বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » আমেরিকা | আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম নাগরিকদের পক্ষে “নো ব্যান অ্যাক্ট” আইনপ্রস্তাব পাস
যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম নাগরিকদের পক্ষে “নো ব্যান অ্যাক্ট” আইনপ্রস্তাব পাস
বিবিসি২৪নিউজ, ফরিদা ইয়াসমিন, ওয়াশিংটন থেকেঃ দ্য মুসলিম পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন শপথ গ্রহণ করার আগেই মুসলমানদের জন্য স্বস্তির খবর আসতে শুরু করেছে। ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে ‘নো ব্যান অ্যাক্ট’ নামের আইনপ্রস্তাব পাস হয়েছে। মুসলমানপ্রধান ১৩টি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে জো বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই। গতকাল বুধবার কংগ্রেসে গৃহীত আইনপ্রস্তাবকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মুসলমানদের অধিকারের পক্ষে গ্রহণ করা প্রথম আইনপ্রস্তাব হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কংগ্রেসে ২৩৩-১৮৩ ভোটে ‘নো ব্যান অ্যাক্ট’ গৃহীত হয়েছে। এ আইনপ্রস্তাবের পক্ষে ডেমোক্র্যাট পার্টির সব আইনপ্রণেতা ভোট দিয়েছেন। রিপাবলিকান পার্টির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আইনপ্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন দুই রিপাবলিকান সদস্য। রিপাবলিকান পার্টির এ দুজন আইনপ্রণেতা হচ্ছেন টেক্সাস থেকে নির্বাচিত উইল হার্ড এবং পেনসিলভানিয়া থেকে নির্বাচিত ব্র্যান ফিটজপ্যাট্রিক। বিলটি আইনে পরিণত হলে ধর্মীয় কারণে কোনো ভবিষ্যৎ মার্কিন প্রেসিডেন্টও অভিবাসন নিয়ে বৈষম্য করতে পারবেন না বলে বলা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণ করেই ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেন থেকে আমেরিকায় প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ট্রাম্পের এমন নির্বাহী আদেশের পর হাজার হাজার মার্কিন মুসলমান ও নাগরিক অধিকার সংগঠনের লোকজন প্রতিবাদে মাঠে নামেন। এ নিয়ে মার্কিন বিমানবন্দরগুলোয় টানা প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর এ নির্বাহী আদেশ পরে সংশোধন করে ইরান, উত্তর কোরিয়া, সোমালিয়া, কারজিস্তান, মিয়ানমার, নাইজেরিয়াসহ তানজানিয়া ও ভেনেজুয়েলার কিছু নাগরিকের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রেখেছেন। ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, এসব দেশ নিরাপত্তাসংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য আমেরিকার সঙ্গে বিনিময় না করার জন্য এমন নিষেধাজ্ঞায় রাখা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা জো বাইডেন বলেছেন, ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই নির্বাহী আদেশ দিয়ে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ–সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেবেন। কংগ্রেসে ‘নো ব্যান অ্যাক্ট’ গৃহীত হওয়ার পর জো বাইডেন এক টুইট বার্তায় বলেছেন, কোনো মানুষকে তাঁর বিশ্বাস বা ধর্মচর্চার জন্য বৈষম্য করা উচিত নয়। এমন বৈষম্যের অবসানের জন্য কংগ্রেসে গৃহীত প্রস্তাবে প্রথম দিনেই স্বাক্ষর করে আইনে পরিণত করবেন বলে জো বাইডেন উল্লেখ করেছেন।
জো বাইডেনের প্রচারণা ওয়েবসাইটে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছ, এমন নিষেধাজ্ঞা আমেরিকার ভাবমূর্তি ও মূল্যবোধের জন্য ক্ষতিকর। এমন নিষেধাজ্ঞা করায় আমেরিকার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং জঙ্গি সংগ্রহের উপাদান দেওয়া হচ্ছে। ঘোষণায় বলা হয়েছে, মুসলমানদের আমেরিকায় নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশ থেকে লোকজন আসার ফলে আমেরিকা নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ার কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য নেই। কৃষ্ণাঙ্গ ও বাদামি চামড়ার অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন প্রয়াস নেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক ‘নো ব্যান অ্যাক্ট’ কংগ্রেসে পাস হওয়ার মুসলমান কংগ্রেসওম্যান রাশিদা তলাইব উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। মার্কিন কংগ্রেসের একজন মুসলমান সদস্য হিসেবে এ আইনপ্রস্তাব গ্রহণ করার সময় ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তিনি সভাপতিত্ব করতে পেরে গর্ব বোধ করছেন বলে উল্লেখ করেন।
সোমালিয়া থেকে আসা অভিবাসী আমেরিকান কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি নিজের চরম বিরক্তি প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন। ‘নো ব্যান অ্যাক্ট’ পাস হওয়ার পর ইলহান ওমর বলেছেন, ট্রাম্প বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করবেন। মার্কিন আইনপ্রণেতারা তাঁদের করণীয় ঠিকই নির্ধারণ করতে পেরেছেন।
ইলহান ওমর বলেন, নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশগুলো থেকে আসা একমাত্র কংগ্রেস সদস্য হিসেবে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞাপ্রস্তাব বাতিলের জন্য ভোট দেওয়াটা গর্বের চেয়ে বেশি কিছু।
মুসলিম অ্যাডভোকেটস নামের নাগরিক সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ফারহানা কেহেরা বলেছেন, কংগ্রেসে গৃহীত প্রস্তাবটি মুসলমানদের জন্য একটা ঐতিহাসিক ঘটনা।
দ্য মুসলিম পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছে, এ আইনপ্রস্তাব আমেরিকার ইতিহাসে মুসলমান নাগরিক অধিকারের পক্ষে নেওয়া প্রথম একটি প্রকাশ্য পদক্ষেপ।