মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | ফটোগ্যালারি | বিশেষ প্রতিবেদন » বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে নতুনভাবে পরিচিতি দিয়েছি-একান্ত সাক্ষাৎকারে- খান শওকত
বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে নতুনভাবে পরিচিতি দিয়েছি-একান্ত সাক্ষাৎকারে- খান শওকত
বিবিসি২৪নিউজ,এম ডি জালাল,নিউইয়র্ক, থেকে ফিরে: জাদু মানে পারফর্মিং আর্ট একটা শিল্প। বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে এর কদর দুনিয়ার সব দেশেই। ১৫০০ শতকের শেষের দিকে কলাকৌশলনির্ভর জাদু জনপ্রিয় হতে থাকে। সপ্তদশ শতকে এ নিয়ে বই প্রকাশ হয়। অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত জাদু ছিল মেলার একটি বিনোদন অনুষঙ্গ। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে বড় বড় নাট্যমঞ্চে জাদু প্রদর্শন করা হতো। সময়ের ধারায় এটা টেলিভিশনের বিনোদনমাধ্যমও হয়ে দাঁড়ায়। এখন তো ইউটিউবে সার্চ করলেই জাদু আর জাদু।
বাংলাদেশে জাদু জনপ্রিয় করার নেপথ্যে একজনের কথাই বলতে হয় সবার আগে। তিনি খান শওকত, পথে হেঁটে চলা, বাতাসে ভেসে বেড়ানো, মানুষকে দ্বিখণ্ডিত করা আরও সব অদ্ভুত কর্মকাণ্ড, বেশি কড়া নাড়ে তার জাদুবিদ্যা। নানা শ্বাসরুদ্ধকর খেলা দেখিয়ে দুনিয়া মাতাচ্ছেন অসংখ্য বিখ্যাত সব জাদুকর। বিশ্বকাঁপানো এমন সব জাদুকরের বিখ্যাত হওয়ার কাহিনী নিয়েই আজকের আয়োজনে ববিবিসি নিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন,আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালিদের মধ্যে অন্যতম খান শওকত।
জাদুশিল্পকে তিনি সব রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দিয়ে বিশ্বের বুকে বাংলা ও বাঙালিকে গৌরবোজ্জ্বল জাতি হিসেবে পরিচিত করিয়েছেন,জাদুকে যিনি বিনোদন থেকে শিল্পের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি আর কেউ নন, জাদুকর খান শওকত। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে নতুনভাবে পরিচিতি দিয়েছেন এই জাদুকর। তিনি শুধু জাদুশিল্পীই নন; একাধারে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচনা করেছেন অসংখ্য নাটক।
আমেরিকাস্থ ইন্টারন্যাশনাল ম্যাজিশিয়ান্স সোসাইটি থেকে ড. অব ম্যাজিক এবং মারলিন এ্যাওয়ার্ড বিজয়ী নিউইয়র্ক প্রবাসী জাদুশিল্পী খান শওকতের উদ্যোগে মুজিব শতবর্ষে বাংলাদেশ আমেরিকা ম্যাজিক সোসাইটির ব্যানারে করোনাকালে বিপদগ্রস্ত জাদুশিল্পীদেরকে উৎসাহ প্রদান, তাদের সৃজনশীল চিন্তার মানোন্নয়ন ও সহযোগিতার উদ্দেশ্যে প্রতিমাসে আমেরিকা থেকে অনলাইন জাদু প্রতিযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি ।
অংশগ্রহনকারী প্রতিযোগিকে জাদু প্রতিযোগিতার জন্য ১টা আইটেম নিয়ে ম্যাজিক করতে হবে। ১ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ তিন মিনিটের ভিডিও হতে হবে। ভিডিওতে কোন প্রকার এডিটিং করা যাবেনা। ফলাফল ঘোষনার পূর্বে এসব ভিডিও ইউটিউব বা কোন গ্রুপে প্রচার করা যাবে না। নির্ধারিত ম্যাজিক কম্পিটিশন ইন বাংলাদেশ ফেসবুক গ্রুপে অনলাইন জাদু প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। এই গ্রুপেই প্রতিযোগিদের ভিডিও পাঠাতে হবে।
এখানে দর্শকদেরও মতামত নেয়া হবে। যে সকল প্রতিযোগীর ভিডিও থাকবে দর্শকরা যে কেউ বিচারক হিসেবে তাদের ভিডিওর নিচে কমেন্ট বক্সে ১ থেকে ১০ এর মধ্যে নাম্বার দিন। সর্বোচ্চ নং ১০ এবং সর্বনিম্ন ১নং। প্রতিমাসের ২১ থেকে ২৪ তারিখ বিচার বিবেচনা চলবে। ২৫ তারিখে চুড়ান্ত ফলাফল ঘোষনা করা হবে। ৩০ তারিখে বিকাশে টাকা পেয়ে যাবেন বিজয়ীরা। তাদের সনদপত্র আমেরিকা থেকে পাঠানো হবে।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারীদের কাছ থেকে কোন রেজিষ্ট্রেশন ফিস নেয়া হবে না। বিজয়ীদের ১ম পুরস্কার: 3 হাজার ’ টাকা ও সনদপত্র। ২য় পুরস্কার 2 হাজার টাকা ও সনদপত্র। ৩য় পুরস্কার 1’হাজার টাকা ও সনদপত্র। হে সৌভাগ্যবান, তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ। খান শওকত বলেন, করোনায় জাদুশিল্পীদের কোন শো নেই, কোন ইনকাম নেই। তাদের মনোবল ভেঙে পড়েছে। তারা সারাজীবন মানুষকে বিনোদন দিয়ে তাদের জীবনকে উৎসাহিত করেন।
তিনি বলেন,তাদের পাশে কেউ নেই। তারাওতো মানুষ। তাদেরও পারিবারিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাদেরকেও উৎসাহ দেয়া দরকার। অন্যান্য শিল্পীদের মতো তারাও বেশ অভিমানী। মনে কষ্ট নিয়ে বসে থাকবে, কিন্তু কারো কাছে হাত পাতবে না। শিল্পীরা এমনই হয়। সবকিছু বিবেচনা করে এদের উৎসাহ ও কল্যানে গত ৭ জুলাই থেকে বাংলাদেশের একজন নন্দিত জাদুশিল্পীর একান্ত তত্বাবধানে এবং একদল সিনিয়র জাদুশিল্পীর সহযোগিতায় প্রতিমাসে নিয়মিত প্রতিযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছি।
যারা বিজয়ী হবেন, তাদেরকে নিয়ে ভবিষ্যতে আরও ব্যাপক উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের। এখানে একজন ম্যাজিশিয়ান আরেকজন ম্যাজিশিয়াানের পারফরমেন্স দেখার সুযোগ পাবেন, এবং তাকে ভোট দেবারও সুযোগ পাবেন। এতে করে পারস্পরিক সম্মান ও বন্ধুত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে। যোগ্য শিল্পীরা এগিয়ে যাবেন। খান শওকত আরও বলেন, এই করোনাকালে ঘরে বসে আপনার মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে প্রতিমাসে পুরস্কার জিতে নিন এবং বিশ্বব্যাপী আপনার প্রদর্শনী সর্বত্র পৌঁছে দিন।
১৯৮৫ সালে ঢাকার প্রথম জাদুশিক্ষা প্রতিষ্ঠান মডার্ন ম্যাজিক একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেছিলাম খান শওকত। এরপর ১৯৯০ সালে আমেরিকাতে চলে আসার পর এখানে অদ্যাবধি জাদুপ্রদর্শনী করছি। বিভিন্ন দেশের জাদুশিল্পীদের সাথে তার পরিচয় আছে। বাংলাদেশের জাদুশিল্পের কল্যানে আমরা সকল জাদু সংগঠনের এবং সকল জাদুশিল্পীর আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি। যেহেতু এঅনলাইন প্রতিযোগিতা মুজিব বর্ষে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তাই সবার প্রতি অনুরোধ, সম্ভব হলে মুজিব বর্ষের লোগোর সামনে অথবা বঙ্গবন্ধুর ছবির সামনে দাঁডিয়ে ম্যাজিক করুন।
তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে একটা স্বপ্ন ধরে পথে নেমেছে। সবার অংশগ্রহনে একটি সফল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে, এবং বাংলাদেশের একদল প্রত্যয়ী তরুনকে বিশ্বের সামনে নিয়ে আসবে।
নিউইয়র্ক প্রবাসী জাদুশিল্পী খান শওকতের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ আমেরিকা ম্যাজিক সোসাইটির উদ্যোগে করোনার ক্রান্তিকালে বিপদগ্রস্ত জাদুশিল্পীদেরকে উৎসাহ প্রদান, তাদের সৃজনশীল চিন্তার মানোন্নয়ন ও সম্ভাব্য সহযোগিতার উদ্দেশ্যে প্রতিমাসে আমেরিকা থেকে ভার্চুয়াল জাদু প্রতিযোগিতার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
দেশী বিদেশী বিচারকদের ও উপদেষ্টাদের ভোট নিয়েছি। সবার মুল্যবান মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ আমেরিকা ম্যাজিক সোসাইটির নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্তে চুড়ান্ত ফলাফল তৈরী করা হয়েছে। যিনি বিজয়ী হতে পারলেন না, তারও ম্যাজিকের কিন্তু প্রচার হচ্ছে অনলাইনে বিশ্বব্যাপী। একজন শিল্পীর জন্য এটাও কিন্তু একটা প্লাসপয়েন্ট। কার ভাগ্য যে কিভাবে খুলবে কেউ বলতে পারেনা। জানেনতো, প্রতিযোগিতা মানেই কেউ হারবেন, আর কেউ জিতবেন। এতে সবাইকে খুশী করা যায় না। তবে সকল নিয়মে নিরপেক্ষভাবে বিচারের চেষ্টার কোনো ত্রুটি আমরা করিনি। আজ (২৫ জুলাই ২০২০) ঘোষনা হচ্ছে বাংলাদেশের ১ম ভার্চুয়াল জাদু প্রতিযোগিতার জুলাই মাসের ফলাফল। ১ম হয়েছেন: পাবনার সন্তান, ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা এইচ আর বিজয়। ২য় হয়েছেন: কুষ্টিয়া নিবাসী সেলিম আহমেদ। ৩য় হয়েছেন: ফেনী নিবাসী জে.কে মাসুদ রানা। এবং শান্তনা পুরস্কার পেয়েছেন মাত্র ৫ বছর বয়ষী শিশু প্রতিযোগি খুলনার কুমার শুভ্রদেব। ৪ বিজয়ীর কাছে সনদপত্র আমেরিকা থেকে প্রেরন করা হবে এবং বিজয়ীদের পুরস্কারের টাকা বিকাশ নাম্বারে আগামী ৫ দিনের মধ্যে পৌছে যাবে।
এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ আমেরিকা ম্যাজিক সোসাইটির সাথে সহযোগী সংগঠন হিসেবে আছে: ওয়ার্লড হিউম্যান রাইটস এ্যন্ড ডেভেলপমেন্ট, জুপিটার ম্যাজিক ইন্টারন্যাশনাল, শাহমনি জাদু একাডেমী, রুপান্তর ম্যাজিক একাডেমী, কেরানীগন্জ কেরানীগঞ্জ ম্যাজিক সোসাইটি, চট্টগ্রামের ভিশন ম্যাজিক একাডেমী এবং ভানুমতির খেল ম্যাজিক ইন্টারন্যাশনাল।
তিনি আরও বলেন: সবার দোয়া মাথায় নিয়ে, প্রতিমাসে নিয়মিতভাবে আমাদের প্রতিযোগিতা চলবে। আমরা সবাইকে সুযোগ দিতে চাই। করোনার এই দূর্দিনে জাদুশিল্পীদের মন ভালো রাখতে চাই। যে ৩ জন আজ বিজয়ী হলেন, তারা আর আমাদের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন না। এই ৩ জন আমাদের সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করবেন।
বাংলাদেশের ও প্রবাসের একদল জাদুশিল্পীর সহযোগিতায় এভাবে প্রতিমাসে নিয়মিত প্রতিযোগিতা চলবে। যারা বিজয়ী হবেন, তাদের নিয়ে ভবিষ্যতে আরও ব্যাপক উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের।
খান শওকত ১৯৯০ সাল থেকে আমেরিকাতে জাদুপ্রদর্শনী করছেন। বিভিন্ন দেশের জাদুশিল্পীদের সাথে তার পরিচয় আছে। বাংলাদেশের জাদুশিল্পের কল্যানে সকল জাদু সংগঠনের এবং সকল জাদুশিল্পীর আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছেন তিনি।