শনিবার, ২৩ মে ২০২০
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » দরদ থাকলে’ ইউরোপ ও আমেরিকা রোহিঙ্গারা শরণার্থীদের নিতে পারেন-পররাষ্ট্রমন্ত্রী
দরদ থাকলে’ ইউরোপ ও আমেরিকা রোহিঙ্গারা শরণার্থীদের নিতে পারেন-পররাষ্ট্রমন্ত্রী
‘বিবিসি২৪নিউজ,কূটনৈতিক প্রতিবেদক,ঢাকা:সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিয়ে পূর্ব-এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যেতে চাওয়া রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছে অনেকবার। সাগরে ভাসার সময় এসব শরণার্থীর কষ্টগাঁথা ফুটে ওঠার পর তাদেরকে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে আহ্বান জানায় বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রভাবশালী দেশগুলোর অবস্থানের সমালোচনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, এত ‘দরদ থাকলে’ ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো এই শরণার্থীদের নিতে যেতে পারে।
সম্প্রতি ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “আমি উনাদের বলেছি, আমাদের দেশের মানুষের বার্ষিক আয় হল দুই হাজার ডলার আর আপনার হল ৫৬ হাজার ডলার। আর আমার এখানে ১২০০ লোক প্রতি বর্গকিলোমিটারে থাকে। আর আপনার দেশে ১৫ জন লোক প্রতি বর্গকিলোমিটারে থাকে। আপনি নিয়ে যান না কেন?
“…আপনার যদি এত দরদ থাকে, ওদেরকে বেটার লাইফ দেবেন, নিয়ে যান আপনার দেশে। অসুবিধা কি? আমরা কাউকে আটকাব না। রিলোকেট দেম। যে কোনো দেশে নিয়ে যান।”
যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে দীর্ঘদিন সেদেশে কাটিয়ে আসা মোমেন বলেন, “বড় বড় প্রতিষ্ঠান… হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রায় দুঃখ করেন…. ওনাদের দেশে নিয়ে যান না কেন? উনাদের ক্যালিফোর্নিয়া ইজ আ ল্যান্ড অফ ইমিগ্র্যান্ট। ওখানে নিয়ে যান আপনারা। আমরা, কাউকে নিতে আপত্তি নাই।”
২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট থেকে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা; এই সংখ্যা কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখ ছাড়ায়। আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
এই রোহিঙ্গাদের গত মাসের মাঝামাঝিতে টেকনাফ উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়, এ রকম ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ।
এই রোহিঙ্গাদের গত মাসের মাঝামাঝিতে টেকনাফ উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়, এ রকম ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ।
তাদের কক্সবাজারের কয়েকটি কেন্দ্রে আশ্রয় দিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা নিয়ে জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের ওপর চাপ না বাড়িয়ে উল্টো বাংলাদেশের ওপর দায়িত্ব বর্তানোর সমালোচনা করে আসছে সরকার। আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমা থাকা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে অন্য দেশগুলোর প্রতিও আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।
এই প্রসঙ্গে শুক্রবারের ভিডিও বার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “ঝামেলা হয় আন্দামান সিতে, ভারত মহাসাগরে। যখনই ঝামেলা হয় তখনই সবাই শুধু বাংলাদেশের দিকে তাকায় থাকে। ভাবখানা এমন, যেহেতু আমরা তাদেরকে আগে ১১ লাখ আশ্রয় দিয়েছি, বাকিগুলোরও দেন। রোহিঙ্গা সমস্যা দুনিয়ার যেখানে হবে, তাদেরকে আপনারা সাহায্য দেন।
“আমরা বলেছি যে, আমরা পারব না। আমাদের আর কোনো জায়গা নাই। আর অন্যদেরও রেসপনসিবিলিটি আছে। আর রোহিঙ্গা আমাদের একার সমস্যা না, এটা বিশ্বের সমস্যা।”
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলসহ অন্যান্য দেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে পারে, এমন পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “বড় বড় যারা মাতুব্বর… সারা বছর আমাদের উপদেশ দেন, আদেশ করেন তারা নিতে পারেন। তাদের জায়গার কোনো অভাব নাই।”
সর্বশেষ চলতি মাসের শুরুতে সাগরে ভাসতে থাকা ২৭৭ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে ভাসানচরে পাঠিয়েছে সরকার। ভাসানচর নিয়ে দাতা সংস্থাগুলোর অবস্থানের সমালোচনা
রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে দাতা সংস্থাগুলোর অনীহার পেছনে তাদের নিজস্ব ‘সুযোগ-সুবিধাই’ বিবেচনায় থাকছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “ওদের আপত্তি হচ্ছে একটু দূরে। ওনারা সহজে যেতে পারবেন না। কুতুপালংয়ে থাকলে পাশে ১৫ মিনিটের ড্রাইভ হল কক্সবাজার, ইটস আ রিসোর্ট সিটি। সেখানে আমাদের ফোর স্টার, ফাইভ স্টার হোটেল আছে। উনারা ৩টার সময় কাজ করে এসে ঘুমান, সারা রাত আড্ডা-টাড্ডা মারতে পারেন।
“ওখানে কিন্তু এখন হোটেল টোটেলের ব্যবস্থা নাই। লোক গেলে হোটেল-টোটেল হবে, এখনও হয়নি। আর ওখানে যেতে সমুদ্র পথে যেতে হবে। যেতে ঘণ্টাখানেক লাগবে। আমরা ওখানে এখন বোট সার্ভিস চালু করতেছি।”
ভাসানচরে জাহাজে করে খাবার নিতে খরচের প্রসঙ্গ দাতা সংস্থাগুলো তুলে থাকে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কেন যে এইড এজেন্সিগুলো খুব অসন্তুষ্ট! হ্যাঁ, যাওয়ার সমস্যা… উনারা বোট সার্ভিস চালু করেন না কেন? উনাদের তো টাকার অভাব নাই। উনারা তো করতে পারেন।”
রোহিঙ্গাদের সুবিধার জন্য ভাসানচরের নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যেখানে আছে, ওখানে আমাদের সব সময় একটা টেনশন থাকে- যখনই অতি বৃষ্টি হয় তখন ওখানে ভূমি ধস হবে, মানুষ মরবে। কিন্তু মরে গেলে তো আমাদের দোষ। ঝড় হলেও ওখানে, কক্সবাজারেও ঝড় হতে পারে। তখনও আমাদের দোষ হবে।”
ভাসানচরে নিয়ে গেলে রোহিঙ্গারা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবে মন্তব্য করে মোমেন বলেন, “আমরা যদি ভাসানচরে নিয়ে যেতে পারি… এখানে তিন বেলা তারা খায়, আর কোনো কাজ করার উপায় নেই।
“ওখানে গেলে তারা রাখাইনে যে কাজটি করত, মাছ ধরত, কৃষি কাজ করত- এখানে তারা সে রকম কিছু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে পারবে। সেখানে তারা মাছ ধরতে পারবে, তারা গরু, ভেড়া, ছাগল, হাস-মুরগি পালন করতে পারবে। অনেক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ আছে। খোলামেলা জায়গা।”