বুধবার, ১৪ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » কঠোর নির্দেশনা মানাতে প্রশাসনের সক্ষমতা কতোটুকু?
কঠোর নির্দেশনা মানাতে প্রশাসনের সক্ষমতা কতোটুকু?
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকাঃ সাড়া দেশে ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে কঠোর লকডাউন। বলবৎ থাকবে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে কোথাও ‘লকডাউন’ বা ‘সাধারণ ছুটি’ শব্দ দুটি না থাকলেও সরকারি-বেসরকারি সব অফিস এমনকি ব্যাংকও বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। সরকারি ভাষায় একে বলা হয়েছে ‘চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ’। তবে সর্বসাধারণকে এ নির্দেশনা মানাবে কে- এ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
১২ এপ্রিল জারি করা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনের ‘ঞ’তে বলা হয়েছে, ‘সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে’।
‘ট’তে বলা হয়েছে, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।’ প্রশ্ন হচ্ছে- নির্দেশনা মানাতে জেলা প্রশাসনের সক্ষমতা কতোটুকু?
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, ‘প্রতি জেলার জেলা প্রশাসকরাই যাবতীয় প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী। মাঠপর্যায়ে তিনি সরকারের প্রতিনিধি। স্থানীয় সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশনের মেয়র, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের সমস্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন জেলা প্রশাসক। আদেশ বাস্তবায়নে যা ভালো মনে করবেন সেটাই করবেন। তারপরও প্রতিটি জেলায় এসব কাজ তদারকির জন্য একজন করে সিনিয়র সচিব বা সচিবকে যুক্ত করা হয়েছে। তিনি জেলা প্রশাসককে সহায়তা করবেন। কিছু যদি আওতার বাইরে চলে যায়, সেক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব সরাসরি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা অন্য যে কোনও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেবেন।’
গতবছরের লকডাউনে পাড়া-মহল্লায় র্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনীও মাঠে ছিল। এবার থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, ‘র্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনী থাকবে। পাশাপাশি বিজিবি বা সেনাবাহিনী যুক্ত হবে কিনা তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আলোচনা চলছে।’
এদিকে এক ভিডিওবার্তায় বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আট দিন বিধি-নিষেধ মানাতে মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বললেন, ‘সরকারের নির্দেশনা পেয়েছি। সেই মোতাবেক ইউএনও ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রাথমিক পরিকল্পনাও করেছি। ১৩ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা-উপজেলায় টহল জোরদার হবে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। টিমও গঠন করা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব স্যারের সঙ্গেও কথা বলেছি। আশা করছি কোনও সমস্যা হবে না।’
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই আট দিন দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে গণপরিবহন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সিকিউরিটিস অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন ও ব্যাংক। তবে জরুরি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ও ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। খোলা থাকবে শিল্প-কারখানাও।
এই সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। খোলা স্থানে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপণ্য কেনা-বেচা করা যাবে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সব সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ-নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর ও তৎসংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবেন।
এ ছাড়া সব ধরনের পরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল, বিমান) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবা এ আদেশের বাইরে থাকবে। শিল্প কারখানা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। অতি জরুরি প্রয়োজন (ওষুধ, নিত্যপণ্য, চিকিৎসা, দাফন ও সৎকার) ছাড়া কোনোভাবেই বাইরে যাওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড দেখিয়ে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।
খাবারের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রয় ও সরবরাহের জন্য খোলা রাখা যাবে। শপিংমল ও দোকানপাট বন্ধ থাকবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের বাজারে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত খোলা স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বোরো ধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষি শ্রমিক পরিবহনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমা ও তারাবির নামাজের জামাত বিষয়ে ধর্মমন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মানতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি), খাদ্য শষ্য ও খাদ্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা (কোভিড-১৯ এর টিকা প্রদান), বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দর, টেলিফোন, ইন্টারনেট সেবা, গণমাধ্যম, বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।