শিরোনাম:
ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
BBC24 News
শনিবার, ৬ মার্চ ২০২১
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » কার্টুনিস্ট কবির কিশোরকে নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে ভয়াবহ নির্যাতন
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » কার্টুনিস্ট কবির কিশোরকে নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে ভয়াবহ নির্যাতন
১১৮৯ বার পঠিত
শনিবার, ৬ মার্চ ২০২১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

কার্টুনিস্ট কবির কিশোরকে নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে ভয়াবহ নির্যাতন

---বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকাঃ বাংলাদেশে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক থেকে জামিন-প্রাপ্ত কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে থাকার সময় তার ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন।

ঢাকার দ্যা ডেইলি স্টার পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, কীভাবে কোন ওয়ারেন্ট কিংবা কোন পরিচয়পত্র না দেখিয়ে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং কীভাবে গোপন বন্দিশালায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এরপর তাকে কোন জামিন না দিয়ে ১০ মাস কারাগারে আটক রাখা হয়।

এই নির্যাতনের জেরে তার কান পর্দা ফেটে যায়। তার দেহে মারাত্মক আঘাতের চিহ্নও তিনি ডেইলি স্টারের সাংবাদিককে দেখিয়েছেন।

তার আটকের বর্ণনা দিয়ে মি. কবির বলেন, ২০২০ সালের ২রা মে তিনি বাড়িতেই ছিলেন। ইফতারের কিছু সময় আগে তিনি একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছিলেন। এসময় দরোজায় করাঘাতের শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। দরোজা খোলার সাথে সাথে ১৭ জন অজ্ঞাতপরিচয় স্টারের ঐ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, পুলিশের এফআইআর-এ লেখা হয়েছে তাকে ৫ই মে ভোরবেলা গ্রেফতার করা হয়। এর অর্থ অন্তত ৬০ ঘণ্টা সময় ধরে তাকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়েছিল। স্টারের তরফ থেকে এবিষয়ে র‍্যাবের সাথে যোগাযোগ করা হলে সংস্থাটির মিডিয়া ও আইন বিষয়ক পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ্ জানান, আইন মেনেই আহমেদ কবির কিশোরকে আটক করা হয়েছে। “একজন আসামী যা খুশি তাই বলতে পারে।”

আটক হওয়ার সময় মি. কবির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা সেটা জানাতে অস্বীকার করে।

“আমি পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তারা আমাকে গালাগালি করে। শুধু একজন জানায় তার নাম জসীম। সে আমাকে লুঙ্গি বদলে প্যান্ট পরতে বলে,” জানান আহমেদ কবীর কিশোর।

“আমি যে ঘরে ছিলাম সেখানে আমার ছবি আঁকার জিনিসপত্র ছিল। ছিল কম্পিউটার হার্ডওয়্যার …এর মধ্যে আমি দেখলাম একজন কিছু লাল ট্যাবলেট এবং একটি অস্ত্র আমার বইপত্রের মধ্যে গুঁজে দেয়ার চেষ্টা করছে। আমি বুঝতে পারলাম আমাকে ফাঁসানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।”

“আমি চিৎকার করে উঠলাম, এবং লোকটির হাত জাপটে ধরলাম। সে ঝটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে নিলো। আমার হৈচৈ দেখে জসীম লোকটিকে সরে আসতে বলল।”

‘খুন করে ফেলবো’
এরপর আহমেদ কবির কিশোরকে মাথায় ঠুলি পরিয়ে হাতবাঁধা অবস্থায় বাড়ি থেকে বের করে আনা হয়। বাড়ির সামনে ছয়টি গাড়ি দাঁড় করানো ছিল। গাড়ির কাঁচগুলো ছিল কালো রঙে ঢাকা। গাড়িতে উঠিয়েই হাই ভলিয়্যুমে গান ছেড়ে দেয়া হয় যাতে তিনি চিৎকার করে বাইরের কাউকে ডাকতে না পারেন।

গাড়ি চলতে শুরু করে। একসময় সেটি একটি বাড়ির সামনে এসে থামে। তাকে বাড়ির একটি ঘরে ঢোকানো হয়। সামনে থেকে তার হাতকড়া পরানো ছিল। বাড়ির ভেতরে ঢোকার পর এক ব্যক্তি তাকে পিছমোড়া করে আবার হ্যান্ড-কাফ লাগায়।

“দীর্ঘ সময় ঐ ঘরে থাকার পর আমাকে বের করে করিডর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আরেকটি ঘরে। সেখানে একটি চেয়ার বসানো ছিল। চেয়ারের হাতল এবং পায়ায় কিছু জিনিসপত্র লাগানো ছিল। চেয়ারে বসিয়ে আমার চোখের পট্টি খুলে দেয়া হয়। এবং ইংরেজিতে বলা হয়, ‘তুমি যদি পেছনে তাকাও তাহলে খুন করে ফেলবো।’” মি. কবীর বুঝতে পেরেছিলেন ঘরের মধ্যে ১০ থেকে ১২ জন লোক হাজির ছিল। তার ঘরে ঢুকে পড়ে। এদের মধ্যে এরপর তারা একটি প্রজেক্টর চালু করে পর্দায় আমার একটি কার্টুন দেখায়। তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে তুমি কার ছবি এঁকেছো? তুমি কি প্রধানমন্ত্রীর ছবি এঁকেছো?”

“সেটা ছিল একটা কনসেপচুয়াল কার্টুন। প্রকৃতি কীভাবে করোনা মহামারির মধ্যে নিজেকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছে তার ওপর।”

এরপর তারা আহমেদ কবির কিশোরকে একের পর এক ছবি দেখাতে থাকে এবং নারীর ছবি হলে জিজ্ঞেস করতে থাকে, তুমি কি প্রধানমন্ত্রীর ছবি এঁকেছো? পুরুষের ছবি হলে জিজ্ঞেস করে, তুমি কি জাতির পিতার ছবি এঁকেছো?”

“এক পর্যায়ে আমি রেগে গিয়ে বললাম বললাম বঙ্গবন্ধুর মুখে একটি দাগ ছিল। এখানে কী সেই দাগ দেখা যাচ্ছে?”

কানের পর্দা ফেটে যায়
একথা বলার সাথে সাথে তারা একটি মোটা লাঠি দিয়ে পায়ের ওপর বাড়ি মারতে শুরু করে।

“এক লোক এসে দুই হাত দিয়ে আমার দুই কানের ওপর খুব জোরে থাপ্পড় মারে।” প্রচণ্ড ব্যথার মধ্যে তিনি টের পান যে তার কানের পর্দা ফেটে গিয়েছে।

এভাবে দীর্ঘ সময় ধরে তার ওপর নির্যাতন চলে। তার পা, মাথা এবং শরীরের পেছন দিকে পেটানো হয়।

“তারা আমার ইমেইল এবং সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড জানতে চায়। আমার ডান কান থেকে রক্ত ঝরছিল। আমি কিছুই শুনতে পারছিলাম না। এরপর তারা আমাকে দিয়ে কাগজের ওপর লিখিয়ে পাসওয়ার্ড জেনে নেয়।”

আটককারীরা মি. কবিরকে ‘আই অ্যাম বাংলাদেশী’ নামে একটি ফেসবুক পেজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তিনি ঐ পেজে পোস্ট করতেন। তারা সুইডেন-প্রবাসী সাংবাদিক তাসনীম খলিল এবং হাঙ্গেরি-প্রবাসী ব্যবসায়ী সায়ের জুলকারনাইন এবং জার্মান-প্রবাসী ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনের সাথে তার সম্পর্কের কথা জানতে চায়।

এক পর্যায়ে তার সাথে জঙ্গি সম্পৃক্ততার কথা জানতে চাওয়া হয়। এবং ব্লগার হত্যার সাথে তিনি জড়িত কিনা সে সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

“আমি তাদের বলেছিলাম আমার বন্ধুদের ওপরই হামলা চালানো হচ্ছে, এবং তারাই মারা যাচ্ছে।”

কান দিয়ে অনবরত রক্ত
আহমেদ কবির কিশোর জানাচ্ছেন, ঐ ঘরে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ধরে তার ওপর নির্যাতন চলতো। “প্রচণ্ড ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েছিলাম। আমার নাক এবং কান দিয়ে অনবরত রক্ত ঝরতো।”

এভাবে কিছুদিন চলার পর মি. কবিরকে নিয়ে যাওয়া হয় খিলগাঁ র‍্যাব-৩ অফিসে।

“আমার চোখের বাঁধন খুলে দেয়ার সাথে সাথে একের পর এক ক্যামেরার ফ্ল্যাশ জ্বলতে থাকে। সেখানেই আমি প্রথমবারের মতো মুশতাক আহমেদকে দেখতে পাই।”

লেখক মুশতাক আহমেদও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক হয়েছিলেন। তিনি কারারুদ্ধ অবস্থায় কিছুদিন আগে প্রাণত্যাগ করেন। সরকার দাবি করছে তার মৃত্যু অস্বাভাবিক নয়।

“মুশতাক আহমেদের শরীর থেকে আমি প্রস্রাবের গন্ধ পাচ্ছিলাম। তাকেও কিছু দিন আগে ধরে আনা হয়েছিল। এবং তার ওপর প্রচণ্ড নির্যাতন হয়েছে। তার লিঙ্গে ইলেকট্রিক শক্ দেয়া হয়েছিল বলে তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন।”

“ঘরের মধ্যে কিছু খবরের কাগজ পড়ে ছিল। আমি তাকে বললাম সেগুলো ব্যবহার করে পরিষ্কার হতে। তিনি তখন প্যান্ট খুলে আন্ডারওয়্যারটি ফেলে দিলেন। সেখানে তার বিষ্ঠা ছিল। প্রচণ্ড মারের চোটে তিনি প্যান্টের মধ্যেই পায়খানা করে ফেলেছিলেন।”

এরপর তাদের দুজনকে চালান করা হয় রমনা থানায়।

রমনা থেকে আদালত হয়ে পরবর্তী ১০ মাস সময়ের জন্য এই দুই লেখকের জায়গা হয় কারাগারে। হাতে অস্ত্র ছিল।



আর্কাইভ

তোফাজ্জল হত্যা: ঢাবির ৬ শিক্ষার্থীর জড়িত থাকার দায় স্বীকার
জাতিসংঘে বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে- মধ্যমণি ড. ইউনূস
পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে নিহত ৩, রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা জারি
বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গ্রেপ্তার
ঢাবিতে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ
ড. ইউনূসের সঙ্গে মোদির বৈঠক হচ্ছে না: ভারতীয় গণমাধ্যম
গণহত্যায় শহিদ পরিবার পাবে ৫ লাখ, আহতরা ১ লাখ টাকা
ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেল সেনাবাহিনী
বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘের