বুধবার, ১৩ মে ২০২০
প্রথম পাতা » জেলার খবর | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশের হাওরাঞ্চেল কৃষকদের ফসল ঘরে তুলতে পারছে কি?
বাংলাদেশের হাওরাঞ্চেল কৃষকদের ফসল ঘরে তুলতে পারছে কি?
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক:বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানির ঘটনাও ঘটে প্রায়শই। অকাল বন্যার আগেই যা সহজেই ঘরে তুলতে পারবে তারা। আগাম জাত হিসেবে কৃষক এতদিন ব্রি-২৮ ধান চাষ করে এসেছেন। কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চেল প্রতি বছরই বোরো ধানের ব্যাপক আবাদ হয়। তাই কৃষকরা এমন ধানের আবাদ করতে চান যা স্বল্প সময়ের মধ্যে কেটে ঘরে তোলা যায়। ব্রি- ৮৪ ধান তাদের সেই আশা পূরণ করবে। মাত্র ১৩৭ দিনেই এই ধান কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষক। প্রোটিন, জিংক ও আয়রন সমৃদ্ধ নতুন জাতের এই ধান এরইমধ্যে সাড়া ফেলেছে কৃষকের মাঝে। আগ্রহ দেখে কৃষি বিভাগও পুরো জেলায় ধানের নতুন জাতটি ছড়িয়ে দিতে চাষাবাদ বাড়ানো, বীজ সংগ্রহসহ নিয়েছে নানা উদ্যোগ।
হাওরের কৃষকরা এমন একটি জুতসই জাতের ধানের সন্ধানে ছিল বহুদিন। তবে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এ জাতের চেয়ে আরও আগাম জাতের ব্রি-৮৪ ধান তুলে দিয়েছে কৃষকের হাতে। যার ফলন বেশি এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ। স্বল্পমেয়াদী হওয়ায় হাওরের মতো নিচু জায়গায় ধানটি খুবই উপযোগী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ব্রি-৮৪ ধান কেটে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকপাকুন্দিয়া উপজেলার আদিত্যপাশা গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, ‘কৃষি বিভাগের পরামর্শে জমিতে এই ধান রোপণ করি। স্বল্পমেয়াদী, রোগ-বালাই কম থাকায় অল্প খরচ হয়েছে ব্রি-৮৪ ধান চাষ করতে। আগাম অন্য জাতের ধানের চেয়ে এর ফলনও বেশি। এবারই প্রথম চাষ করছি। আর ব্রি-২৮ এর চেয়ে ৭/৮ মণ ধান বেশি পেলাম। তাই হাওরাঞ্চলসহ স্থানীয় কৃষকদের মাঝে এ ধানের কদর বেড়েছে অনেক।’
একই এলাকার রহমত আলী যেন নতুন জীবনের ছোঁয়া পেলেন এই ধান চাষ করে। তিনি বলেন, ‘নতুন জাতের ব্রি-৮৪ ধান চাষ করে বেশ আনন্দ পেলাম। খুব দ্রুত এই ধান পেকেছে। যার ফলে বৃষ্টি বা অকাল বন্যায় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। তাছাড়া এই ধান খুবই পুষ্টিকর। আর ফলনও হয়েছে, আশার চেয়ে বেশি। তাই ফলনের অর্ধেক আমরা নিজেদের খাবারের জন্য রেখে বাকি অর্ধেক বিক্রি করবো।’
পাকুন্দিয়া উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হামিমুল হক সোহাগ জানান, কৃষি বিভাগের একটি প্রকল্পের অধীনে জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার আদিত্যপাশা গ্রামে ২০ জন কৃষক ১৫ বিঘা জমিতে প্রথমবারের মতো ব্রি-৮৪ ধান চাষ করেছেন। মাত্র ১৩৭ দিনে পেকে যাওয়া ধান, এখন ঘরে তুলেছেন তারা। ফলনও হয়েছে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। উৎপাদিত এই ধানের অর্ধেক রাখা হবে বীজের জন্য। যে বীজ আগামী বোরো মৌসুমে চাহিদা মেটাবে কৃষকের।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল হাসান আলামিন জানান, এ জাতে প্রতি হেক্টর জমিতে ছয় থেকে সাড়ে ছয় মেট্রিক টন ধান পাওয়া যায়। যা অন্য আগাম জাতের চেয়ে বেশি। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণও অনেক কম। কম সময়ে পেকে যাওয়ায় আগেভাগে কাটা যায় এই ধান। নতুন জাতটি পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি নিরাপদ কৃষিতেও ভূমিকা রাখবে তাদের বিশ্বাস।