মঙ্গলবার, ২ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » করোনায় অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে ১০ কোটি নিম্ন আয়ের মানুষ?
করোনায় অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে ১০ কোটি নিম্ন আয়ের মানুষ?
বিবিসি২৪নিউজ,এম ডি জালাল,বিশেষ প্রতিবেদন, ঢাকা: কোভিড-১৯ মহামারির বিস্তার অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গত চার দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব রপ্তানি ধস,দক্ষিণ এশিয়ায় চার দশকে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস, সরকার না দেখলে সাড়ে ৫ কোটি মানুষের কী হবে এটাই প্রশ্ন ।
সার্বিকভাবে এই করোনায় অর্থনৈতিক এবং সাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন নিম্ন আয়ের মানুষদের । তাদের পরিবারের উপার্জনশীল সদস্যের মৃত্যু হলে নারী ও শিশুদের মধ্যে অনাহার এবং অপুষ্টির শিকার হওয়ার উচ্চ আশঙ্কা সৃষ্টি হবে৷
সমীক্ষায় আরো বলা হয়, দরিদ্র ও অতিদরিদ্রদের জন্য সরকারের দেয়া খাদ্য এবং নগদ সহায়তা সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে না৷ তাদের মতে, কোভিড-১৯ নতুন অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ডিজিটাল বিভাজন তৈরি করেছে৷
এই সমীক্ষার সাথে সরাসরি জড়িত ব্র্যাকের সিনিয়র পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ বলেন, ‘‘এই জরিপটি এপ্রিলের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে৷ আমাদের আরো কয়েকটি সমীক্ষার কাজ চলছে৷ আমরা করোনায় কৃষক এবং সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে আরো দুইটি সমীক্ষার কাজ সর্বশেষ তথ্য দিয়ে করছি৷ রোহিঙ্গা শরনার্থীদের নিয়ে সমীক্ষা করা হচেছ৷ তাতে দেখা যাচ্ছে এখনকার পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে৷’’
তিনি জানান, ‘‘এখন গ্রামের দারিদ্র্য পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে৷ শুরুতে তারা বিপর্যস্ত বেশি ছিলো৷ বোরো ধান উঠে যাওয়ায় তারা কিছুটা সামলে উঠেছে৷ কিন্তু শহরের পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে৷ কারণ এখানে ইনফর্মাল সেক্টরের সাথে জড়িত মানুষগুলো এখনো কাজে ফিরতে পারেনি৷’’
তিনি জানান, সরাসরি মানুষের কাছ থেকে স্যাম্পেলিং ছাড়াও নানা অর্থনৈতিক জরিপের তথ্য তারা এসব সমীক্ষায় ব্যবহার করছেন৷ এনিয়ে তাদের মোট দুইটি সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়েছে৷
পরিস্থিতি মোকাবেলা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়: ড. নাজনীন আহমেদ
তিনি বলেন, ‘‘ধান চালের বাইরে কৃষক শব্জি উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে৷ পোলট্রিও ধকল কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে৷ তবে সমস্যা হচ্ছে সাপ্লাই চেইনে৷ সেটার উন্নতি হলে পরিস্থিতি আরো ভালো হবে৷ আর শহরে তো দোকান পাট খুললেও মানুষ সেখানে তেমন যাচ্ছেনা৷ হোটেল রোস্তোরা খুললেও সেখানে গ্রাহক নেই৷ ফলে শহরে এইসব সেক্টর নির্ভর মানুষগুলোর অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে৷’’
বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ মনে করেন, এই সমীক্ষায় বাস্তব অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে৷ শতকরা ৭৪ ভাগ না ৭০ ভাগ সেটা নিয়ে কথা হতে পারে৷ কিন্তু তাতে বাস্তব অবস্থার হের ফের হবেনা৷
তার মতে, ‘‘এখন মানুষের আয় যাতে আর না কমে সেই দিকে প্রথম নজর দেয়া প্রয়োজন৷ বাড়ানোর পরিকল্পনা পরে করা যাবে৷ আর তা করতে হলে কোভিড সংক্রমণের আশঙ্কা যেসব সেক্টরে কম সেখানে জোর দিতে হবে৷ এখন অনলাইন বাণিজ্যের প্রসার হচ্ছে৷ সেখানে সরবরাহ ও হ্যান্ডেলিং-এ লোকজনকে কাজে লাগাতে হবে৷ পরিস্থিতি মোকাবেলা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়৷ ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বিত্তবান সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে৷ কিন্তু আমরা সেটা দেখছি না৷’’
চাকরি হারানো প্রবাসী ও তার পরিবারের সদস্যেরা অনেক বিপদের মধ্যে আছেন বলে জানান কে এ এম মোর্শেদ৷ যারা ফিরে এসেছেন তারা সামাজিক নিন্দার শিকার হয়েছেন৷ বলা হয়েছে তাদের মাধ্যমেই করোনা ছড়িয়েছে৷ তারা ত্রাণও পাচ্ছেন না৷ আবার সরকার যে ২০০ কোটি টাকা ঋণের কথা বলেছে তাও পরিকল্পিত নয় বলে জানান তিনি৷
লকডাউনের কারণে ইউরোপ ও অ্যামেরিকায় ব্যবসা বাণিজ্য, মানুষের কেনাকাটা কার্যত বন্ধ৷ এসব দেশের ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো তাই বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছে, কয়েকশো কোটি ডলারের কার্যাদেশ বাতিল করেছে৷ এর প্রভাবে এপ্রিলে রপ্তানি আয় নেমে এসেছে মাত্র ৫২ কোটি ডলারে, যা আগের বছরে একই মাসের চেয়ে ৮২.৮৫% কম৷ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার হিসেব বলছে চলতি বছর সারা বিশ্বেই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ৩২% পর্যন্ত কমতে পারে৷ করোনায় আর্থিক ক্ষতির প্রণোদনা নিয়ে রোববার প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করবেন৷