বুধবার, ৬ মে ২০২০
প্রথম পাতা » শিক্ষাঙ্গন | শিরোনাম | সাবলিড » করোনা : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস নিতে শিক্ষার্থীদের কাছে ইন্টারনেট সুযোগটি দ্রুত পৌঁছে দিতে হবে- “প্রফেসর ড. এম. মেসবাহউদ্দিন সরকার”
করোনা : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস নিতে শিক্ষার্থীদের কাছে ইন্টারনেট সুযোগটি দ্রুত পৌঁছে দিতে হবে- “প্রফেসর ড. এম. মেসবাহউদ্দিন সরকার”
বিবিসি২৪নিউজ,অনলাইন ডেস্ক: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে তছনছ হয়ে গেছে পুরো দুনিয়া । গৃহবন্দি হয়ে কর্মহারা হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো l বাংলাদেশও এর মরণ ছোবলে আক্রান্ত l অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই বন্ধ আছে ৫মে পর্যন্ত পর্যন্ত l শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঈদুল ফিতর পর্যন্ত বন্ধ আছে, তবে বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই বন্ধ আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে l প্রকৃতপক্ষে মানুষের জীবন রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ l আগে জীবন রক্ষা করা - তারপরে অন্য কিছু l সেদিকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি এবং এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার l তাহলে দেখা যাচ্ছে যে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর ৬-৭ মাস অর্থাৎ বছরের প্রায় অর্ধেক সময়ই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সম্ভাবনা আছে l এরইমধ্যে এসএসসি রেজাল্ট স্থগিত হয়ে আছে l এইচএসসি পরীক্ষার দিনক্ষণ ঠিক করা যাচ্ছে না l যদিও মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা প্রতিনিয়তই মিটিং করছেন এবং একটি সুন্দর সমাধানের পথ খুঁজে বেড়াচ্ছেন l এমন পরিস্থিতিতে লেখাপড়া কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে “আমার ঘরে - আমার স্কুল” কার্যক্রম চলছে। স্কুল পড়ুয়া কোমলমতী শিক্ষার্থীদের জন্য ইহা একটি চমৎকার সুযোগ এবং ব্যবস্থাপনা l লকডাউনের এই দুর্দিনে সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ সকলের কাছে প্রশংসিত হয়েছে l
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ আছে এই মহামারীর শুরু থেকেই l তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন বিভাগ নিজ দায়িত্বে বিচ্ছিন্নভাবে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন l সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ((ইউজিসি)) এ ব্যাপারে একটি জরিপ করেছে এবং জরিপে দেখা যাচ্ছে বর্তমানে ৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্যে ৫৬টি বেসরকারি ও বাকি সাতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের হার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে এবং যাবতীয় অফিশিয়াল কার্যক্রম অনলাইনেই করে যাচ্ছে l এরই মধ্যে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারেও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে (সূত্র ইউজিসি ৩০ এপ্রিল) l দীর্ঘ এই ছুটিতে লেখাপড়া কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য সম্মানিত শিক্ষক মন্ডলীর এই উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
এক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণ খুবই কম অর্থাৎ মাত্র সাতটি l তাহলে প্রশ্ন উঠে - পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সক্ষমতা কি নেই? আসলে ব্যাপারটা তা নয় l ব্যাপার হলো, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশই গ্রামে থেকে আসা এবং সেখানে নেই কোন ইন্টারনেট সংযোগ l বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা এখন গ্রামে যার যার বাড়িতে আছে। বর্তমান এই পরিস্থিতিতে গ্রামেও কোন কাজ নেই। ফলে শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের কোন আয় রোজগার নেই। একই অবস্থা শহরে থাকা গরীব শিক্ষার্থীদেরও। আবার অনেক শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউশনি করে কিংবা অন্য কোনো ছোটখাটো কাজ করে তাদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে থাকে । কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তারা এখন সম্পূর্ণ কর্মহীন। অনেকেরই নেই খাওয়া-নাওয়ার সম্বলটুকুও।
এদিকে দীর্ঘদিন লকডাউন থাকায় সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সকল ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে l একমাত্র ইন্টারনেট ব্যবসাই ব্যতিক্রম যেখানে কোন ধস নামেনি। বলা যায় ইন্টারনেটের কারণে মানুষ ঘরে বসেও কিছুটা ব্যস্ত আছে । কাজেই ইন্টারনেটের এই সুযোগটি শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে পারলে তারাও ব্যস্ত থাকবে, ব্যস্ত থাকবে তাদের লেখাপড়া নিয়ে, ফ্রিল্যান্সিং কিংবা আউটসোর্সিং করে আয় করারও সুযোগ পাবে l অর্থাৎ ইন্টারনেট অবকাঠামোর দিকে নজর দেওয়া খুবই জরুরী। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব?
সমাধানের জন্য প্রথমেই আলোচনা করতে হবে দেশের ইন্টারনেট সংস্থাগুলোর সাথে l শিক্ষা মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয় এবং ইন্টারনেট কোম্পানি অর্থাৎ গ্রামীনফোন, বাংলালিঙ্ক, রবি সহ অন্যান্য এ ধরনের সংস্থাগুলির সাথে আলোচনা করলে একটি সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে l লকডাউনের এই সংকটময় মুহূর্তে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা সবকিছু বন্ধ থাকা সত্ত্বেও সকলেই যার যার অবস্থান থেকে সরকারকে তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য l কিন্তু ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর ব্যবসা সম্পূর্ণ সচল থাকা সত্ত্বেও সরকারকে কিংবা গরীব জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করার তেমন কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না l
গ্রামীণফোন এ দেশের সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট প্রভাইডার এবং এরা একাই পারে এই সমস্যার সমাধান করতে l রাষ্ট্র গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার কোটি টাকা পায় l আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে মামলা-মোকদ্দমা করে মাত্র এক হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে l বিশাল অংকের টাকা এখনও বাকি আছে l সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এই ইস্যুতে গ্রামীণফোনের সাথে আলোচনা করতে পারে এবং সমঝোতায় আসতে পারে l অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়ও কম নয় l তারাও পারে তাদের অবস্থান থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে l পৌঁছে দিতে পারে গ্রামেগঞ্জে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে কিংবা সহজ শর্তে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ টুকু l এরপর দরকার একটি স্মার্ট মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ কিংবা অন্য কোন স্মার্ট ডিভাইস l এ ব্যাপারে বিনা সুদে ব্যাংক থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য লোনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে l মেধা ও দারিদ্রতার ভিত্তিতেও একটি করে ল্যাপটপ শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে দেয়া যেতে পারে l বিশ্বের অনেক দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা আছে l আমাদের দেশেও অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদেরকে একটি করে ল্যাপটপ দেওয়ার নজির আছে l
পরিশেষে, আশা করছি করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হবে ইনশাল্লাহ l অন্যথায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকে, তাহলে সেশনজট অনেক দীর্ঘায়িত হবে যা কাটিয়ে উঠা অনেকটা অসম্ভব হবে l অর্থাৎ শিক্ষাব্যবস্থায় মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে l এভাবে দীর্ঘকাল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীদের জন্য তা যেমন ক্ষতির, তেমনি শিক্ষার্থীরা হবে বিপথগামী, সৃষ্টি হবে সমাজে বিশৃংখলা। এমতাবস্থায় উপরে বর্ণিত ব্যবস্থা মতে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে শিক্ষার্থীদের হাতে যদি থাকে ইন্টারনেট এক্সেস এবং ল্যাপটপ, আর মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক BDRen–এর Zoom C।assroom ব্যবহারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং ব্যবহার বিধি ইতিমধ্যেই প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া আছে l তাহলে আর বাধা কোথায় ? সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে খুব সহজেই এবং উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করা l আশু সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষাবিদ, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বাংলাদেশ ব্যাংক, অন্যান্য ব্যাংক সহ সংশ্লিষ্ট সকলের উদ্যোগ এবং সহযোগিতা একান্ত কাম্য l
লেখক : পরিচালক (আইআইটি) এবং তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় l