রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | শিরোনাম | সাবলিড » আরব বিশ্বের বিশ্বাসঘাতকতায় ফিলিস্তিন স্বপ্ন ক্ষীণ
আরব বিশ্বের বিশ্বাসঘাতকতায় ফিলিস্তিন স্বপ্ন ক্ষীণ
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ সবশেষ আরব দেশ হিসেবে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিয়েছে বাহরাইন। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার এ কথা জানান। ট্রাম্প প্রশাসন এ নিয়ে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। গত মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা জানায়।
শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ইসা আল খলিফার সঙ্গে কথা বলেন। এরপর যৌথ বিবৃতি দিয়ে চুক্তিতে উপনীত হওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, বাহরাইন ও ইসরায়েল। ট্রাম্প এই চুক্তিকে ‘যুগান্তকারী পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
প্রথম উপসাগরীয় দেশ হিসেবে এক মাসে আগে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। এক মাস না পেরোতেই উপসাগরীয় দ্বিতীয় দেশ এবং মিসর, জর্ডান ও আমিরাতের পর আরব বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিল বাহরাইন।
ট্রাম্প বলেছেন, হোয়াইট হাউসে ১৫ সেপ্টেম্বর আমিরাত-ইসরায়েল চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাহরাইনও যোগ দেবে। অথচ দশকের পর দশক ধরে আরব দেশগুলো ইসরায়েলকে বয়কট করে আসছিল। ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান হলেই কেবল ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন হতে পারে, এমন ইঙ্গিত ছিল এসব দেশের।
মিসর ১৯৭৯ সালে এবং ১৯৯৪ সালে জর্ডান ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে ইসরায়েলের হয়ে মাঠে নেমেছে তাতে করে অদূর ভবিষ্যতে সৌদি আরব, কুয়েত, ওমানসহ অন্যান্য দেশও ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থাপন করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
মার্কিনপন্থী এবং সৌদি বলয়ভূক্ত হিসেবে পরিচিত দেশগুলো ছাড়াও আরব বিশ্বের এসব মিত্র দেশের বিরোধীরাও বাহরাইন-ইসরায়েলের কথিত এই শান্তি চুক্তি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিশেষ করে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বে ফিলিস্তিনের পক্ষের দেশগুলো নিন্দা জানালেও বাকিরা একে স্বাগত জানিয়েছে।
আমিরাত-ইসরায়েল শান্তি চুক্তির সময় ফিলিস্তিন স্বাধীনতাকামী দ্য প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) একে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে অভিহিত করে বলেছিল, এটা ফিলিস্তিনের মানুষের পিঠে ছুরিকাঘাত। পিএলও এখন বলছে, বাহরাইন-ইসরায়েল চুক্তি ফিলিস্তিনিদের ওপর আরেকটি বিশ্বাসঘাতকতার ছুরিকাঘাত।
তবে চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে এর আগে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী তিন আরব দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর এবং জর্ডান। আমিরাত বলছে, ইসরায়েল-বাহরাইন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বে শান্তি ও পারস্পরিক সহযোহিতা বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে তাদের বিশ্বাস।
ইসরায়েল এবং বাহরাইন দ্বি-পাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে তার প্রশংসা করে বক্তব্য দিয়েছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। এক টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার সঙ্গে ফিলিস্তিন ইস্যুর স্থায়ী সমাধানের পথ দেখাবে।
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান সাফাদি এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই অঞ্চলে সুষ্ঠু ও স্থায়ী শান্তি অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো ইসরায়েলের দিক থেকে আসা উচিত। ইসরায়েলের উচিত দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে দুর্বল করে তাদের নেয়া এমন প্রক্রিয়াগুলো এবং ফিলিস্তিনের জমির অবৈধ দখল বন্ধ করা উচিত।
তবে আরব বিশ্বের মোড়ল এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব বাহরাইন-ইসরায়েল চুক্তি নিয়ে কোনো মন্তব্যই করেনি। আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের মাত্র দুই দিন পর ইসরায়েল-বাহরাইন চুক্তির ঘোষণা আসলো। ১৯ সেপ্টেম্বরের ওই বৈঠকে ইসরায়েল-আমিরাত চুক্তির নিন্দাও জানানো হয়নি।
চুক্তির পরপরই ইরান এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, বাহরাইন এখন থেকে ইসরায়েলের অপরাধের অংশীদার হয়ে গেল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘বাহরাইনের শাসকরা এখন থেকে এই অঞ্চল ও ইসলামের সুরক্ষার নিয়মিত হুমকি হিসেবে ইহুদিবাদী একটি সরকারের অপরাধের অংশীদার হবেন।’
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বের বিবেকবান মানুষ এবং মুসলমানেরা কখনোই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকে মেনে নেবে না। পারস্য উপসাগরে ইসরায়েল কোনো অনিরাপত্তা সৃষ্টি করলে এর সম্পূর্ণ দায় বাহরাইনসহ ইসরায়েলের সহযোগী দেশগুলোকে বহন করতে হবে।
ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বাহরাইনের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ফিলিস্তিনের অধিকার রক্ষার চেষ্টায় এটা এক নতুন আঘাত। ফিলিস্তিনে আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়া এবং ফিলিস্তিনের ভূমি দখল স্থায়ী করতে ইসরায়েলে অবৈধ প্রচেষ্টাকে এটি আরও উৎসাহিত করবে।’