বাংলাদেশে ঈদ জামাত খোলা মাঠে নয়
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা: বাংলাদেশে খোলা মাঠ বা ঈদগাহে এবার ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে না৷ করা যাবে না কোলাকুলি৷ মানতে হবে সামাজিক দূরত্ব৷ এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করেছে সরকার৷বাংলাদেশের জাতীয় ঈদগায়ে ময়দানে এবার ঈদের প্রধান জামাত হবে না৷ তবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত হবে, সকাল ৮টা থেকে মোট পাঁচটি৷ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদগাহ বা খোলা মাঠে কোনো ধরনে জামাতের আয়োজন করা যাবে না৷ তবে মসজিদে জামাতে কোন বাধা নেই৷ ঈদের জামাতে মুসল্লিদের দাঁড়াতে হবে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মেনে৷ মাঝখানে এক কাতার বাদ দিয়ে তিন ফুট দূরত্ব রাখতে হবে৷ মসজিদে কোনো কার্পেট ও ম্যাট ব্যবহার করা যাবে না৷ প্রয়োজনে মুসল্লিরা জায়নামাজ নিয়ে যেতে পারবেন৷ মসজিদে সংরক্ষিত টুপি ও জায়নামাজ ব্যবহার করা যাবে না৷ ঈদের নামাজের আগে বা পরে কোনো ধরনের কোলাকুলি বা হাত মেলানো যাবে না৷ নামাজ শেষে দ্রুত বাসায় চলে যেতে হবে৷
নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে যেতে হবে৷ ব্যবহার করতে হবে মাস্ক৷ মসজিদে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও সাবান রাখতে হবে৷ মসজিদে প্রবেশের আগে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে৷ সম্ভব হলে সবাইকে বাসা থেকে ওজু করে আসতে বলা হয়েছে৷
ইসলামিক ফাউন্ডেশন দেশের বিশিষ্ট আলেমদের মতামত নিয়ে ঈদের নামাজের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে৷ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ জানান, ‘‘করোনার সময়ে মানুষের জীবনের কথা চিন্তা করে আমরা ঈদের নামাজের ব্যাপারে এইসব সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সারাদেশে তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে৷ আশা করি সবাই এটা মানবেন৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশের ইসলামি চিন্তাবিদদের সাথে কথা বলেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ এতে ধর্মীয় বিধি বিধানের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না৷’’
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে ঈদের জামাত ও ঈদ উদযাপনের ব্যাপারে ১৪ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে৷ ঈদের জামাতের ব্যাপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশন যে নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকেও একই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷ তবে এর বাইরে দেশবাসীকে ঈদের দিনও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে৷ বিশেষ করে বিনোদন কেন্দ্র বা খোলা জায়গায় না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷ সামাজিক দূরত্ব মেনে ঘরেই পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে বলা হয়েছে৷
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন বলেন, ‘‘বিনোদন কেন্দ্র আগে থেকেই বন্ধ আছে৷ ঈদেও বন্ধ থাকবে৷ তাই অযথা সেখানে যেন নগরবাসী ভিড় না করেন৷ আমরা ঘরেই সামাজিক দূরত্ব মেনে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বলছি৷ করোনা চলে গেলে, দেশের পরিস্থিতি ভালো হলে তখন আনন্দ করা যাবে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘খোলা জায়গা বা মাঠে ঈদের জামাত তো হবেই না৷ মসজিদগুলোতে ঈদের জামাতে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি যাতে মানা হয় তা নিশ্চিতে আমরা সতর্ক থাকবো৷ মসজিদে পুলিশ মোতায়েন করা হবে৷ আমরা প্রয়োজনে এটা মানতে বাধ্য করব৷ দরকার হলে মসজিদে একাধিক জামাত হবে৷’’
নগরীতেও পুলিশ মোতায়েন থাকবে যাতে কেউ ঈদ উদযাপনের নামে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধির লংঘন করতে না পারে, জানান পুলিশের এই উপ কমিশনার৷
ব্যক্তিগত গাড়ির পর পুলিশ এখন বলছে ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় যে কেউ ঈদে গ্রামে যেতে পারবেন বা ঢাকা আসতে পারবেন৷ ফলে প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাসে ঢাকা ছাড়ছেন অনেকেই৷ আবার কেউ কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করেও গ্রামে যাচ্ছেন৷ ঢাকা থেকে দুই ফেরিঘাট মাওয়া পাটুরিয়া পর্যন্ত ভাড়ায় ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলও শুরু হয়েছে শনিবার থকে৷ জন প্রতি ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা৷ কিন্তু গণপরিবহন পুরোপুরি বন্ধ আছে৷
তবে গত তিন-চার দিন সড়ক মহাসড়কে মানুষের যে চাপ ছিলো এখন তা নেই৷ জানা গেছে, ২০ মের পর ‘কারফিউর মত অবস্থা হবে’- এমন গুজবে যারা ঈদে ঢাকার বাইরে যেতে চান তারা যেকোনো উপায়ে ঢাকা ছেড়েছেন৷