের বৈধতার জন্যই ইরানের নেতাদের ব্যাপক ভোটার উপস্থিতির প্রয়োজন হবে।কিন্তু সেটিই এখন বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
সাম্প্রতিক দুটি জরিপ বলছে এভাবে ভোট দেয়ার হার হবে খুবই কম।
এর মধ্যে একটি হলো রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরান ব্রডকাস্টিংয়ের জরিপ।
তারা বলছে ভোটার উপস্থিতি হতে পারে ৫০ শতাংশেরও কম।
আর হার্ডলাইনার হিসেবে পরিচিত ফার্স নিউজ এজেন্সির জরিপে বলা হয়েছে ৫৩ শতাংশ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন এ নির্বাচনে।
কট্টরপন্থীদের ওপরই সব দৃষ্টি
১৯৯৭ সাল থেকেই মূলত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বিভক্ত হয়ে পড়েছে সংস্কারপন্থী ও কট্টরপন্থীদের মধ্যে।
কিন্তু গার্ডিয়ান কাউন্সিলের সাম্প্রতিক এক নির্দেশনায় কার্যত বেশিরভাগ সংস্কারপন্থী ও মধ্যপন্থী প্রার্থীদের এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত রেখেছে।
প্রার্থী হতে তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন এমন দশজন রাজনৈতিক নেতার মধ্যে কাউন্সিল অনুমতি দিয়েছে সাত জনকে।
এর মধ্যে মাত্র দু জন সংস্কারপন্থী বা মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত, তাদের আবার কম পরিচিত বলেই মনে করা হচ্ছে।
ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান ইব্রাহিম রাইসিকে এবারের সবচেয়ে শক্ত প্রার্থী বলে মনে করা হচ্ছে এবং কিছু জরিপে উঠে এসেছে যে কট্টরপন্থীদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে ফেভারিট।
কিছু পর্যবেক্ষকের ধারনা অন্য যাদের প্রার্থী হবার অনুমতি দেয়া হয়েছে তাদের অনুমতি দেয়ার লক্ষ্য হলো মিস্টার রাইসির প্রার্থিতাকে সহায়তা করা।
অর্থনীতি সংকট
ইরানের নির্বাচনে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে দেশটির অর্থনীতি এবং সব প্রার্থীর এজেন্ডাতেই তাই এটিই প্রধান বিষয়।
অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে এবারই সবচেয়ে বেশি সংকট মোকাবেলা করছে দেশটি।
নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এবং করোনা মহামারি দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করেছে এবং এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে।
এর মধ্যে ২০১৯ সালে সরকার একতরফাভাবে পেট্রোলের দাম বাড়ালে দেশটির অন্তত একশ শহরে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলো।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি এ সময় অন্তত তিনশ মানুষকে হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
এ ধরণের বিক্ষোভ আবারও দেখা দিতে পারে।
যদিও দেশটিতে কেউ মনে করেন যে রাস্তায় বিক্ষোভের মাধ্যমেই দেশটিতে বড় পরিবর্তন আসতে পারে আবার কেউ মনে করেন ব্যালটের মাধ্যমেই ধীরে ধীরে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরিবর্তন আসবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক
২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়ী হবার পর ইরানের সাথে কূটনৈতিক আলোচনা আবার শুরুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
যদিও দেশটির বেশির কট্টরপন্থীর মধ্যে এ আলোচনা নিয়ে তেমন কোন লক্ষ্য নেই যদিও সংস্কারপন্থী বা মধ্যপন্থীরা এ ধরণের আলোচনার পক্ষে।
সংস্কারপন্থীরা একইসাথে অর্থ পাচার বিরোধী সংস্থাগুলোতে যোগ দেয়া, আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ সৌদি আরবের সাথে আলোচনা এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রথাগত আগ্রাসন কমিয়ে আনাকে সমর্থন করেন।
এসব বিষয় পুরো অঞ্চলেই সংঘাত কমিয়ে এনে ইরানের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
তবে দেশটির পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করেন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি।
যারা এবারের নির্বাচন বয়কট করতে আগ্রহী তাদের যুক্তি হলো পরবর্তী প্রেসিডেন্ট যিনিই হোন না কেন তার সম্মতি ছাড়া কিছু পরিবর্তন করার ক্ষমতা তার কমই থাকবে।
এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্কও দেশটির এখনকার বাস্তবতায় অচিন্তনীয়।