বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশে শিশুদের পর্নোগ্রাফিতে জড়ানো হচ্ছে?
বাংলাদেশে শিশুদের পর্নোগ্রাফিতে জড়ানো হচ্ছে?
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ বাংলাদেশে শিশুদের দিয়ে যৌনদৃশ্য ধারণ (শিশু পর্নোগ্রাফি) এবং তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে বাংলাদেশের কারা জড়িত, সে বিষয়ে পুলিশের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেড চিলড্রেনের (এনসিএমইসি) তথ্য অনুযায়ী, শিশুদের দিয়ে যৌনদৃশ্যে কাজ করানো, তাদের যৌন নিপীড়নের ছবি ও ভিডিও ধারণ এবং তা আদান–প্রদানের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।
এনসিএমইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা তথ্যটি ২০১৯ সালের। শিশু যৌন নির্যাতন বন্ধ, শিশু পর্নোগ্রাফি নির্মূলসহ শিশুদের অধিকারসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধন করা প্রতিষ্ঠান যেমন ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট তাদের নেটওয়ার্কে শিশুদের যৌনকাজে ব্যবহার, যৌন নিপীড়নসংক্রান্ত যেকোনো তথ্য এনসিএমইসিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জানায়।
নভেম্বর মাসে এনসিএমইসির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সিআইডি। এরপর ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিশু পর্নোগ্রাফিসংক্রান্ত ১৬ হাজার ৫১১টির ঘটনার কথা সিআইডিকে জানিয়েছে এনসিএমইসি। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৬১৮টি ঘটনা ফেসবুকের, ৩২৫টি ঘটনা ইনস্টাগ্রামের এবং বাকি ৫১১টি ঘটনা গুগল, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমের।
এনসিএমইসির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের আইপি অ্যাড্রেস (ইন্টারনেট প্রোটোকল-আইপি— কম্পিউটার বা মুঠোফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হতে হলে যে পরিচিতি নম্বর বা ঠিকানা লাগে) ব্যবহার করে চাইল্ড পর্নোগ্রাফি আদান–প্রদান হয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকেই শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি করার পর কতটি আদান–প্রদান হয়েছে, সে তথ্য অবশ্য ওয়েবসাইটে উল্লেখ নেই।
বাংলাদেশে যে শিশু পর্নোগ্রাফি বা তাদের যৌন নিপীড়নসংক্রান্ত কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে, এটা তো বিভিন্ন ওয়েবসাইটেই দেখা যায়। কিন্তু এগুলোর ওপর যথাযথ নজরদারি নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ (চাইল্ড প্রটেকশন স্পেশালিস্ট) শাবনাজ জাহেরিন
এনসিএমইসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে শিশু পর্নোগ্রাফি, শিশুদের যৌন নিপীড়নসংক্রান্ত ছবি ও ভিডিও ধারণ এবং আদান–প্রদানের সর্বোচ্চ ১৯ লাখ ৮৭ হাজার ৪৩০টি ঘটনা ঘটেছে ভারতে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে ঘটেছে ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৩৯০টি, তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইরাকে ঘটেছে ১০ লাখ ২৬ হাজার ৮০৯টি, চতুর্থ অবস্থানে থাকা আলজেরিয়ায় ঘটেছে সাত লাখ ৫৩৫টি এবং পঞ্চম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশে ঘটেছে পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার ৬৪২টি।
শিশু পর্নোগ্রাফির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকার তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে সিটিটিসির সাইবার অপরাধ বিভাগ। গ্রেপ্তার ওই তিনজন নিজেদের পরিচয় গোপন করে দেশি-বিদেশি শিশু, কিশোর-কিশোরী ও প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের সঙ্গে পরিচিত হতেন। পরে তাদের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করতেন ওই তিন শিক্ষার্থী।
এনসিএমইসি এই তথ্য নিয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) লজিস্টিক তৌফিক মাহবুব চৌধুরীর সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। সভায় পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (স্পেশাল ক্রাইম), সহকারী উপমহাপরিদর্শক (ক্রাইম অ্যানালাইসিস), কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) উপকমিশনার, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত উপপুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় এনসিএমইসি থেকে তথ্য প্রাপ্তি এবং সেই তথ্য কাজে লাগিয়ে অনুসন্ধানের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভার বিষয়ে ডিআইজি তৌফিক মাহবুব চৌধুরী বলেন, এনসিএমইসির সঙ্গে যুক্ত হয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য সিআইডির সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ–সংক্রান্ত তদন্তও তারা করবে।
এ বিষয়ে সিআইডির সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম বলেন, এরই মধ্যে তাঁরা এনসিএমইসির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। সংস্থাটি সিআইডির কিছু কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেবে। এরপর একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে যারা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবে।