ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শিথিল হচ্ছে লকডাউন
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউরোপের দেশগুলো টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা লকডাউন শিথিল হতে শুরু করেছে। দোকান, রেস্তরাঁ, স্কুল খুলছে। লোকজন বাসে ট্রেনে চেপে কাজে যেতে শুরু করেছে। ইউরোপের দেশগুলো কীভাবে একে একে লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসছে নীচে তার একটি ব্রিটেন টানা প্রায় সাত সপ্তাহ ধরে চলা লকডাউন শিথিলের সূচনা করেছে ব্রিটেন আজ (সোমবার ) থেকে।
অবশ্য স্বায়ত্তশাসিত স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের প্রাদেশিক সরকারগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তগুলো মেনে নেয়নি।
ইংল্যান্ডে আজ (সোমবার) থেকে মানুষজন নিজ পরিবারের বাইরে অন্যের সাথে দেখা করতে পারবেন, তবে বাড়িতে গিয়ে নয়। সেই সাক্ষাৎ হতে হবে বাড়ির বাইরে এবং পরস্পরের মধ্যে দুই মিটার (৬ফুট) দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
শরীরচর্চার জন্য এখন থেকে দিনে একবারের বদলে যতবার খুশি বাইরে যাওয়া যাবে, এবং গাড়ি চালিয়ে যতদূর খুশি যাওয়া যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গতরাতে তার লকডাউন শিথিলের রোডম্যাপ ঘোষণার সময় জনগণকে এখন থেকে “ঘরে মধ্যে থাকার“ বদলে “চোখ-কান খোলা রাখার“ পরামর্শ দিয়েছেন।
বুধবার থেকে কাজে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যদিও একইসাথে গণ-পরিবহণ এড়িয়ে চলার কথা বলা হয়েছে। সেইসাথে বলা হয়েছে, যারা পারবেন তারা যেন এখনও ঘরে বসেই অফিসের কাজ করেন।
প্রধানমন্ত্রী জনসন ইঙ্গিত দিয়েছেন সংক্রমণের গতিপ্রকৃতির বিবেচনায় পহেলা জুন থেকে প্রাইমারি স্কুল এবং কিছু দোকানপাট খুলে দেওয়া হতে পারে। পহেলা জুলাই থেকে রেস্তরাঁ, পানশালা, চুল কাটার দোকান খোলার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
তবে সরকার বলছে, সংক্রমণ বাড়ার কোনো লক্ষণ দেখা গেলে সাথে সাথে নতুন করে বিধিনিষেধ চাপানো হবে। সামাজিক দূরত্ব ভঙ্গ করার শাস্তি বাড়ানো হয়েছে। জরিমানার পরিমাণ দ্বিগুণ করে ১০০ পাউন্ড করা হয়েছে দ্বিতীয়বার শর্ত ভাঙ্গলে জরিমানার পরিমাণ ৩,২০০ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে।
বায়ার্ন মিউনিখ সহ জার্মান ফুটবল লীগ বুনদেসলীগার বেশ কয়েকটি ক্লাব তাদের ট্রেনিং শুরু করেছে।১৬ই মে থেকে বুনদেসলীগা শুরু হবে, তবে লীগের বাকি ম্যাচগুলোতে মাঠে কোনো দর্শক থাকবে না।
সবধরনের দোকানপাট খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে তবে স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে তাদের।
ছোটো দোকান, বইয়ের দোকান, গাড়ির শো-রুম অবশ্য এপ্রিলের ২০ তারিখ থেকেই খুলে দেওয়া হয়।
লকডাউন শিথিলের মাত্রা ঠিক করার সিদ্ধান্ত দেশের ১৬টি প্রাদেশিক সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।তবে চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল সাবধান করেছেন, সংক্রমণ বাড়ার কোনো ইঙ্গিত দেখলেই নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করতে তিনি দ্বিধা করবেন না।
বাচ্চাদের স্কুল আংশিকভাবে খুলেছে, এবং আস্তে আস্তে মাধ্যমিক স্কুলগুলো খোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে।তবে অনেক মানুষ জড় হয় এমন যে কোনো অনুষ্ঠান অগাস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকবে।
ফ্রান্সে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য অনুমতিপত্র নেওয়ার যে বিধি চালু হয়েছিল, আজ (সোমবার) থেকে তা রদ করা হয়েছে।
নিজের বাড়ি থেকে ১০০কিমি পর্যন্ত যাওয়ার ওপর কোনো বিধিনিষেধ থাকছে না। তবে ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরে যাওয়ার জন্য এখনও অনুমতি লাগবে, এবং রাজধানী প্যারিসে ব্যস্ত সময়ে ভ্রমণ করতে হলে নিয়োগকর্তার অনুমতিপত্র দেখাতে হবে।
আজ থেকে প্রাইমারি এবং নার্সারি স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক স্কুল (১১ থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত) খুলবে ১৮ই মে থেকে। তবে শ্রেণীকক্ষে ১৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকতে পারবে না।
বার-রেস্তরাঁ ছাড়া সবধরনের দোকান এবং জিম খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বেলজিয়াম: বন্ধুদের বাড়িতে ডাকা যাবে
বেলজিয়ামে এখন কোনো পরিবার চাইলে সর্বোচ্চ চারজন বন্ধু বা স্বজনকে দাওয়াত করতে পারবে। তবে ঐ পরিবারের সদস্যরা এবং ঐ চার অতিথি পরে অন্য কারো বাড়িতে যেতে পারবে না।
বেলজিয়ামে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর হার ইউরোপে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে কেয়ার হোমগুলোতে অনেক মানুষ মারা গেছে সেদেশে। তারপরও বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “ধীরে ধরে সামাজিক জীবন শুরু করতে হবে।“
জনপরিবহনে ফেসমাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আজ থেকে সব দোকানপাট খুলছে।১৮ই মে থেকে স্কুল খুলবে, তবে একটি শ্রেণীকক্ষে ১০ জনের বেশি থাকবে না।ক্যাফে, রেস্তরাঁ খুলবে জুনের ৮তারিখ থেকে।
নেদারল্যান্ডসে আজ (সোমবার) থেকে পাঁচ দফায় লকডাউন শিথিল শুরু হয়েছে।
লাইব্রেরি, চুল কাটার সেলুন, বিউটি পার্লার, ম্যাসাজ পার্লারও আজ থেকে খুলছে।প্রাইমারি স্কুলও খুলেছে আংশিকভাবে। মাধ্যমিক স্কুল খুলবে পহেলা জুন থেকে।
বার, রেস্তরাঁ খুলবে পহেলা জুন থেকে, তবে ভেতর অতিথিদের বসানো যাবেনা। বসাতে হবে বাইরে খোলা জায়গায়। জনপরিবহন স্বাভাবিক হচ্ছে, তবে যাত্রীদের ফেস মাস্ক পরতে হবে।
যেসব অনুষ্ঠানে বড় জমায়েত হয়, সেগুলো সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
অস্ট্রিয়া: পর্যটনের স্থাপনাগুলো খুলছে
ইউরোপে প্রথম যে কটি দেশ লকডাউন আরোপ করে অস্ট্রিয়া তাদের অন্যতম। কিন্তু লকডাউন শিথিল শুরুও করেছে তারা প্রথমে।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব এমন সব খেলাধুলো (যেমন টেনিস, গল্ফ) এখন থেকে করা যাবে। এপ্রিলের মাঝামাঝি অস্ট্রিয়ায় ছোটো দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়। দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন তাতে করে সংক্রমণ বাড়েনি। ফলে মে মাসের গোড়া থেকেই বড় দোকান, চুল কাটার সেলুন খুলে দেওয়া হয়।
এমনকী পহেলা মে থেকে সর্বোচ্চ দশজনের জমায়েতের অনুমোদন দেওয় হয়।
ক্যাফে, রেস্তরাঁ খুলবে ১৫ই মে থেকে। হোটেল, সুইমিং পুল খুলবে এ মাসের শেষে।
ইউরোপে সবচেয়ে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল ইটালিতে। এমনকী বাড়ী থেকে ২০০মিটার দূরে যাওয়াও নিষিদ্ধ করা হয়। তবে মে মাসের শুরু থেকে বিধিনিষেধ শিথিল হওয়া শুরু হয়।
ইটালিয়ানরা এখন এমনকী আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতেও যেতে পারছেন, তবে এক প্রদেশে থেকে অন্য প্রদেশে যাওয়া এখনও নিষিদ্ধ। পহেলা জুন থেকে রেস্তরাঁ বার খুলতে পারবে।
চুল কাটার দোকান এবং বিউটি পার্লারও খুলবে সেদিন থেকে।দোকানপাট কিছু ইতিমধ্যেই খুলেছে, তবে ১৮ই মে থেকে আরো দোকান খুলবে। সেদিন থেকে লাইব্রেরি এবং যাদুঘরগুলোও খুলে দেওয়া হবে।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় এখন থেকে ১৫ জন পর্যন্ত অংশ নিতে পারবে। ক্যাথলিক গির্জাগুলোতে প্রার্থনা শুরু হবে ১৮ই মে থেকে।
স্পেন: খুলেছে বার-রেস্তরাঁ স্পেনের চার কোটি ৭০ লাখ মানুষের অর্ধেকেরও বেশি লোক এখন কঠোর লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
স্পেনে বিধিনিষেধ এতটাই কড়া ছিল যে ১৪ বছরের কম বয়সীদের ছয় সপ্তাহ বাড়ির বাইরেই বেরোতে দেওয়া হয়নি। তবে মে মাসের শুরু থেকে কড়াকড়ি শিথিল হতে শুরু করে।
আজ (সোমবার) থেকে স্পেনে বার-রেস্তরাঁ খুলছে, তবে অতিথিদের বসাতে হবে বাইরের খোলা জায়গায়। গির্জা, মসজিদ খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তবে অনেক মানুষ একসাথে যেতে পারবে না।
২৬মে মে থেকে পর্যায়ক্রমে স্কুল খুলতে শুরু করবে। তবে বিধিনিষেধ শিথিল হচ্ছে দেশের কিছু কিছু এলাকায়।মাদ্রিদ, বার্সিলোনা ভ্যালেন্সিয়ার মত বড় বড় বেশ কিছু শহর এখনও কঠোর লকডাউনের আওতায় থাকবে।