মঙ্গলবার, ৯ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশে করোনা ৯০দিনে সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী,মহামারির দিকে যাচ্ছে-দেশ
বাংলাদেশে করোনা ৯০দিনে সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী,মহামারির দিকে যাচ্ছে-দেশ
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা: বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে তিন মাস পুরো হয়েছে ৮ই জুন। এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৬৮ হাজার ৫০৪ জন, মারা গেছেন ৯৩০ জনে। সরকারের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, সংক্রমণ বাড়ার এই ধারা লম্বা সময় ধরে চলতে পারে, তবে তাদের মতে সংক্রমণ এখনো লাফিয়ে লাফিয়ে ব্যাপক সংখ্যায় বাড়ছে না। একই সাথে কবে থেকে তা কমতে শুরু করবে তা এখনো তারা বলতে পারছেন না।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম মাসে অর্থাৎ মার্চ মাসে রোগী শনাক্ত হয়েছিল ২১৮ জন। পরের মাসে শনাক্ত হয় প্রায় ১৩ হাজার রোগী। কিন্তু তৃতীয় মাসে এসে এখন পর্যন্ত ৫৫ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এখন দেশে সংক্রমণের হার এবং মৃত্যু- দু’টোই বাড়ছে বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা।
করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সরকারের একটি কমিটির প্রধান অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, ঢিলেঢালা লকডাউন, ঈদকে কেন্দ্র করে লাখ লাখ মানুষের গ্রামে যাওয়া এবং শহরে ফিরে আসা, এসবের প্রভাবে সংক্রমণ এখন বেড়ে চলেছে বলে তিনি মনে করেন।
“মে মাসে দেখা যাচ্ছে, সংক্রমণের হার দ্রুত বেড়ে গেছে। এর কারণ হলো, জনগণের বিশাল একটা অংশ লকডাউন মানে নাই।
“আবার ঈদ আসলো, তখন লক্ষ লক্ষ মানুষ গ্রামে গেলো। গ্রামে কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ ছিল না। মানুষ গ্রামে গিয়ে তা ছড়ালো। আবার এই লোকগুলো শহরে ফেরত এলেন। এর ফলে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার কিন্তু বেড়ে গেছে। আমরা এখন পিক লেভেলে আছি বলে মনে হচ্ছে,” তিনি বলেন।
বাংলাদেশে সংক্রমণের হার যে উর্ধ্বমুখী, কবে তা কমতে শুরু করতে পারে- এ ব্যাপারে বিশ্লেষকরা এবং কর্তৃপক্ষ এখনই কোন ধারণা করতে পারছেন না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রথম সংক্রমণের দেশ চীনে তিন মাসের মধ্যেই সংক্রমণ কমতে শুরু করেছিল। দক্ষিণ কোরিয়াতেও নীচের দিকে নামতে শুরু করেছিল সংক্রমণের হার।
কিন্তু তিন মাস পর বাংলাদেশে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মুনশি বলেছেন, এখন সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা বলা কঠিন।
“এই তিন মাসে এখন যদি আমরা ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের চিত্র দেখি, এই তিনটি দেশেই কিন্তু সংক্রমণ ঊর্ধ্বমূখী। কিন্তু অন্যান্য দেশগুলো যেমন ইউরোপে কিন্তু এখন সংক্রমণের মাত্রা নীচের দিকে চলে এসেছে।এবং সেখানে তা তিন মাসের মধ্যেই সম্ভব হয়েছে।কিন্তু আমাদের সংক্রমণ এখন ঊর্ধ্বমূখী। এই অবস্থাটা কিন্তু অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে বিপরীত,” তিনি বলেন।
তিনি আরও বলেছেন, “এ কথা বলা যায় যে, যতদিন পর্যন্ত আমাদের একটা বড় জনগোষ্ঠী আক্রান্ত না হবে অথবা টিকা না আসবে, ততদিন পর্যন্ত এই সংক্রমণ আমাদের দেশে থাকবে।”
বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত সরকারের কারিগরি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো এবং সরকারি- বেসরকারি সব হাসপাতালে করোনাভাইরাসের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার তাদের পরামর্শ সরকার গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। কিন্তু লকডাউন কঠোর করাসহ জনস্বাস্থ্যমূলক তাদের পরামর্শকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
“সংক্রমণের হার বাড়বে , সেটা ঠেকানোর জন্য স্বাস্থ্য বিধি সম্পর্কিত আমাদের পরামর্শ মানা হয়নি। আমরা স্বাস্থ্যবিধি এখনও যদি না মানি, তাহলে সংক্রমণের হার আরও অনেক বাড়বে,” তিনি বলেন।
কর্মকর্তারা বলেছেন, এখন প্রতিদিনই আড়াই হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এটা অন্যান্য দেশের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বা এক সাথে ব্যাপক সংখ্যক বাড়ছে না বলে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু সংক্রমণ যে ঊর্ধ্বমূখী থাকছে, কবে সংক্রমণ কমা শুরু হতে পারে-সে সম্পর্কে কর্মকর্তারা কোন ধারণা করতে পারছেন না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেছেন, “করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্যই আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর থেকে সতর্কতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। এখন পৃথিবীতে ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত আসলে এটা কোন দিকে মোড় নেবে, তা বলা কঠিন।”
এদিকে সরকারের একাধিক নীতি নির্ধারক বলেছেন, তারাও মনে করেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের এই পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হতে পারে।