বুধবার, ২ ডিসেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » তথ্যপ্রযুক্তি | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » চাঁদে চীনের চন্দ্রযান “চ্যাঙ’ই-৫”
চাঁদে চীনের চন্দ্রযান “চ্যাঙ’ই-৫”
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ষাট ও সত্তরের দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন চাঁদের বুক থেকে সফলভাবে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে আনতে পেরেছিল। চীনের অভিযান সফল হলে তাদের পাশে লেখা হবে এই দেশটির নামও।
চাঁদের বুকে নেমেছে চীনের চন্দ্রযান। চাঁদের নমুনা সংগ্রহে এ ধরনের অভিযান গত চার দশকের মধ্যে প্রথম। নমুনা সংগ্রহ করে চন্দ্রযানটি সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরতে পারলে সংক্ষিপ্ত এক তালিকায় ঢুকে যাবে চীন। এ তালিকায় এত দিন ছিল কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নাম।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত সপ্তাহে চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় হাইনান প্রদেশ থেকে চন্দ্রযানটিকে একটি রকেটে করে উৎক্ষেপণ করা হয়। ১১২ ঘণ্টার মহাকাশ সফর শেষে চন্দ্রযানটি গত শনিবার পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে। এরপর গতকাল মঙ্গলবার এটি চাঁদের নিকট প্রান্তে অবতরণ করে।
চাঁদের যে পৃষ্ঠ সব সময় পৃথিবীর দিকে মুখ করে থাকে, তাকে নিকট প্রান্ত বলে। আর বিপরীত দিকের প্রান্তটিকে বলা হয় চাঁদের দূর প্রান্ত। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এই দূর প্রান্তে অবতরণ করে চীনের আরেকটি মহাকাশযান। চাঁদের ওই অঞ্চলে অবতরণ করা প্রথম মহাকাশযান ছিল এটি।
চাঁদের বুকে মঙ্গলবার অবতরণ করা চীনের মহাকাশযানটির নাম চ্যাঙ’ই-৫। চীনা পুরাণের চাঁদের দেবীর নামানুসারে এই নামকরণ করা হয়েছে। চীনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসন চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া জানিয়েছে, চন্দ্রযানটি চাঁদের বুক থেকে নুড়িপাথর ও মাটির নমুনা সংগ্রহ করবে। এসব নমুনা চাঁদের উৎপত্তি, গঠন সম্পর্কে জানতে এবং আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা বুঝতে বিজ্ঞানীদের সহযোগিতা করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, চন্দ্রযানটির সংগৃহীত চাঁদের নমুনা একটি ক্যাপসুলে ভরা হবে। চলতি ডিসেম্বরের দ্বিতীয় ভাগে চীনের উত্তরাঞ্চলীয় ইনার মঙ্গোলিয়া অঞ্চলে চন্দ্রযানটির অবতরণ করার কথা রয়েছে।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে চাঁদের দূর প্রান্তে অবতরণ করে চীনের একটি মহাকাশযান। চাঁদের ওই অঞ্চলে অবতরণ করা প্রথম মহাকাশযান ছিল এটি।
এ অভিযান সফল হলে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নামের পাশে লেখা হবে চীনের নাম। এর আগে ষাট ও সত্তরের দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন চাঁদের বুক থেকে সফলভাবে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে আনতে পেরেছিল।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচার-এর তথ্যমতে, চীনের চন্দ্রযানটি চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে দুই কেজি নমুনা সংগ্রহ করবে। এই নমুনা সংগ্রহ করা হবে চাঁদের ওশেনাস প্রসেলারাম এলাকা থেকে। ওশেনাস প্রসেলারাম-এর অর্থ ‘ঝড়ের সমুদ্র’। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে প্রবাহিত লাভা দিয়ে এই বিশাল সমতল এলাকা গঠিত। এই এলাকা থেকে এর আগে নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি।
চন্দ্রযানটি চাঁদের পুরো এক দিন এই নমুনা সংগ্রহের কাজ করবে। চাঁদের এক দিন পৃথিবীর ১৪ দিনের সমান।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকসের গবেষক জনাথন ম্যাকডোয়েল গত মাসেই বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, চীনের এবারের চন্দ্রাভিযানে বেশ কিছু নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে, যা এর আগের অভিযানগুলোয় দেখা যায়নি।
শুধু চন্দ্রাভিযানেই সীমিত নেই চীনের মহাকাশ গবেষণা। দেশটির সামরিক বাহিনী পরিচালিত মহাকাশ কর্মসূচি ২০২২ সালের মধ্যে মহাকাশে একটি মনুষ্যবাহী মহাকাশ স্টেশন স্থাপনের চেষ্টা করছে। এ জন্য তারা হাজার কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করছে। তারা চাঁদে মানুষ পাঠানোরও চেষ্টা করছে। এ ছাড়া সৌরজগতের লোহিত গ্রহ মঙ্গলেও মনুষ্যবাহী মহাকাশযান পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে চীনের।