সোমবার, ২৯ মার্চ ২০২১
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » মোজাম্বিকে জঙ্গি হামলায়, শতাধিক মানুষের হতাহতের আশংকা
মোজাম্বিকে জঙ্গি হামলায়, শতাধিক মানুষের হতাহতের আশংকা
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ মোজাম্বিকের উত্তরাঞ্চলীয় শহর পালমাতে জঙ্গিদের আক্রমণে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছে বলে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন।
অবরুদ্ধ করে রাখা একটি হোটেল থেকে পালানোর চেষ্টাকালেই ৭ জন নিহত হয়েছে, বলেছেন ওমর সারাঙ্গা নামের ওই মুখপাত্র।
শহরটিতে থাকা দেশি-বিদেশি কয়েকশ লোককে উদ্ধারেরও খবর মিলেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
ইসলামপন্থি জঙ্গিরা বুধবার থেকেই ওই এলাকায় আক্রমণ শুরু করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা উদ্ধারকারী নৌকার অপেক্ষায় সমুদ্রতীরে লুকিয়ে থাকার সময় ছড়ানো ছিটানো একাধিক মাথাবিহীন দেহ দেখেছেন।
আতঙ্কিত মানুষ শহরটি থেকে যে কোনো উপায়ে পালানোর চেষ্টা করছে; মেরিন ওয়েবসাইটগুলোতে পালমার আশপাশ এবং দক্ষিণের বন্দরনগরী পেমবায় মালবাহী নৌযান, যাত্রীবাহী জাহাজ, টাগবোট এবং নানান ধরনের নৌকাসহ একঝাঁক নৌযান দেখা যাচ্ছে।
এক ঠিকাদার জানিয়েছেন, হোটেল থেকে গাড়িবহরে পালানো অনেকে শুক্রবার রাতে সমুদ্রতীরে লুকিয়ে ছিলেন, শনিবার সকালে নৌকায় করে তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
উদ্ধারের অপেক্ষায় থাকা অন্যদের জন্য নৌযানগুলো রোববারও যাবে, বলেছেন তিনি।
পালমার বাসিন্দা এবং সেখানে যারা কাজ করেন তারাই এই উদ্ধার তৎপরতার সমন্বয় করছেন বলেও জানান এ ঠিকাদার।
“স্থানীয় সরবরাহকারী এবং কোম্পানি, এরাই পুরো উদ্ধার অভিযানের নায়ক। সমুদ্রতীরে পৌঁছানোর ব্যাপারেও তারাই সব সমন্বয় করেছেন, তারাই নৌকায় তুলে নিরাপদ এলাকায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন। বড় কোম্পানি বা দেশগুলোর সহযোগিতা কোথায়?,” প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি।
মেরিল নক্স নামের এক নারী জানিয়েছেন, তার স্বামী গ্রেগরি ও এক ছেলে পালমা থেকে পালাতে পারলেও অন্য ছেলে আদ্রিয়ান নেল পালানোর চেষ্টাকালে নিহত হয়।
“সেনাবাহিনী তাদের সুরক্ষা দেয়নি; এটা অনেকটা এরকম ছিল যে, ‘তুমি তোমার জান নিয়ে পালাও’। চাইলে এ পরিস্থিতি এড়ানো যেত, তাহলে হয়তো আমার সন্তানও বেঁচে থাকতো,” বলেছেন মেরিল।
উদ্ধার অভিযান সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, পালমা থেকে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষকে নিয়ে একটি নৌকা রোববার স্থানীয় সময় বিকালে বন্দরনগরী পেমবায় পৌঁছেছে। পালমা থেকে পেমবার দূরত্ব প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার।
আরও কয়েকটি ছোট নৌকা পালমা থেকে লোকজনকে নিয়ে পেমবার পথে রয়েছে; এ নৌকাগুলো রোববার রাতে বা সোমবার সকালে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
মোজাম্বিকের কাবো ডেলগাডো প্রদেশের ৭৫ হাজার বাসিন্দা অধ্যুষিত শহর পালমাতে জঙ্গি হামলায় নিহতের সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অনেকে এখনও নিখোঁজ।
শহরটির পাশাপাশি সমুদ্রতীরগুলোতে ‘মাথাসহ এবং মাথাবিহীন’ অসংখ্য লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বলে জানিয়েছেন ওই এলাকায় মোজাম্বিক পুলিশের হয়ে কাজ করা নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ডাইক অ্যাডভাইসরি গ্রুপের স্বত্বাধিকারী কর্নেল লিওনেল ডাইক।
বিবিসি জানিয়েছে, সশস্ত্র জঙ্গিরা পালমার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে বেশ কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হলেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে ওই দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
বুধবার হামলার শুরুতে জঙ্গিরা দোকানপাট, ব্যাংক ও সামরিক বাহিনীর ব্যারাক লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছিল।
দুই পক্ষের সংঘর্ষের কারণে শত শত মানুষ কাছাকাছি গ্রাম, জঙ্গল ও ম্যানগ্রোভ বনে পালিয়ে যায়।
পালমার কাছেই ফরাসী জ্বালানি কোম্পানি টোটাল একটি গ্যাস প্রকল্প চালাচ্ছে। কোম্পানিটির শতাধিক কর্মী ও বেসামরিক অনেক মানুষই জঙ্গি হামলার মুখে আমারুলা পালমা হোটেলে আশ্রয় নেন। তাদের অনেকে শুক্রবার কাছাকাছি একটি সমুদ্রতীরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি গাড়ির একটি বহরে হোটেলটি থেকে পালানোরও চেষ্টা করে।
পরে কয়েকটি হেলিকপ্টারে অন্তত ২০ জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হলেও বাকিরা হোটেলের বাইরে অতর্কিত হামলার মুখে পড়েন।
হামলার সময় হোটেলটিতে থাকা এক ব্রিটিশ নাগরিকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে আরএ ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি কোম্পানি।
তারা জানিয়েছে, শুক্রবার বিকালে সর্বশেষ ওই ব্রিটিশ কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল তাদের। আরএ ইন্টারন্যাশনালের স্থানীয় ৭ কর্মী নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে পেরেছে বলেও নিশ্চিত করেছে তারা।
যুক্তরাজ্যের সরকার ওই এলাকায় থাকা ব্রিটিশ নাগরিকদের সহযোগিতা দিতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে জানিয়েছেন পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট ফর আফ্রিকা জেমস ডুডরিজ।
“যুক্তরাজ্য কাবো ডেলগাডোতে ভয়াবহ সহিংসতার নিন্দা জানাচ্ছে। এটি অবশ্যই বন্ধ হতে হবে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মোজাম্বিকের জনগণের পাশেই আছি আমরা,” বলেছেন তিনি।