শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় » করোনার ‘নতুন স্ট্রেইন’ : স্বাস্থ্য সুবিধা ও জনসচেতনতা বাড়াতে হবে!
করোনার ‘নতুন স্ট্রেইন’ : স্বাস্থ্য সুবিধা ও জনসচেতনতা বাড়াতে হবে!
আরিফুর রহমানঃ দেশে করোনার ‘নতুন স্ট্রেইন’ শনাক্তের খবরে অনেকেই উদ্বিগ্ন। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া রূপান্তরিত করোনাভাইরাস যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়ার পর এবার এশিয়ার দেশগুলোয় হানা দিয়েছে। ইতোমধ্যে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে নতুন ধরনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। দেশে শনাক্ত হওয়া নতুন স্ট্রেইনটির সঙ্গে যুক্তরাজ্যে পাওয়া নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের সাদৃশ্য আছে বলে জানা গেছে। এ করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা ফেরত যাত্রীদের কঠোরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। এমনকি সন্দেহ হলে তাদের কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে।
করোনাভাইরাস বারবার পরিবর্তিত হয়-এ বিষয়টি এখন আর অজানা নয়। ইতঃপূর্বে মালয়েশিয়ায় করোনাভাইরাসের ‘রূপান্তর’ খুঁজে পাওয়া গেছে, যাকে সাধারণের চেয়ে ১০ গুণ বেশি সংক্রামক বলা হয়েছিল। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি স্বাভাবিকের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক বলে দাবি করা হয়েছে। যদিও গবেষকরা জানিয়েছেন, রূপান্তরিত ভাইরাস খুব বেশি প্রাণঘাতী অথবা ভ্যাকসিনের সঙ্গে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাবে- এমন কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। এটি নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক। কিন্তু তাই বলে এ ব্যাপারে উদাসীন থাকা বা অবহেলা করা ঠিক হবে না। দক্ষিণ আফ্রিকায় এরই মধ্যে নতুন ভাইরাস নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সবাইকে সতর্ক করে বলেছেন-সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন এমন অনেক তরুণও ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
দেশে কার্যকর ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত রূপান্তরিত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই-শুরু থেকেই দেশে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় একধরনের সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা গেছে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও প্রকট হয়েছে। কাজেই শীতকালে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়ে দেশবাসীর মনে যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, তা দূর করতে হলে সমন্বয়হীনতা কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ব্যাপারে সচেতন ও প্রয়োজনে বাধ্য করতে হবে। এমনিতেই শীতকালে আমাদের দেশে ফ্লু’র প্রকোপ বেড়ে যায়। এ সময় মানুষের সর্দি-কাশি বেশি হয়। তাছাড়া যাদের শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে, তারাও এ সময় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব এনজাইম আছে, সেগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাপমাত্রায় অনেকটাই কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে; ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে যায়। শীতে বাতাসের তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতাও কমে যায়, যা আমাদের শ্বাসনালির স্বাভাবিক কর্মপ্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে ভাইরাসের আক্রমণ সহজ করে তোলে। কোভিড-১৯ যেহেতু ভাইরাসজনিত একটি রোগ, তাই শীতকালে এর ব্যাপক সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার প্রশ্নটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত অনেক প্রশ্নের উত্তরই আমাদের জানা নেই। অতএব রূপান্তরিত করোনার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলা সবার অবশ্যকর্তব্য হওয়া উচিত।