শনিবার, ৭ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের প্রস্তুতি কতটুকু?
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের প্রস্তুতি কতটুকু?
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিনিধি:বাংলাদেশের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী আতংকের মুখে বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১০ হাজার শয্যার ব্যবস্থা করাসহ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন এবং চীনের চিকিৎসাপদ্ধতির সাথে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট মিলিয়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে।
তবে এ ভাইরাস আক্রান্ত হলে আধুনিক এবং বড় হাসপাতাল ছাড়া বাংলাদেশের জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
সরকার বলছে, বাংলাদেশে এখনও করোনাভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হয়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এখনও কেউ আক্রান্ত না হলেও প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা রাখার চেষ্টা তারা করছেন। সারাদেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১০ হাজার শয্যার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে তারা উল্লেখ করছেন।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলছিলেন, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে শয্যার ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং তাদের এই ব্যবস্থা যথাযথ বলে তারা মনে করছেন।
“সারাদেশে সব হাসপাতালে পাঁচটি করে বেড নিয়ে আইসোলেশন ইউনিট করে রাখা হচ্ছে। এছাড়া আরও কিছু হাসপাতাল ডেজিগনেট করে দেয়া হচ্ছে। যে সব হাসপাতাল ভবন নতুন হয়েছে বা পড়ে আছে, যেমন ঢাকায় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আমরা অন্য রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিয়ে করোনার জন্য ডেজিগনেট করেছি। এরকম ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।”
তিনি এটাও বলেছেন যে, অন্য রোগীদের চিকিৎসায় যাতে কোনো সমস্য না হয়, সেই বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।
দেশের কয়েকটি জেলায় সাভিল সার্জনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী তারা সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা ভাইরাসের রোগীর জন্য পাঁচটি করে শয্যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন।
পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগ সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মন্ডল বলছিলেন, যে কোন পরিস্থিতি যাতে সামাল দেয়া যায়, সেই ব্যবস্থা রাখতে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ রয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা তিনি উল্লেখ করেন।
“সর্বশেষ আমাদের কাছে তিনটি হাসপাতালের নাম চাওয়া হয়েছে ১০০ রোগীর চিকিৎসা দেয়ার জন্য। হঠাৎ করে যদি বেশি রোগী আসে, সেজন্য এটা বলা হয়েছে এবং আমরা তিনটি সরকারি হাসপাতালের তালিকা পাঠিয়েছি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছে।”
তিনি তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে বরছিলেন, “গত মঙ্গলবার করোনা ভাইরাস সন্দেহে একজন সিলেটে একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে। এখন এর সাধারণ চিকিৎসা চলছে। তার নমুনা আমরা ঢাকায় পাঠিয়েছি। একদিন দু’দিন পরে হয়তো রিপোর্ট পাব। করোনা শনাক্ত হলে তখন আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দেবো।”চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলছিলেন, শুধু হাসপাতালে শয্যা রাখলেই হবে না। জেলা উপজেলায় এর চিকিৎসা কতটা আছে, তা নিয়ে তার সন্দেহ আছে।
“চিকিৎসাটা বড় বড় হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও করা সম্ভব না। করোনাভাইরাসে যদি কেউ আক্রান্ত হয়েই যায়, তখন মুল প্রভাবটা পড়বে ফুসফুসে। আর ফুসফুসে হলেই শ্বাসকষ্ট হবে, অক্সিজেন নিতে পারবে না। সেখানে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা নিরুপণের যন্ত্র থাকতে হবে।”
“ভেন্টিলেটার এবং মনিটর থাকতে হবে। সার্বক্ষণিক নার্স ডাক্তার থাকতে হবে। এমন ব্যবস্থা আমাদের কয়টা হাসপাতালে আছে।”
“দেখেন আমার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে আইসিইউতে মাত্র ১০টা বেড আছে। আমি ১০জনের বেশি রোগী নিতেই পারবো না। অন্য রোগীর বিষয়ও আছে। এই জন্য আমার মনে হয়, প্রতিরোধের বিষয় আরও জোরদার করা দরকার।”
জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেছেন, প্রতিরোধের প্রক্রিয়ায় করোনা শনাক্ত করার ব্যবস্থাও একেবারে সীমিত। এ বিষয়টি আগে চিন্তা করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
তবে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, চিকিৎসার নীতিমালা তৈরি করা এবং সারাদেশে চিকিৎসকদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেই নীতিমালা সম্পর্কে জানানোসহ যথায়থ ব্যবস্থা তারা নিচ্ছেন।