শনিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » শিরোনাম | সাবলিড » পাটগ্রামে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার ৫
পাটগ্রামে পিটিয়ে হত্যার পর মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার ৫
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ লালমনিরহাট: ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারীতে শহিদুন্নবী জুয়েল নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা ও মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পাটগ্রাম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন্ত কুমার মোহন্ত বিষয়টি জানান।
শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) রাতে বুড়িমারী এলাকা থেকে তাদের আটক করে ভিডিও দেখে শনাক্ত করে শনিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তাদের গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। গ্রেফতাররা সবাই বুড়িমারী এলাকার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত যুবক শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।
গত বছর চাকরিচ্যুত হওয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি।
>>>গুজব ছড়িয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: আলেমদের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠক
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, শহিদুন্নবী জুয়েল বৃহস্পতিবার বিকেলে সুলতান যোবাইয়ের আব্দার নামে এক সঙ্গীসহ বুড়িমারী বেড়াতে আসেন। বিকেলে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা।
নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের সানসেটে রাখা কোরআন শরীফ নামাতে গিয়ে অসাবধনাতাবশত কয়েকটি কোরআন ও হাদিসের বই তার পায়ে পড়ে যায়। এ সময় তুলে চুম্বনও করেন জুয়েল। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে মুয়াজ্জিনের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান যোবাইয়েরকে পাশে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখে। খবর পেয়ে পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ওসি বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হন।
সন্ধ্যায় পুরো বাজারে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে কোরআন অবমাননার দায়ে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। এ সময় উত্তেজিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দরজা জানালা ভেঙে প্রশাসনের কাছ থেকে জুয়েলকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে মরদেহ টেনে পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় স্থানীয়রা। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে।
সন্ধ্যা থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা থানা পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া ইট পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন্ত কুমার মোহন্তসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ১৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে পুলিশ।
বুড়িমারীর ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি চাইলেন পাঁচ শতাধিক আলেম
রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর ও পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। নিহত জুয়েলের সঙ্গী সুলতান যোবাইয়েরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ।
ঘটনাটি তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুক্রবার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টিএমএ মমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত জুয়েলের চাচাত ভাই সাইফুল আলম, পাটগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান আলী ও বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত বাদি হয়ে পৃথক তিনটি মামলা করেন।
পাটগ্রাম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) সুমন্ত কুমার মোহন্ত বাংলানিউজকে বলেন, গুজব ছড়িয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যা ও পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে এবং প্রাথমিক তদন্তে আসামিদের শনাক্ত করা হচ্ছে। এসব মামলায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে গ্রেফতারদের নাম পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না।