মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশ করোনা দ্বিতীয় ঢেউ” নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা
বাংলাদেশ করোনা দ্বিতীয় ঢেউ” নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকাঃ দেশে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হলে সংক্রমণের ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ বা দ্বিতীয় ঢেউ বিপজ্জনক পর্যায়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা রিপোর্টে উঠে এসেছে, রাজধানীর ৪৫ শতাংশ মানুষ এরইমধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
সরকারের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং বেসরকারি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) যৌথভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে এ গবেষণা চালায়। এই গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, ঢাকা শহরের বস্তি এলাকায় ইতোমধ্যে তিন চতুর্থাংশ মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন।
এদিকে গত ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সংক্রমণ বাড়তে থাকে এবং মে, জুন, জুলাই মাসে সংক্রমণের বড় ধাক্কা আসে। বর্তমানে এই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিকের দিকে মনে হলেও সংক্রমণের মাত্রা এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
একইসঙ্গে বিপজ্জনক পর্যায়ে আছে।
সংক্রমণের এই পরিস্থিতির মধ্যেই আসছে শীত।
ফলে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে জোরালোভাবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, এখনও প্রথম ধাক্কাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হলে তা বিস্ফোরক আকার ধারণ করবে। এ পর্যায়ে সংক্রমণের মাত্রা আগের চেয়ে বেশি হলে কোনো কিছুই আর নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।
এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই একমাত্র উপায় বলে জানান তারা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত এর কোনো স্থায়ী সমাধান নেই। টিকা আসার আগ পর্যন্ত প্রাণঘাতী এই করোনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা। এর জন্য স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলা ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা খোলা নেই।
তারা বলেন, করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং দ্বিতীয় ওয়েভ মোকাবিলায় এখন থেকেই কার্যকর প্রস্তুতি নিতে হবে। এরইমধ্যে সরকার যে কর্মসূচি নিয়েছে তা বাস্তবায়ন জোরদার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে মানুষকে ব্যাপক হারে সচেতন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করারও পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, “ভ্যাকসিন বাজারে না আসা পর্যন্ত করোনা থাকবে, যাবে না। শীতকালে আমাদের জন্য ভয় আছে। এরইমধ্যে ইউরোপের দেশগুলোতে দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের দেশের মানুষ তো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না। হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখার বিকল্প কোনো উপায় নেই। ”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এমএইচ চৌধুরী লেলিন (লেলিন চৌধুরী) বলেন, “অনেক দেশেই প্রথম ওয়েভ নিয়ন্ত্রণের পর ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হয়েছে। আমরা প্রথম ওয়েভই নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি, এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা পরিকল্পনা করেছি কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। ঢাকা শহরে ৪৫টি রেড জোন করে মাত্র দুইটিতে লকডাউন দেওয়া হয়েছিলো। এই প্রথম ওয়েভেরই বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। ”
তিনি বলেন, “প্রথম হোক আর দ্বিতীয় হোক, সংক্রমণ যাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে না পারে সে জন্য নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম এখনই জোরদার করতে হবে। ”
রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রাক্তন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকরর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “শীতকাল আসছে, তবে শীত বিষয় নয়, বিষয় হলো শুষ্ক মৌসুমে সামাজিক মেলামেশা বেশি হয়। এর ফলে সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি অবশ্যই রয়ে গেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং চিকিৎসা, এই দুইটিতেই আমরা দুর্বল। ”
আমাদের দেশে বর্তমানে সংক্রমণ কমলেও এখনও বিপদজনক অবস্থায় আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই অবস্থায় সংক্রমণ বাড়লে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এখন হয় তো হাসপাতালে সিট পাওয়া যাচ্ছে। সংক্রমণ অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গেলে হাসপাতালে সিট সংকট দেখা দেবে। রোগীর সংখ্যা হাসপতালের ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে বড় ধরণের বিপর্যয় হবে। একটা বড় ধাক্কা গেছে। দ্বিতীয় ধাক্কাটা আগের চেয়ে বেশি হলে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হবে। ”
সামাজিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে মানুষকে সচেতনভাবে চলার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারের যে কর্মসূচিগুলো আছে তা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।