শুক্রবার, ১৯ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | শিরোনাম | সাবলিড » ভারতীয় ১০ সেনাকে মুক্তি দিয়েছে- চীন
ভারতীয় ১০ সেনাকে মুক্তি দিয়েছে- চীন
বিবিসি২৪নিউজ,অমিত ঘোষ,দিল্লি থেকে : চীনের লাদাখ সীমান্তে সেনাবাহিনীর সাথে সংঘাতের জের ধরে আটক হওয়া ১০ জন ভারতীয় সৈন্যকে মুক্তি দিয়েছে চীন।ভারতের সংবাদ মাধ্যম এই খবর জানিয়েছেন।
সোমবার সেনাবাহিনীর কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকা জানিয়েছে যে ছাড়া পাওয়াদের মধ্যে একজন লেফটেন্যান্ট-কর্ণেল এবং তিনজন মেজর পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন।
তবে ভারত সরকার এই খবর সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি। তাদের সেনাবাহিনীর কোন সদস্য যে নিখোঁজ ছিলেন, সেই তথ্যও নিশ্চিত করেনি ভারত।
গালওয়ান উপত্যকায় হওয়া সংঘাতে অন্তত ২০ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয় এবং সংঘাতের পর দুই দেশের মধ্যে এক ধরণের উত্তেজনা তৈরি হয়।
ঐ ঘটনায় আরো অন্তত ৭৬ জন ভারতীয় সৈন্য আহত হলেও চীন স্বীকার করেনি যে সংঘাতে তাদের কোনো সৈন্য হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় সেনা বাহিনী দাবি করেছে গালওয়ান ভ্যালির সংঘর্ষে চীন এই হাতে তৈরি লোহার রড অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছে
দুই পক্ষই অপর পক্ষের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলেছে। লাদাখ অঞ্চলে দুই দেশের সীমানা যথাযথভাবে নির্দেশিত নয় এবং সেখানে আবহাওয়ায় বড় ধরণের পরিবর্তনের সাথে সাথে সীমান্তরেখাও পরিবর্তিত হতে পারে।
এই গালওয়ান উপত্যকার আবহাওয়া অত্যন্ত বৈরি, সেই সাথে এর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক ওপরে। এলাকাটি যে কোনরকম ভূ-প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ঝুঁকির মুখে থাকে, যা স্পষ্ট সীমানা নির্ধারণ আরও কঠিন করে তোলে।
ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকার সিনিয়র সম্পাদক শিভ আরুরের মতে, ভারতীয় সৈন্যদের মুক্তি দেয়া দুই দেশের আলোচনা সফল করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
To those asking, (and since it’s been reported now) — that’s what my tweet below 6 hours ago was meant to convey. And since the story will be in tomorrow’s papers, if you’re interested in hearing about it from me, here you go: https://t.co/xsMJtUWdaW pic.twitter.com/lxfQKb608N
দুই দেশের সৈন্যদের সংঘাতে যেই লোহার রড ব্যবহার হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, সেই পেরেক লাগানো রডের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতীয় সৈন্যদের মুক্তি দেয়ার খবরটি প্রকাশিত হয়।
ইন্দো-চীন সীমান্তের একজন ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা পেরেক লাগানো লোহার রডের ছবি পাঠান এবং দাবি করেন যে চীনের সৈন্যরা ঐ অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অজয় শুক্লা প্রথম এই ছবি টুইটারে দেন এবং এধরনের অস্ত্র ব্যবহারকে “বর্বরতা” বলে বর্ণনা করেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবিটি ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। তবে চীন বা ভারত কোনো দেশের সেনাবাহিনীই এই অস্ত্র ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে খাড়া পর্বতের প্রায় ১৪ হাজার ফুট (৪,২৬৭ মিটার) উচ্চতায় দুই দেশের সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে এবং কিছু সৈন্য পা পিছলে খরস্রোতা গালওয়ান নদীতে পড়ে গেছেন, যেখানে শৈল প্রবাহের তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের নিচে।
চার দশকে প্রথম মৃত্যু
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও চীনের মধ্যে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় ছোটখাট সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও ৪৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।
সীমান্তে শেষবার গোলাগুলির ঘটনা ঘটে ১৯৭৫ সালে যখন অরুণাচল প্রদেশের একটি প্রত্যন্ত গিরিপথে চারজন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়েছিল।
এরপর দুই দেশের মধ্যে ১৯৯৬ সালে চুক্তি হয় যে, এলএসির দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোন পক্ষই গোলাগুলি চালাবে না বা কোন কারণে কোনরকম বিস্ফোরক ব্যবহার করবে না।
প্যাংগং সো লেক - এ সপ্তাহের শুরুতে এই এলাকায় দুই দেশের সৈন্যদের মধ্যে হাতাহাতির খবর পাওয়া যায়
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআই অসমর্থিত সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছে, এই সংঘর্ষে ৪৩জন চীনা সৈন্য হতাহত হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু চীন এখনও পর্যন্ত হতাহত নিয়ে কোন তথ্য দেয়নি। কিছু ভারতীয় সৈন্য এখনও নিখোঁজ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে ভারতীয় সেনা সদস্য নিখোঁজের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয় যে সংঘর্ষে অংশ নেয়া তাদের সব সদস্যেরই হিসাব রয়েছে তাদের কাছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেয়া এক বক্তব্যে অভিযোগ করেছেন যে ভারত দু’বার সীমান্ত অতিক্রম করেছে এবং ‘চীনের সেনাদের উস্কানি দিয়েছে এবং আক্রমণ করেছে।’
বুধবার চীন ‘গালওয়ান উপত্যকা অঞ্চলে আধিপত্য’ প্রতিষ্ঠার দাবি করলেও ভারত সেই দাবিকে ‘অতিরঞ্জিত ও অসমর্থনযোগ্য’ বলে বাতিল করে দিয়েছে।
ঐ সংঘাতের পর দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে ফোনে কথা হয়েছ বলে জানান ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব।
তিনি জানান যে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীই এই পরিস্থিতি ‘দায়িত্বশীলভাবে সামাল দেয়ার ব্যাপারে একমত’ হয়েছেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুব্রাহ্মানায়াম জয়শঙ্কর ও চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং সি’র মধ্যকার আলোচনার পর ভারত এক সরকারি বিবৃতি প্রকাশ করে, যেখানে চীনের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লাদাখ সীমান্তের ভারতীয় অংশে একটি স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টার অভিযোগ তোলা হয়।
ঐ বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয় যে চীনা বাহিনীর ‘পূর্ব পরিকল্পিত ঐ পদক্ষেপই সহিংসতা ও প্রাণহানির কারণ’ এবং চীনের প্রতি আহ্বান জানানো হয় যেন তারা ‘ভুল সংশোধন করার পদক্ষেপ’ নেয়।
ওদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং সি’র বরাত দিয়ে প্রকাশিত চীনের বিবৃতিতে দাবি করা হয়: “চীন আবারো ভারতের পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা জানাচ্ছে এবং ভারত যেন পুরোদস্তুর তদন্ত চালায় সেই দাবি জানাচ্ছে…পাশাপাশি সব ধরণের উস্কানিমূলক পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে যেন ভবিষ্যতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।