রবিবার, ২১ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় » করোনার চিকিৎসায় ডেক্সামিথাসোন ওষুধের ব্যবহারের পরামর্শ
করোনার চিকিৎসায় ডেক্সামিথাসোন ওষুধের ব্যবহারের পরামর্শ
বিবিসি২৪নিউজ,ডা. শৈবাল: যুক্তরাজ্যের একদল বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন, করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় জীবন রক্ষাকারী একটি ওষুধের খোঁজ পেয়েছেন তারা। তাদের দাবি, ডেক্সামিথাসোন নামে এ ওষুধ স্বল্প মাত্রায় প্রয়োগের ফলে তা করোনাভাইরাস চিকিৎসায় দারুণ কাজ করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওষুধটি সম্পর্কে কিছু বলা প্রয়োজন বলে মনে করছি। কেউ ইচ্ছা করলেই ওষুধটি ব্যবহার করবেন আর করোনা ভালো হয়ে যাবে, ব্যাপারটা মোটেই এমন নয়। বরং চিকিৎসক কর্তৃক প্রয়োগ ছাড়া কেউ নিজে থেকে তা প্রয়োগ করলে তার হিতে বিপরীত হতে পারে।
ডেক্সামিথাসোন একটি স্টেরয়েড ধরনের ওষুধ। স্টেরয়েড দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি কমায়। স্টেরয়েড আবার ইমিউনিটির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট ক্ষতিকর অবস্থাও কমায়, যেটা আইসিউতে অনেক রোগীর ক্ষেত্রে সাইটোকাইনস স্টর্মে হচ্ছে কোভিড-১৯-এ। এজন্য ডেক্সামিথাসোন শুধু হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শ্বাসকষ্টের বা আইসিউতে থাকা রোগীর ক্ষেত্রেই ব্যবহারের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে, মৃদু উপসর্গ নিয়ে বাসায় অবস্থান করা রোগীর ক্ষেত্রে নয়। প্রতিষেধক হিসেবে তো প্রশ্নই ওঠে না। কোভিড-১৯ রোগীর যেহেতু ইমিউনিটি বাড়ানো প্রয়োজন, সেহেতু ডেক্সামিথাসোন খেয়ে করোনায় আক্রান্ত রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে আরও দুর্বল করে দেহে করোনাভাইরাসের বংশ বিস্তার করার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে দেয়ার পক্ষে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।
দীর্ঘদিন স্টেরয়েড সেবনে দেহে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। স্টেরয়েড দেহে লবন ও পানি জমা করে দেহকোষগুলোর ফাঁকে ফাঁকে। ফলে দীর্ঘদিন কেউ এটা খেলে সে মোটা হয়ে যায়। তার মুখটা হয়ে যায় অনেকটা বেলের মতো গোল ও মসৃণ, ঘাড়টা ষাঁড়ের ঘাড়ের মতো ফোলা ও উঁচু, পেটটা শারদ পূর্ণিমার পূর্ণচন্দ্রের মতো বিকশিত! অতীতে তো বটেই, এখনও অনেক হ্যাংলা পাতলা স্বাস্থ্যের, তালপাতার সেপাই ধরনের মানুষ এটা কয়েক মাস টানা খেয়ে মোটা হওয়ার চেষ্টা করে, ঠিক যেন ওষুধ খাইয়ে গরু মোটাতাজাকরণের মতো! এটার নাম কুসিংস সিন্ড্রোম। বাত, হাঁপানিসহ কিছু রোগ ইমিউনিটির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির দ্বারা ঘটে বলে অনেকেই সেসব রোগের উপসর্গ থেকে মুক্ত হয়ে আরাম পায়। এ কারণে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই বছরের পর বছর স্টেরয়েড খেয়ে অবশেষে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, চোখে ছানিপড়া, হাড়ক্ষয় ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়ে এবং পটকা মাছের মতো মোটা হয়ে চিকিৎসকের কাছে হাজির হয়।
ডা. শৈবাল : চিকিৎসক