সোমবার, ১১ মে ২০২০
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড | স্বাস্থ্যকথা » কোভিড-১৯:মহামারি চরম বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, ৯০ শতাংশ জেলা হাসপাতালে নেই” অক্সিজেন সরঞ্জাম?
কোভিড-১৯:মহামারি চরম বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, ৯০ শতাংশ জেলা হাসপাতালে নেই” অক্সিজেন সরঞ্জাম?
বিবিসি২৪নিউজ,এম ডি জালাল : করোনাভাইরাস মহামারিতে চরম বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশে অন্তত ৮৯ শতাংশ হাসপাতালে নেই ‘অক্সিজেন কনসেনট্রেটর’। ৯৫ ভাগ হাসপাতালে নেই ‘বিপাপ’ ও ‘সিপাপ’ (চাপ দিয়ে ফুসফুসে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহের যন্ত্র)। ৯০ শতাংশ জেলা হাসপাতালে নেই এবিজিএ (আর্টারিয়াল ব্লাড গ্যাস এনালাইজার) মেশিন। এমনকি অক্সিজেন মাস্কের ঘাটতি রয়েছে ৩০ শতাংশ হাসপাতালে। করোনা চিকিৎসায় নির্ধারিত দেশের বিভিন্ন জেলার হাসপাতালগুলোয় রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহের সরঞ্জামের সংকট প্রকট আকার ধারণ করার সংবাদ উদ্বেগজনক। এর ফলে রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি জেলা পর্যায়ে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোয় রোগীদের অক্সিজেন সুবিধা নিশ্চিতে কোনো ঘাটতি আছে কি না, এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চালায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুসন্ধানে উঠে আসা এমন ভয়াবহ চিত্র হতাশাজনক, তা বলাই বাহুল্য। কেননা, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় অক্সিজেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে উপনীত হন। সাধারণত এ সমস্যার প্রাথমিক সমাধান হল, এ সময় চাহিদা অনুযায়ী রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ করা। নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে উঠেন। অবশ্য এরকম ক্ষেত্রে কোনো কোনো রোগীর বেলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন পড়তে পারে। তবে ঢালাওভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে অক্সিজেন সরবরাহকারী সরঞ্জামের কোনো বিকল্প নেই। এ অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত দেশের প্রতিটি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের সরঞ্জামসহ অন্যান্য জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ৭৭০ এবং তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২১৪ জন। আশঙ্কার বিষয় হল, অক্সিজেন সরবরাহ সহায়ক সরঞ্জামের অপর্যাপ্ততার পাশাপাশি কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ভেন্টিলেটর সুবিধারও অভাব রয়েছে।
বর্তমানে দেশে ১ হাজার ৫০টি আইসোলেশন বেড থাকলেও আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৫০টির মতো। তবে এর সবক’টিতে নেই ভেন্টিলেটর সুবিধা। চিকিৎসকদের মতে, করোনা রোগীদের মধ্যে প্রায় ১৮ শতাংশ অন্যান্য রোগব্যাধিতে আক্রান্ত থাকায় তাদের ক্ষেত্রে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতঃপূর্বে সন্দেহভাজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা ও ফলাফল প্রদানে বিভিন্ন অসঙ্গতির অভিযোগ ছাড়াও রোগীদের সুচিকিৎসার ক্ষেত্রে অবহেলা ও উদাসীনতা প্রদর্শন এবং বিশৃঙ্খল অবস্থা ও অব্যবস্থাপনার কথা শোনা গেছে। পাশাপাশি রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) ও খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাজকর্মেও নানা অসঙ্গতি লক্ষ করা যাচ্ছে, যা অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ২৬ মার্চ থেকে কয়েক দফায় সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে, যা অব্যাহত থাকবে এ মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত। তবে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয় হল, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য সারা দেশের নির্ধারিত হাসপাতালগুলোয় অক্সিজেন সরবরাহের সরঞ্জামসহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রীর অপ্রতুলতা। সরকার দ্রুত এ সংকট সমাধানের উপায় অনুসন্ধান করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।