রবিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম | সাবলিড » বিশ্ব পরমাণু অস্ত্রমুক্ত হবার আশার আলো কতটা সফল হবে ?
বিশ্ব পরমাণু অস্ত্রমুক্ত হবার আশার আলো কতটা সফল হবে ?
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এই চুক্তি ২০১৭ সালে অনুমোদন করেছিল ১২২টি দেশ। কিন্তু এটি আইন হিসাবে কার্যকর করতে অন্তত ৫০টি দেশের চূড়ান্ত অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল। জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা চুক্তিতে পঞ্চাশতম দেশ হিসাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে হন্ডুরাস। এর ফলে আগামী নব্বই দিন পর এই চুক্তি কার্যকর হবে।
পরমাণু অস্ত্র বন্ধের দাবিতে আন্দোলনকারীরা জাতিসংঘের এই পদক্ষেপকে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ করার পথে একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে মনে করছে এবং এটাকে একটা “নতুন অধ্যায়” বলে স্বাগত জানিয়েছে।
কিন্তু বিশ্বের পাঁচটি শক্তিধর ও স্বীকৃত পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ দেশ এই চুক্তিতে এখনও সই না করায় জাতিসংঘের এই চুক্তি বাস্তবায়ন আসলেই কী অর্জন করবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
যদিও সমর্থকরা আশা করছেন একটা প্রতিরোধী ব্যবস্থা হিসাবে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।
চুক্তিতে কী আছে? এই চুক্তিতে যেসব দেশ স্বাক্ষর করেছে তারা চূড়ান্ত অনুমোদন দেবার মাধ্যমে ঘোষণা করেছে যে, তারা “কখনই কোন পরিস্থিতে পারমাণবিক অস্ত্র এবং অন্যান্য পারমাণবিক বিস্ফোরক সরঞ্জাম তৈরি, পরীক্ষা, উৎপাদন, ক্রয় বা সংগ্রহ করবে না এবং নিজেরা এধরনের অস্ত্রের মালিক হবে না এবং তা মজুতও করবে না”।চুক্তির আওতায়, পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার বা অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দেয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এবং যারা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে তারা “তাদের ভূখন্ডে কোথাও কোন পারমাণবিক স্থাপনা বা কেন্দ্র বসাতে অথবা কোনরকম পরমাণু অস্ত্র বা পারমাণবিক বিস্ফোরক সরঞ্জাম মোতায়েন করতে পারবে না”।
প্রতিক্রিয়া
পারমাণবিক অস্ত্র বন্ধ করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আন্দোলন সংস্থা আইক্যান ৫০তম দেশের এই চুক্তি চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে “‘পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণের পথে এটা একটা নতুন অধ্যায়’।
আইক্যানের প্রধান বিয়াট্রিম ফিন, যিনি ২০১৭ সালে আইক্যানের পক্ষে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন, তিনি বলেছেন: “কয়েক দশক ধরে চলা আন্দোলনের ফসল এটা। অনেকে বলেছিলেন ‘পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ’ অসম্ভব, আন্দোলনের মাধ্যমে সেটা অর্জিত হয়েছে।”
আইক্যানের প্রধান বিয়াট্রিস ফিন এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন
রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির প্রেসিডেন্ট পিটার মরিয়ার বলেছেন: “এটা মানবিকতার বিজয় এবং একটা নিরাপদ ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি।”
জাতিসংঘের মহাসচিব, আন্তোনিও গুতেরেজ এক বিবৃতিতে এই পদক্ষেপ সম্পর্কে বলেছেন এটা “সম্পূর্ণভাবে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত হওয়ার পথে একটা অর্থবহ অঙ্গীকার, যেটা বিশ্বকে অস্ত্র-মুক্ত করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের অগ্রাধিকারের তালিকায় একেবারে শীর্ষে রয়েছে”।
তবে বিশ্বের পাঁচটি প্রধান পরমাণু শক্তিধর দেশ - আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স এব্যাপারে আশু কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য এই চুক্তির ব্যাপারে তাদের বিরোধিতা স্পষ্ট করে দিয়েছিল।
যুক্তরাজ্য সেসময় বলেছিল, যদিও দেশটি পরমাণু অস্ত্র-মুক্ত পৃথিবীর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, কিন্তু ব্রিটিশ সরকার মনে করে না যে এই চুক্তি বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করতে পারবে। তারা বরং মনে করে এই চুক্তি বর্তমান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধের চুক্তির (নিউক্লিয়ার নন প্রলিফারেশন ট্রিটি)মত প্রয়াসের গুরুত্বকে খাটো করে দেবে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস আমেরিকার একটি চিঠি দেখেছে। সংস্থাটি বলছে আমেরিকা এই চিঠিটি লিখেছে এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীদের কাছে যাতে তারা বলছে ”এই চুক্তির ফলে পরমাণু অস্ত্র যাচাই ও পরমাণু অস্ত্র-বিস্তার রোধ চুক্তির প্রক্রিয়া উল্টোমুখে হাঁটবে”।
কত পরিমাণ পরমাণু অস্ত্র রয়েছে?
১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি নাগাদ ৭০ হাজারের মত পারমাণবিক অস্ত্রের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা ছিল। কিন্তু এখনও প্রায় ১৪ হাজার পরমাণু অস্ত্র আছে বলে মনে করা হয়।
আমেরিকা আর রাশিয়ার কাছে আছে সবচেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র। এর পরে পরমাণু অস্ত্রের সম্ভারের তালিকায় স্থান ক্রমান্বয়ে ফ্রান্স, চীন, ব্রিটেন, ভারত, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার। ইসরায়েলের কাছেও পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়, কিন্তু ইসরায়েল এটা নিশ্চিতও করে না বা অস্বীকারও করে না।
নিচের ম্যাপে দেখুন ২০১৭ সালে কোন্ দেশের কাছে কত পরমাণু অস্ত্র ছিল: এই ম্যাপে দেখা যাচ্ছে পরমাণু অস্ত্রধর দেশগুলো এবং এই প্রতিটি দেশের কাছে কত অস্ত্র আছে তার আনুমানিক হিসাব।
এসব অস্ত্র নষ্ট করে ফেলার ব্যাপারে কী করা হচ্ছে?
পারমাণবিক অস্ত্র-বিস্তার রোধ চুক্তি যেটি ১৯৭০ সালে ১৯০টি দেশ সমর্থন করেছিল, তাতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে ছিল আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং চীন। ওই স্বাক্ষরদানের মাধ্যমে ১৯০টি দেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত কমাবে এবং অন্য দেশের পারমাণবিক অস্ত্র সংগ্রহও ওই চুক্তির অধীনে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
ভারত, পাকিস্তান এবং ইসরায়েল ওই চুক্তিতে সই করেনি। এবং উত্তর কোরিয়া ২০০৩ সালে ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়। আমেরিকা, রাশিয়া এবং ব্রিটন তাদের অস্ত্রের সম্ভার কমিয়েছে।
রাশিয়া এবং আমেরিকার মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে শেষ যে চুক্তিগুলো হয়েছিল সেগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। এসব চুক্তির মেয়াদ ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হয়ে যাবার কথা।
২০১০ সালে তাদের মধ্যে নতুন যে স্টার্ট অস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তার আওতায় দুটি দেশের প্রত্যেকে ১,৫৫০টির বেশি দূর পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র মুখ রাখতে পারবে না।
তবে আমেরিকা সম্প্রতি আরেকটি চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে যেটি ছিল মাঝারি পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তি, যেটি দুই দেশ সই করেছিল শীতল যুদ্ধের সময়। রাশিয়া ওই চুক্তি লংঘন করেছিল এই অভিযোগ তুলে আমেরিকা সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়।