বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় » বিদ্যুৎ ও পানির মূল্যবৃদ্ধি” ভোক্তার মতকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত!
বিদ্যুৎ ও পানির মূল্যবৃদ্ধি” ভোক্তার মতকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত!
বিবিসি২৪নিউজ,সম্পাদকীয়:এম ডি জালাল: পানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপকরণ। এ দুটির দাম বাড়ানো হলে শিল্প খাতে যেমন বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়, তেমনি সাধারণ ভোক্তাদের ওপর চাপ পড়ে অনেক বেশি। কারণ, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আগে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গণশুনানি করে থাকে সাধারণত। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
গণশুনানিতে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর পক্ষেই মত এসেছে বেশি। কিন্তু তারপরও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে খুচরা গ্রাহক তথা আবাসিক পর্যায়ে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র শিল্প গ্রাহক পর্যায়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং মাঝারি শিল্প পর্যায়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রশ্ন হল, যদি দাম বাড়ানোর আগাম সিদ্ধান্তই থাকে তবে গণশুনানি কেন, আর যদি তেমনটি না হয় তবে কেন শুনানির বেশিরভাগ মতকে বাস্তবায়ন করা হয় না।
আমরা মনে করি, লোকদেখানো গণশুনানি না করে ভোক্তার মতকে প্রাধান্য দিয়ে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি ওয়াসার পানির দামও ২৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। পানির মানোন্নয়ন না করে এভাবে বড় ধরনের মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না।
শিল্প খাতের মোট উৎপাদন খরচের মধ্যে ১৫ শতাংশই প্রভাবিত করে বিদ্যুৎ। এর দামের পাশাপাশি পানির দামও ২৭ শতাংশ বাড়লে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে, যার প্রভাব পড়বে ভোক্তা পর্যায়ে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ার মধ্য দিয়ে।
এছাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র কারখানা থেকে শহরের মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প- সবই এখন বিদ্যুৎনির্ভর। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ানোর মধ্য দিয়ে রফতানিতে বড় ধরনের ক্ষতি হবে, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হবে।
বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য সেবা খাত সংশ্লিষ্টরা এসব বিষয় আদৌ বিবেচনায় নেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়। বস্তুত, সময়ে সময়ে হুট করে দাম না বাড়িয়ে সিস্টেম লস কমিয়ে আনা, বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটি ও দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ করে বিদ্যুৎ ও পানির ঘাটতি-লস কাভারেজ করার দিকেই বেশি মনোযোগী হতে হবে নীতিনির্ধারকদের।
সেবা খাতের বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভোক্তাদের পরিস্থিতি বিবেচনায় নেয়া দরকার। পাশাপাশি করোনাভাইরাস ও বিভিন্ন কারণে বর্তমানে বাণিজ্যে লোকসানের বিষয়টিও মাথায় রাখার কথা; কিন্তু এসবকিছুই না করে পানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণ আমাদের বোধগম্য নয়।
দেশের সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কথা বলে তাদের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এছাড়াও পারিপার্শ্বিক অবস্থা, শিল্প খাতের নাজুক পরিস্থিতি, ওয়াসার পানির মান ইত্যাদি বিবেচনায় পানি ও বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোই যৌক্তিক।