রবিবার, ১০ জানুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » বায়ুদূষণের শীর্ষে ঢাকা, লাহোর ও মুম্বাই
বায়ুদূষণের শীর্ষে ঢাকা, লাহোর ও মুম্বাই
বিবিসি২৪নিউজ, নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ বাংলাদেশের ঢাকায় দুই দিন ধরে বায়ুর মান দ্রুত খারাপ হচ্ছিল। কিন্তু শীতের এই সময়ে সাধারণত তাপমাত্রা কমলে বায়ুর মান খারাপ হয়। এবার ঘটল উল্টো ঘটনা। তাপমাত্রা বেড়ে ও শীত কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর মানও খারাপ হতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহ বিরতির পর আজ সকাল সাতটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত ঢাকার বাতাস ছিল বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে দূষণের দিক থেকে শীর্ষে। দুপুরের পর থেকে ঢাকাকে পেছনে ফেলে লাহোর শীর্ষে চলে এসেছে।
আবহাওয়াবিদ ও বায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানের লাহোর, বাংলাদেশের ঢাকা ও ভারতের মুম্বাই শহরের বায়ুর মান কাছাকাছি রকমের খারাপ হওয়া একই সূত্রে গাঁথা। ওই তিন শহরের ওপরেই এখন আরব সাগর থেকে আসা পশ্চিমা লঘুচাপ বা জলীয় বাষ্পপূর্ণ উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে। ওই বায়ুর সঙ্গে আরব অঞ্চলের মরুভূমি থেকে বয়ে আসা ব্যাপক ধূলিকণাও আসছে। এসব ধূলিকণার মধ্যে বায়ুদূষণের উপাদান অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম–২.৫ ও পিএম-১০ রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার যে শহরগুলোর ওপর দিয়ে আরব সাগর থেকে আসা বায়ু বয়ে যাচ্ছে, সেখানকার বায়ুর মান দ্রুত খারাপ হচ্ছে।
তবে এর সঙ্গে এসব অঞ্চলের নিজস্ব বায়ুদূষণের উৎসগুলো যোগ হয়েছে বলে মনে করছেন বায়ু বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে এখন চলছে শুষ্ক মৌসুম। ফলে এখানে নির্মাণকাজ ও মানুষের নানা তৎপরতা বেড়ে গেছে। ধুলা ও ধোঁয়া বেড়েছে। এটিও বায়ুদূষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আজ রোববার বেলা ১১ থেকে ১টা পর্যন্ত ঢাকাসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান শহরগুলোর বায়ুর মানের সূচক ২৫০ থেকে ৪৫০ পর্যন্ত উঠে যায়। ঢাকার বায়ুর মানের সূচক ৩৫০ থেকে ৪০০ পর্যন্ত ওঠে। এ ধরনের বায়ু কোথাও থাকলে বিশ্বের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়াল একে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বলে থাকে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বায়ুর মান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ঢাকাসহ দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে বায়ুর মানের অবনতির পেছনে প্রধানত আরব সাগর থেকে আসা বায়ু বড় ভূমিকা রাখছে। ওই বায়ুর সঙ্গে আসা জলীয় বাষ্পের মধ্যে ক্ষুদ্র বস্তুকণা পিএম-২.২৫ ও পিএম-১০ বেশি পরিমাণে চলে আসছে। আর এর সঙ্গে স্থানীয় উৎস থেকে ধুলা ও ধোঁয়া যোগ হয়ে বায়ুর মান দ্রুত খারাপ হয়েছে।
এয়ার ভিজ্যুয়ালের হিসেবে, আজ সন্ধ্যা ছয়টায় ওই প্রতিবেদন লেখার সময় বায়ুর মানের দিক থেকে ঢাকার অবস্থান ছিল তৃতীয়। শীর্ষে ছিল কিরগিজস্তানের শহর বিশকেক, দ্বিতীয় ছিল পাকিস্তানের লাহোর। ঢাকার পরে ছিল ভারতের দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা ও ইরানের তেহরান শহর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, পশ্চিমা লঘুচাপ বা আরব সাগরের বায়ুপ্রবাহটি আরও দু–এক দিন বাংলাদেশের ওপর থাকবে। ফলে এখানে বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর থেকে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় থাকতে পারে। ফলে এই সময়টাতে ঘরের দরজা-জানালা পারলে বন্ধ রাখা, বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করাসহ অন্যান্য সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
তবে বায়ুর মানবিষয়ক গবেষক ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমরা গবেষণা করে দেখেছি বায়ুতে ধূলিকণা নিয়ন্ত্রণের জন্য যদি নির্মাণকাজের স্থান ও সড়কগুলো নিয়মিত পানি ছিটানো হয়, তাহলে বায়ুর মান ২০ শতাংশ ভালো হয়ে যায়। ফলে নির্মাণকাজের সময় যদি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম মানে ও সরকারি সংস্থাগুলো নিয়মিতভাবে রাস্তায় পানি ছিটায়, তাহলে বায়ুর মান অতটা খারাপ হবে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসেবে, আজ দেশের সবচেয়ে কম তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলে—১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস।