বুধবার, ১৯ আগস্ট ২০২০
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার কি কি বিষয়ে বৈঠক হয়েছে?
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার কি কি বিষয়ে বৈঠক হয়েছে?
বিবিসি২৪নিউজ,কূটনৈতিক প্রতিবেদক,ঢাকা : মহামারী করোনাভাইরাসের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাক্ষাৎ দেওয়ায় আমি খুশি বলে জানিয়েছেন,ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। বুধবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা বলেন।এর আগে ঢাকায় সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা হোটেল সোনারগাঁওয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, এখন সারা বিশ্বেই করোনা মহামারী চলছে। তবে এই করোনাভাইরাসের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সাক্ষাৎ দিয়েছেন, এতে আমি খুশি।
তিনি আরও বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে দুই দেশ আরও ঘনিষ্ঠভাবে কীভাবে কাজ করতে পারে, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
করোনা মহামারী চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণত দেশি-বিদেশি কূটনীতিকদের সাক্ষাৎ দেননি। তবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা আকস্মিক সফরে ঢাকা এলেও তাকে সাক্ষাৎ দিয়েছেন। ১৮ আগস্ট রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শ্রিংলা।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে ১৮ আগস্ট ঢাকায় এসেছেন শ্রিংলা। আজ তার ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হওয়ার পর এটি ঢাকায় তার দ্বিতীয় সফর। এর আগে চলতি বছর ২ মার্চ দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি ১ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
পররাষ্ট্র সচিবের সাক্ষাৎ শেষে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাস বলেন, উভয় দেশের মধ্যে চলমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে।
করোনা সংক্রমণ শুরুর পর কোনো বিদেশি অতিথির সঙ্গে এটাই প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সাক্ষাৎ।
হর্ষবর্ধন শ্রিংলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন যে, করোনা মহামারীর কারণে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসতে না পারায় তাকে পাঠিয়েছেন।
নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শ্রিংলা জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভারত স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও শ্রিংলাকে পাঠানোর জন্য মোদির সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন।
এছাড়া মহামারীর মধ্যেও উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান। এ সময় সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়েও কথা হয়। আজ পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার গণভবনে আরও যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে তার মধ্যে- কোভিড পরবর্তী সহযোগিতার বিষয়ে উভয় পক্ষই গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে ভ্যাকসিন সুবিধা বাংলাদেশ কিভাবে পেতে পারে তা আলোচনায় এসেছে।
করোনাপরবর্তী অর্থনীতি নিয়ে ভারতের পরিকল্পনা সম্পর্কে শ্রিংলা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এখন আবার নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে ভারতীয় ঋণের (এলওসি) প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করা হবে।
সম্প্রতি ভারত সরকার বাংলাদেশকে ১০টি রেল ইঞ্জিন অনুদান হিসেবে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুশি হয়েছেন বলে শ্রিংলাকে জানিয়েছেন। এছাড়া ভারতের পক্ষ থেকে নতুন প্রস্তাব হিসেবে ‘বাবল ট্রাভেল’ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ এর আওতায় যেসব ফ্লাইট চলবে সেগুলোতে শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের যাত্রীরাই যাতায়াত করতে পারবেন। অন্য কোনো দেশের যাত্রী চলাচল করতে পারবেন না। এর উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশের রোগীরা যাতে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন। এছাড়া দু’দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যাতে যাতায়াত বৃদ্ধি পায়।
এ প্রস্তাবে রাজি হলে রোগী ও ব্যবসায়ীদের জন্য সীমিত পর্যায়ে ভিসা চালু করবে ভারত। রোহিঙ্গা ইস্যুটি আলোচনায় এসেছে। এ সময় শ্রিংলা জানান, ভারত চায় রোহিঙ্গারা নিরাপদে এবং টেকসই উপায়ে তাদের দেশে ফিরে যাক।
এর বাইরে কোভিড পরবর্তী সময়েও দ্বিপাক্ষিক অন্যান্য সহযোগিতা চালুর বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। এক্ষেত্রে ত্রিপুরা যাওয়ার জন্য গোমতী রোড এবং অভ্যন্তরীণ নৌরুট চালু করা হবে বলে জানানো হয়।
এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি এবং মুজিববর্ষ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কানেক্টিভিটি, আইটি, পরমাণু, জনগণ পর্যায়ে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যতে পরিবেশগত ও যুব সমাজের উন্নয়নে সহযোগিতার বিষয়ও আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে।
এ সময় বলা হয়, করোনাপরবর্তী উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। মধ্যম আয়ের দেশ হতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত।