মিয়ানমারকে সাবমেরিন দিলো ভারত
বিবিসি২৪নিউজ, নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকাঃ মিয়ানমার নৌবাহিনীকে রাশিয়ার তৈরি একটি পুরনো কিলো-ক্লাস সাবমেরিন দিয়েছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীভাস্তব এ উপলক্ষে ১৫ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও প্রবৃদ্ধির জন্য ভারতের ‘সাগর’ ভিশনের সঙ্গে এই সাবমেরিন হস্তান্তর সামঞ্জস্যপূর্ণ।প্রতিবেশী দেশগুলোর সক্ষমতা ও আত্ম-নির্ভরশীলতার জন্য ভারতের যে প্রতিশ্রুতি, তা সহায়ক।’’ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সামরিক সরঞ্জাম হস্তান্তরের মাধ্যমে মিয়ানমারকে তোয়াজ করছে ভারত। এর ফলে বঙ্গোপসাগরে বৃহৎ শক্তিগুলোর ভারসাম্যে তেমন প্রভাব না পড়লেও বাংলাদেশের ওপরে এর প্রভাব পড়বে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিয়ানমারে সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাশে মোহাম্মাদ শহীদুল হক সোমবার (২৬ অক্টোবর) বলেন, ‘অনেকে বিশেষ করে ভারতের মিডিয়া বলছে, মিয়ানমারকে সাবমেরিন দেওয়া হয়েছে চীনকে ঠেকানোর জন্য। কিন্তু বিষয়টি তা নয়। কারণ, সাবমেরিনটি ভারতের কাছ থেকে আসলেও সেটি চালানোর জন্য যেসব অবকাঠামো ও সুবিধা দরকার তা বেশিরভাগই চাইনিজ।’
তিনি বলেন, ‘ভারত হয়তো মনে করছে, এধরনের সামরিক সরঞ্জাম দিলে মিয়ানমার চীনের বলয় থেকে বের হয়ে আসবে। আসলে তারা এটি তোয়াজ করার জন্য দিয়েছে। এর আগেও ভারত সোনার (জাহাজে ব্যবহৃত হয় এক ধরনের যন্ত্র), রাডার ও টর্পেডো মিয়ানমারকে দিয়েছে, তাদের উপস্থিতি প্রমাণ করার জন্য।’
সাবেক মেজর জেনারেল শহীদুল হক মনে করেন, এই সাবমেরিন হস্তান্তরের ফলে চীন-মিয়ানমার এবং ভারত-মিয়ানমার কৌশলগত সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়বে না। কিন্তু এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে।
বঙ্গোপসাগরে এর কোনও প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চীনের যে কৌশলগত স্বার্থ আছে বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে, সেটির জন্য তারা এখানে কোনও কিছু হতে দেবে না। মিয়ানমারের চক্তো অঞ্চলে (রাখাইনে) চীনের স্বার্থ আছে এবং এই অঞ্চলকে তারা ব্যবহার করতে চায়, মালাক্কা স্ট্রেইটের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য।’
বঙ্গোপসাগরের ওপরে অবস্থিত চক্তো অঞ্চল থেকে চীন-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডর শুরু হয়েছে জানিয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘এখান থেকে রাখাইনের মধ্য দিয়ে ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত গ্যাস লাইন ও তেল লাইন তৈরি হয়ে গেছে। এই পাইপলাইন দিয়ে ৪০ শতাংশ কম খরচে তেল যাচ্ছে চীনে। এছাড়া এরপরে শুরু হবে রেল লাইন স্থাপনের কাজ।’
রাশিয়ায় তৈরি এই সাবমেরিন বঙ্গোপসাগরে ব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা কম জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আন্দামান সমুদ্রে অর্থাৎ মিয়ানমার-থাই সুমদ্র সীমানায় এটিকে ব্যবহার করা হবে।’
সাবমেরিনটি প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্বেগের কারণ হচ্ছে— এরফলে দক্ষ সাবমেরিনারদের একটি দল তৈরি হবে মিয়ানমারে। তারা এরপরে রাশিয়া থেকে সাবমেরিন কিনতে পারে। কারণ, মস্কো নীতিগতভাবে প্রস্তুত।’
ভারতের দেওয়া সাবমেরিনটির ঘাঁটি হবে ইয়াঙ্গুনে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এবং মিয়ানমারের স্ট্র্যাটেজি ভিন্ন। সাবমেরিন থাকার কারণে বাংলাদেশের যে সুবিধা আছে, সেটি তারা মোকাবিলা করতে চায়। দ্বিতীয়ত ইয়াঙ্গুন বন্দর ও আন্দামান সুমদ্র অত্যন্ত ভঙ্গুর মিয়ানমারের জন্য। সেটিকেও তারা রক্ষা করতে চায়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৌবাহিনীর একজন সাবেক কর্মকর্তা বলেন, ‘সাবমেরিন থাকার কারণে বর্তমানে বাংলাদেশ যে সুবিধা পেতো এখন সেটি আর থাকবে না। এখন আমাদের সাবমেরিন তৎপরতা ঠেকানোর জন্য আরও বেশি জোর দিতে হবে।’
সাবমেরিন হঠাৎ করে কর্মক্ষম করা যায় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি চালানোর জন্য লোকবল তৈরি করতে ১০ থেকে ১৫ বছর লেগে যায়। বাংলাদেশ সাবমেরিন চালানোর জন্য অনেকদিন ধরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এবং এটি কেনার অনেক আগে থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।’
রাশিয়ার অনুমোদন সাপেক্ষে ভারত এই সাবমেরিন হস্তান্তর করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া চাইবে না তার তৈরি সাবমেরিন এমন কোনও দেশে ব্যবহার হোক, যেদেশ তার বন্ধু নয়।’
চীনের ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বেইজিং বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে। তারা মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করবে না।’