সোমবার, ২৯ মার্চ ২০২১
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশে তিন দিনের সহিংস সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেন?
বাংলাদেশে তিন দিনের সহিংস সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেন?
বিবিসি২৪নিউজ, এম ডি জালাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফিরেঃ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকে কেন্দ্র করে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম এলাকায় সংঘর্ষের শুরু হলেও বাংলাদেশে গত তিন দিনের সহিংস বিক্ষোভে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই তা সবচেয়ে ব্যাপক সহিংস রূপ পেয়েছে। যে ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা গেছে তার মধ্যে ৮ জনই এই জেলার। সেখানে গতকাল সারা শহরের বহু সরকারি দপ্তর, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ঠিক কি ঘটেছিল যার ফলে সেখানে এতটা সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হল? কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা । গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে যে ধরনে সহিংসতা দেখা গেছে তাকে যুদ্ধক্ষেত্রের সাথে তুলনা করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা, তারা বলছিলেন, “হামলাকারীরা এমন একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছিল যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বাসাবাড়ির লোকজন সবাই মারাত্মক আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। যে ধরনের হামলা হয়েছে অন্য অনেক জেলা শহরের মতো একটি সড়ককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর। সড়কটির নাম টি-এ রোড। শহরের যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তার সব কিছুই এই সড়কের দুই ধারে অবস্থিত। স্থানীয় প্রশাসন, সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে
জানা গেছে টি-এ রোডের দুই ধারে জেলা সদরের পৌর সভা, শিল্পকলা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, পৌর মিলনায়তন, ভূমি অফিস, প্রেস ক্লাব ছাড়াও আরও বেশ কিছু সরকারি ভবনে একে একে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। বেলা এগারোটা থেকে চলতে থাকে তাণ্ডব। একটি ট্রেনে হামলা করা হয় যেটি এর আগের দিন পুড়িয়ে দেয়া রেল স্টেশন পার হচ্ছিল। আর এক প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এক আইনজীবী বর্ণনা করছিলেন শহরের কালী মন্দিরে তিনি কি দেখেছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলামের সমর্থকরা। কালীমন্দিরের দিকে গিয়ে দেখি সেখানে লুটপাট চলছে। লুটপাট বলতে মন্দিরের মূর্তিগুলো ভাঙা হচ্ছে আর দান বাক্সগুলো খোলা হচ্ছে এবং কোথাও কোন স্থানে পুলিশ ছিল না। তারা থানাতেই অবস্থান করছিল। দুইটা জল কামান ছিল সেই দুটো পুড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এগুলো রক্ষায় তাদের কোন সেলফ ডিফেন্স ছিল না। এই সবকিছুর ভিডিও আছে আমাদের কাছে।” রবিবারের সহিংসতার সূত্রপাত ঠিক কি? জেলার একশ বছরের পুরনো জামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসায় শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে হামলা করা হয়েছে বলে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিকরাও এরকম একটি হামলার কথা উল্লেখ করে বলছেন, এতে সেখানে আরও বেশি ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একশ বছরের পুরনো একটা মাদ্রাসা আছে জামিয়া ইসলামি ইউনুসিয়া মাদ্রাসা। সেখানে যখন ছাত্রলীগের মিছিল থেকে আক্রমণ করা হয়, তখন এই কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাধারণ মানুষ ক্ষেপে যায়। তবে এত ঢালাও অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের দায় অস্বীকার করেছেন তিনি। হেফাজতে ইসলামের মূল কর্মসূচী ছিল মোদীর আগমন নিয়ে। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। ভাঙচুরের জন্য হেফাজতে ইসলাম জড়িত না। যারা আগের দিন মাদ্রাসায় আক্রমণ করেছে তারাই আমাদের নামে বদনাম ছড়ানোর জন্য এসব হামলা চালিয়েছে।
সংসদ সদস্যের যা বক্তব্য শহরে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুরের দায় যেমন নিচ্ছে না হেফাজতে ইসলাম, তেমনি যে সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে সংগঠনটি অভিযোগ তুলেছে তিনিও পাল্টা অভিযোগ করছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের অধীনে রয়েছে সদর এলাকা। এই আসনের সংসদ সদস্য ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরীর নেতৃত্বেই শনিবার সন্ধ্যার মিছিলটি বের হয়েছিল। তিনি বলছেন, সেই মিছিল মাদ্রাসা এলাকায় কোনমতেই প্রবেশ করেনি। পুলিশ হেফাজতে ইসলামের মূল কর্মসূচী ছিল মোদীর আগমন নিয়ে। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে।ভাঙচুরের জন্য হেফাজতে ইসলাম জড়িত না। যারা আগের দিন মাদ্রাসায় আক্রমণ করেছে তারাই আমাদের নামে বদনাম ছড়ানোর জন্য এসব হামলা চালিয়েছে।” সংসদ সদস্যের যা বক্তব্য শহরে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুরের দায় যেমন নিচ্ছে না হেফাজতে ইসলাম, তেমনি যে সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে সংগঠনটি অভিযোগ তুলেছে তিনিও পাল্টা অভিযোগ করছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের অধীনে রয়েছে সদর এলাকা। এই আসনের সংসদ সদস্য ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরীর নেতৃত্বেই শনিবার সন্ধ্যার মিছিলটি বের হয়েছিল। তিনি বলছেন, সেই মিছিল মাদ্রাসা এলাকায় কোনমতেই প্রবেশ করেনি। “তাদের এসব অভিযোগের আদৌ কোন সতত্যা নেই। মিছিল একটা হয়েছিল। আগের দিন বঙ্গবন্ধুর মূর্যাল ভেঙেছে, প্রশাসন ও পুলিশের কার্যালয়ে হামলা করেছে, রেল স্টেশন পুড়িয়েছে, এসব কারণে আমরা একটা প্রতিবাদ মিছিল করেছিলাম। এই মাদ্রাসার এলাকায় প্রবেশ করেনি। আমি একেবারে চ্যালেঞ্জ করে বলছি। তাদেরকে (হেফাজতে ইসলাম) আমি বলবো মিথ্যার আশ্রয় যেন তারা না নেন।” তবে তিনি বলছেন, “উচ্ছৃঙ্খল কোন একটি গোষ্ঠী যাদের দুরভিসন্ধি আছে, তারা হয়ত বা মিছিলের পেছন থেকে ঢুকে থাকতে পারে। তবে সেটা আমার জানার কথা না কারণ আমি শরীর খারাপ থাকায় মিছিল শেষ হওয়ার আগেই বের হয়ে যাই।”
ঠিক গতকালই বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, হামলার ধরন দেখে মনে হয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা এই পরিস্থিতির সাথে সম্পৃক্ত। যাতে ইন্ধন যোগাচ্ছে জামায়াত শিবির। এত ধ্বংসযজ্ঞ তাহলে কোন তৃতীয় পক্ষ চালাল তার জবাব মিলছে না কারো কাছেই। সেনিয়ে কথা বলার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারো কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে বেশ হামলার শিকার হয়েছে জেলার পুলিশ। গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয়ে অগ্নি সংযোগ করা হয়। পক্ষ থেকে তাদের সাথেও যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছে দিনভর। কিন্তু তাদের তরফ থেকেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।