সোমবার, ১০ আগস্ট ২০২০
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভর করছে সরকার,২৬ দিনে ৬০০০ কোটি?
ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভর করছে সরকার,২৬ দিনে ৬০০০ কোটি?
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা :কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের শুরুতেই বাড়তি খরচ মেটাতে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে সরকারের। (২০২০-২১) অর্থবছরের প্রথম ২৬ দিনে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ছয় হাজার কোটি টাকার ওপর ঋণ নিয়েছে সরকার। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। কমে গেছে সরকারের রাজস্ব আহরণ।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর বাজেটের ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক খাত থেকে ঋণ করে সরকার। গত বছর ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা এবং চলতি বছর থেকে শুরু হয় করোনার মহামারি। ফলে লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার। অন্যদিকে নানা শর্তে সঞ্চয়পত্রেও বিনিয়োগ কমেছে। সব মিলিয়ে বাজেটের বাড়তি ব্যয় মেটাতে অতি মাত্রায় ব্যাংক ঋণনির্ভরতায় ঝুঁকে পড়েছে সরকার।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের এমন ঋণনির্ভরতা ঠিক নয়। কারণ, এতে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এক লাখ নয় হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে বলে পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছর ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকাসহ মোট ২৫ হাজার কোটি টাকা নেবে বলে জানিয়েছে সরকার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ২৬ দিনে (২৬ জুলাই পর্যন্ত) সরকার বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে আট হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার কোনো ঋণ না নিয়ে উল্টো আগের নেয়া ঋণের দুই হাজার ১৩৯ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। ফলে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ১৪৯ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খারাপ। ঠিক মতো রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার। এছাড়া নানা শর্তের কারণে সঞ্চয়পত্রের বিক্রিও কমেছে। এসব কারণে ব্যয় মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে সরকার।
তিনি বলেন, এখন বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি অনেক কম। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে বেসরকারি ঋণ বাড়ানোর বিকল্প কোনো উপায় নেই। এজন্য যেকোনো উপায়ে এ খাতে ঋণ বাড়তে হবে।
সরকারের ব্যাংক ঋণনির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দিয়ে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারের উচিত অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশি উৎস থেকে কম সুদে ঋণ আনার ওপর বেশি জোর দেয়া।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকার যদি ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় তাহলে বেসরকারি খাতে এর প্রভাব পড়বে। এটা তো স্বাভাবিক। কারণ ব্যাংকের নির্দিষ্ট অর্থ থেকেই ঋণ যাবে। এক খাত বেশি পেলে অন্য খাতের অর্থ কমে যাবে। এজন্য চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের নতুন করে ভাবা প্রয়োজন।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতিতে চলতি অর্থবছরের জন্য বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আগের বছরের মতো অপরিবর্তিত রেখে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও গত অর্থবছর ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। এছাড়া চলতি অর্থবছর সরকারের ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৫ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। মূল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এটি এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা কম।